সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কবি অশোক মুখোপাধ্যায়

কবি অশোক মুখোপাধ্যায়। সাংবাদিক অশোক মুখোপাধ্যায়। রিষড়ার দাপুটে বাম আমলের সেই বিখ্যাত চেয়ারম্যান দিলীপ সরকার এর রিষড়ার মেলার অনুষ্ঠানে হাজির সেই আমাদের বিখ্যাত অশোক। সেই ওর কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ। ওর গালে একমুখ দাড়ি। একদম সাধারন পোশাক পরিহিত একটা ঢোলা পাঞ্জাবী আর পাজামা পরা। পকেটে একটা পেন গোঁজা। কাঁধে সাইড ব্যাগে কাগজ রাখা আছে। সেই রিষড়া সমাচার। দেখা হলেই ঘাড় নেড়ে জিজ্ঞাসা করা ভালো তো। সেই কোনো সময় মোড়পুকুর থেকে সাইকেল চালিয়ে স্টেশনে আসছে সে। আবার কোনসময় সেবাসদন হাসপতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে খবর সংগ্রহের কাজে। কোনসময় সাংবাদিক সৌগত রায়ের সাথে গল্প করছে হাসি মুখে পুরসভার গেটে।


আমরা সব তখন বড়ো চ্যানেলের বিখ্যাত সাংবাদিক আর অশোক তখন ওর সাইড ব্যাগে রিষড়া সমাচার এর কাগজ নিয়ে ঘুরছে এদিক ওদিক হাসি মুখে। সেই রিষড়া সমাচার এর কাগজ সামলে দিত সেই আমার নবগ্রাম বিদ্যাপীঠ এর স্কুলের বন্ধু পড়ে ডব্লু বি সি এস পাশ করা বর্তমানে বড়ো অফিসার শুভাশীষ গুহ। অশোক খুব যে বাম আমলে চেয়ারম্যান এর ঘনিষ্ঠ বলে প্রচুর ভালো আর্থিক অবস্থা হয়ে গেছে ওর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেটা নয় কিন্তু একদমই। এই মা মাটি আর মানুষের আমলের মতো অবস্থা নয় আর কি। এখন তো সবাই একটুতেই আঙুল ফুলে কলাগাছ। ছোটো, বড়ো,মেজো, সেজো যে নেতাই হোক। সবাই এখন দাদা আর দিদির আশীর্বাদে পতি দের দলে নাম লিখিয়েছে। মানে কোটি বা লাখ পতিদের দলে।

এই ২০১১ সালের পর থেকেই কেমন যেনো হঠাৎ করেই বদলে গেলো সবকিছুই। বদলে গেলো মিডিয়ার এই চারপাশ। এই অশোক তো দিব্যি বদলে যেতে পারতো সেই লাল পার্টির আমলে, মনে হয় খুব বেশি বদলে যেতে পারেনি ও সেই দোর্দণ্ড প্রতাপ বামেদের রাজত্বেও। সেই ট্রেন ধরে এদিক ওদিক ওর কবিতা পাঠ এর আসরে হাজির হওয়া। পায়ে বেশ সস্তার চটি পরা। বই এর প্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া। বই এর আড্ডাতে মেতে ওঠা। আর কবিতার লাইন পাঠ করা। ট্রেনের কামরায় বসেও খাতা আর পেন নিয়ে পথ চলতে চলতে কবিতার লাইন লিখে ফেলা। স্টেশনে গাছের নিচে বসে কবিতার লাইন আউড়ে যাওয়া। যেটা বেশ মজার ব্যাপার। সেই যেহেতু চেনা মুখ আর অচেনার ভীড়ে আমি নানা জনকে খুঁজে বেড়াই আবার পেয়েও যাই। তেমন আজ অশোক কে পেলাম এই গভীর রাতে। 

কতদিন পর ওর কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই চেনা পথ ঘাট, সেই দিলীপ সরকার এর বাড়ীতে ওর অবারিত দ্বার। চেয়ারম্যান এর বাড়িতে সকাল বেলায় ওর পৌঁছে যাওয়া সাইকেল নিয়ে বা পায়ে হেঁটে। আমিও হাজির হয়েছি ইটিভির কোনো খবরের বাইট নিতে। আমার নেওয়া বাইট এর পর সেও কোনো আলোচনা করতে এসেছে কোনোও বিষয় নিয়ে এই পঁচিশ বছরের রাজত্ব করা বামচেয়ারম্যান এর কাছে। বেশ ভালই লাগত আমার সেই সময় ওকে দেখে। 

 একটু বামপন্থী হবার ফলে বুর্জোয়া শ্রেণীর এই সংবাদমাধ্যমকে হয়তো একটু ভালো চোখে দেখতো না ওরা সেই সময় আমাদের। কিন্তু একদম চির শত্রু ছিল না সে আমাদের কোনোকালেই। আমাদের গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক বলে অভিহিত করা হয়নি সেই সময় সেই লাল পার্টির আমলে। দিব্যি তো ওরা আমরা সংষ্কৃতির এত দাপাদাপি শুরু হয়নি সেই সময়। আর তাই এই রাত দুপুরে অশোক এর কথা ভেসে এলো জানলা টপকে ঝপ করে।

 এই শীতের রাতে সেই কবি সাংবাদিক অশোক এর কথা লিখে ফেললাম আমি আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায়। আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। কতদিন ওর সেই দাড়ি মুখের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা বিখ্যাত কবিতার লাইন শোনা হয়নি। সেই আগুন ঝরা কবিতা। সেই প্রেমের কবিতা। সেই বিরহের কবিতা। সেই সাম্যবাদের কবিতা। সেই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কবিতা। যে কবিতা লিখেই চলেছে সে আজও। কবিতা পাঠ করছে সে হাসতে হাসতেই। নিজেকে একদম না বদলে ফেলে। ভালো থেকো তুমি। 
দেখা হলে একটা কবিতা শুনবো তোমার গলায়। 

কবি অশোক মুখোপাধ্যায় - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...