সাদা জীবনের কালো কথায় আজ বোলপুরের সেই এক বিখ্যাত রিপোর্টার এর কথা। যে সেই ক্যামেরাম্যান থেকে বড়ো রিপোর্টার হয়ে যাওয়া অমর এর কথা। হ্যাঁ, সেই অমরনাথ দত্ত। চব্বিশ ঘণ্টার বিখ্যাত রিপোর্টার এর সর্বক্ষণের সঙ্গী সে। সেই বোলপুরের মিশন কম্পাউন্ড এর ২৪ ঘণ্টার অফিসের দেখভাল করা অল্প কটি টাকার এক কর্মঠ হাসি মুখের কর্মচারী। গাড়ী ছুটিয়ে আর ক্যামেরা নিয়ে এদিক দৌড়ে বেড়ানো যার নেশা।
খবরের নেশার টানে যে ছুটে বেড়ায় কোপাই এর ধার ধরে, খোয়াই এর জঙ্গল ধরে, কঙ্কালীতলার সর্ষে ফুল এর রাস্তা পার করে এই গ্রাম থেকে সেই গ্রামে। আবার কোনো সময় লাভপুরের গরম পিচ গলা রাস্তায় ছুটে বেড়ায় সে খবরের সন্ধানে। আমার বেশ ভালো লাগতো ওকে। কেমন যেনো একটা মেঠো গন্ধ গায়ে মেখে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো ও খবরের খোঁজে আর খাবারের খোঁজে।
খুব বেশি পড়াশোনা করে নি ও। জেলার গ্রামের না হলেও এমন ছেলে একটু কাজের সুযোগ পেলে ভালোই কাজ করবে নিশ্চয়ই। সুযোগ এলো হঠাৎ করেই আমার কাছে। ক্যামেরাম্যান থেকে অমর হয়ে গেলো রিপোর্টার। বোলপুরের রিপোর্টার। একদম ক্যামেরার পিছনের সারি থেকে চলে এলো সামনের সারিতে। বেশ ভালো লাগলো আমার। কঠিন পরিশ্রম করা একজন সে নিজের কাজের জোরে না হয় একটু এগিয়েই গেলো। ক্ষতি কি তাতে।
আমি তখন চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলে কাজ করি বোলপুরে অমর আমার লোকাল অভিভাবক। সে আমার মেয়ের ভর্তির সময় বোলপুরে ঘর খোঁজা হোক। কিম্বা যে কোনো দরকারে অমর আমার একমাত্র চ্যালা। আমার পরিবারের সদস্যরা অমরকে চেনে। বেশ একদম সহজ সরল ভাবেই মিশে যায় ও। আমিও ওর ওপর নির্ভর করতাম সবকিছু বিষয়ে। কোনো কিছু দরকার পড়লেই ওর খোঁজ পড়তো। ওকে ফোন করতাম আমি দিন রাত যে কোনো সময়। আর ও হাজির হতো নিমেষে মোটর সাইকেল নিয়ে।
মেয়ে ভর্তি হলো বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়া শুরু হলো ওর। চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেলে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম আমি। যে চ্যানেলে কাজ করার সুবাদে অমরকে আমি রিপোর্টার করলাম ক্যামেরাম্যান থেকে সেই চ্যানেলেও আমি কাজ ছেড়ে দিলাম। ধীরে ধীরে ওর সাথে যোগাযোগ কমে গেলো আমার। বেশ দৌড়ে বেড়ানো আর ছুটে বেড়ানো জীবন নিয়ে ও ভালোই আছে কিন্তু। এক শহরে আমরা বেশ কাছেই থাকি দুজনে। কিন্তু আমাদের দূরত্ব বেড়ে গেছে অনেক।
আসলে কাছে থেকে দূরে থাকা যায়। আবার বহু দূরে থেকেও একদম কাছে থাকা যায়। মানুষের জীবন তো এমনই। এই তো সেদিন রাস্তায় লাইভ দিতে গিয়ে দেখলাম ওকে একটি মিষ্টির দোকানে। সকালেই ক্যামেরা নিয়ে স্ট্যান্ড নিয়ে মোবাইল নিয়ে হাজির হয়েছে। বেশ আমায় দেখে একটু যেনো অস্বস্তি হলো ওর। সেই ভাড়া বাড়ি বদলের সময় ওর সব লোক জোগাড় করে দেওয়া। সেই গাড়ির ড্রাইভার রাজেশকে জোগাড় করে দেওয়া। সেই বাড়ির পাখা ইলেকট্রিক এর মিস্ত্রি জোগাড় করে দেওয়া সব ওর কাজ।
যাকগে তবে আজ সকাল বেলায় আমার অমর এর কথা মনে পড়ে গেলো হঠাৎ করেই এই শীতের সকালে। ওর ছুটে বেড়ানো দৌড়ে বেড়ানো জীবনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার এই স্থবির জীবনে। রাত এর বেলায় ওর সাথে গল্প করার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। কত যে সাহায্য করতো ও আমায় এই আমার বোলপুরের জীবনে। সত্যিই সাদা জীবনের কালো কথায় তাই আমি অমরকে রেখে দিলাম। দুজনে এক শহরের বাসিন্দা হয়েও, খুব কাছে থেকেও, একটু দূরের বন্ধু হয়েই থেকে গেলাম আমরা দুজন দুজনের থেকে এই কবিগুরুর দেশের বাসিন্দা হয়েও। ভালো থাকিস ভাই তুই। আর এইভাবেই ছুটে বেরিয়ে খবর করে যাস তুই হাসি মুখে।
বোলপুরের রিপোর্টার অমর - অভিজিৎ বসু।
ছয় জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন