সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির তরুণকান্তি দাস

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই আমায় ইটিভির চাকরির সুযোগ করে দেওয়া তরুণকান্তি দাসের কথা। বর্তমানের রিপোর্টার তরুণ কান্তি দাস। সেই বিখ্যাত সাংবাদিক আশীষ ঘোষদার ঘনিষ্ট তরুণ কান্তি দাস। ইটিভির সেই প্রথম আমলের জেলার দায়িত্ব পালন করা তরুণকান্তি দাস। পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটার সেই তরুণকান্তি দাস।


সেই সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা, দুম করে মাথা গরম না করা সব দিকে নজর রেখে এগিয়ে চলা সে। বস হলেও বস সুলভ মাতব্বরি দেখায়নি আমায় কোনোদিন। বর্তমানের স্টেডি চাকরি ছেড়ে ওর হঠাৎ করেই চলে আসা ইটিভির সংসারে। আর যে সংসারে সে এসেই জেলার কো অর্ডিনেটর এর পদ পায়। বেশ আমার তো সুবিধাই হয়। বর্তমানের সন্দীপন দার ওকে বলে দেওয়া। 

সেই কলকাতার তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ার অফিসে ইন্টারভিউয়ের আগের দিন বলে দেওয়া একটা জুতো পড়ে আসবেন কিন্তু। যেনো চটি পড়ে না যাই। জুতো ভাড়া করে অন্য লোকের বড়ো জুতোর মধ্যে একটা রুমাল গুঁজে আমি এস আর রামানুজন এর মুখোমুখি হই। সেই ঘরে তখন আশীষ দা আর নিউজ টুডের ডিরেক্টর রামানুজন। এক মিনিটে ইন্টারভিউ শেষ হয়ে যাওয়া। ইন্টারভিউ দিয়ে বের হবার পর আমায় বলা যান বাড়ী চলে যান আপনি। চিন্তা করবেন না। 

ধীর পায়ে সেই ভীড় অফিস ছেড়ে গুটি গুটি পায়ে নিচে নেমে আসা। রাস্তা থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখা সেই ইটিভির সিটি অফিসকে। আর সাদা খামে বেশ কিছু দিন পর ইটিভির চাকরির সুযোগ পাওয়া। ৩৩৪১ টাকার ইটিভির রিপোর্টার এর চাকরি। এক বছরের প্রবেশন। পরে কাজ করতে পারলে বেতন বাড়বে। আমার তখন তিন হাজার টাকার কাজটা যেনো হাতে চাঁদ পাওয়া। যে সুযোগ আশীষ দা, অম্বরিশ দা, তরুণ কান্তি দাস করে দিয়েছিল আমায়। 

আর আজ তাই মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় তাঁর কথা লেখা দরকার। সেই জেলার অফিস হবে ঘর এর খোঁজ করতে বলা আমায়। সেই সকাল বেলায় শ্রীরামপুরে ইটিভির অফিস ঘর দেখতে আসা। তারপর টিফিন করতে উমা মিষ্টান্ন ভান্ডারে খেতে ঢোকা। কিন্তু কোনও মতেই আমায় টাকা দিতে না দেওয়া। আমার আজও মনে আছে সেই কথা। ইটিভির সেই স্বর্ণযুগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী সেই সময় তাঁর সফর সঙ্গী হয়ে আরামবাগ, তারকেশ্বর, গোঘাট চলে যাওয়া। সুব্রত যশ এর মোটর সাইকেল করে জেলায় ঘুরে বেড়ানো। এমন কত যে সুন্দর দিন কাটাতাম আমরা সেই সময়। সেই জেলা থেকে ক্যাসেট পৌঁছে দেওয়া বর্ধমান ভি স্যাট সেন্টারে। সেখানে তখন ইনচার্জ হীরক কর। 

এইভাবেই তো শুরু হলো সেই ইটিভির জেলার দৌড়ে বেড়ানো ছুটে বেড়ানো দিন। খবরের পেছনে লেগে থাকার দিন। যদিও সেই সময় কারুর নজরদারি ছিল না একদম। যে কোনো খবর পেলে সেটা করা যেতো সত্যিই কে তুলে ধরে নিয়ে। আর সেই কাজে সাহায্য করতেন আশীষ দা, তরুণ দাও। আজ মনে পড়ল সেই সব কথা। যদিও কিছু দিন পর তরুণ দা ইটিভি ছেড়ে চলে যায় কাগজে। প্রতিদিন কাগজে মনে হয়। মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হয়। কি খবর তারপর ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায় আমাদের সম্পর্ক। 

হঠাৎ করেই সেই ইটিভি ছেড়েই হায়দরাবাদ এর কাজ ছেড়ে কলকাতা এলাম সেই প্রতিদিনের কাগজে হুগলী জেলার রিপোর্টার হয়ে। যেখানে জেলার বস তরুণকান্তি দাস। সেই হেসে বলে উঠলেন কি খবর আপনার। বললাম চলে যাচ্ছে আর কি। আর এই চাকরিতে সব থেকে বেশী সাহায্য করে আমায় কৃষ্ণ কুমার দাস। আর একজনের কথা বলতে হয় কিংশুক প্রামাণিক। অল্প কিছু দিন কাজ করলাম কাগজে। চলে গেলাম আবার টিভিতে। আসলে পেন আর কাগজের থেকে বোকা বাক্সের টান যে অনেক বেশি যে তাই। তবু যখন বোলপুরে একজন রিপোর্টার নেবে শুনলাম ফোনে যোগাযোগ করলাম।আমি বোলপুরে আছি যদি নেওয়া হয়। বললেন ওখানে জুনিয়র লোক নেওয়া হবে। আমি বললাম ওকে দাদা।

আসলে হয়তো প্রতিদিন কাগজের কাজ ছেড়ে চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেলে চলে যাওয়ায় কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন হয়তো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করেননি তিনি কোনোদিন। তবে সেই প্রথম ইটিভি বাংলা মিডিয়াতে কাজ করে দেওয়া। যা না দিলে হয়ত আমায় কেউ চিনত না এই ভাবেই। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে। ভালো থাকবেন আপনি তরুণ দা। এইভাবেই হাসি মুখে কাটিয়ে যাবেন জীবন। একজন জেলার পাতি সাংবাদিককে একটা কাজের সুযোগ করে দিয়ে আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন আপনি সেদিন। না হলে হয়তো আজও ভেসে বেড়াতাম আমি এদিক ওদিক। ভালো থাকবেন দাদা আপনি। 

ইটিভির তরুণকান্তি দাস - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...