সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উত্তরপাড়ার সৌম্য মুখোপাধ্যায়

হুগলী জেলার রিপোর্টার সৌম্য মুখোপাধ্যায়। সেই উত্তরপাড়ার রামঘাটে সন্ধ্যা হলেই গোপাল চ্যাটার্জী দার সেই বিখ্যাত প্রতিবন্ধী স্কুলের ঠেকে গিয়ে আড্ডা মারা আমি আর সৌম্য আর গোপাল চ্যাটার্জীদা। সেই উত্তরপাড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে আমার কোনো রকমে দিন যাপন এর খবর শুনে ঘরে একটাও বাজার নেই শুনে আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে একজনের পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা জোগাড় করে আমায় বাজার এর জন্য দিয়ে দেওয়া সেই সৌম্য মুখোপাধ্যায়। সেই বাংলার বিখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য যার নিজের মামা সেই সৌম্য মুখোপাধ্যায়। ইচ্ছা করলেই যিনি নিজের ভাগ্নের একটি কাজের সুযোগ করে দিতে পারতেন। 

আজ আমার রাতের অন্ধকারে সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে সেই উত্তরপাড়ার সৌম্য মুখোপাধ্যায় এর কথা। সেই হুগলীর নকশাল নেতা পল্টু সেন এর বেশ কাছের লোক সৌম্য মুখোপাধ্যায়। সেই উত্তরপাড়া এলাকায় গঙ্গার ধারে নানা ইট ভাটাতে অন্দোলন করা নকশালদের। আর সেই রামঘাটে বিখ্যাত টেলিগ্রাম অফিসের অনুপ পোঁড়েকে নিয়ে আমাদের হাসিঠাট্টা মশকরা করে সন্ধ্যা বেলায় আড্ডা মারা একসাথে সেই সদাহাস্যময় সৌম্য মুখোপাধ্যায় আমি আর গোপালদা। 

সেই শ্রীরামপুর সমাচার কাগজে সাধন গাঙ্গুলীদার কাছের আর কাজের লোক সৌম্য মুখোপাধ্যায়। বুক পকেটে পেন নিয়ে পল্লী ডাক অফিসে প্রবীর মুখার্জী দার সাথে দেখা করে পটুয়া পাড়ায় চলে যাওয়া সাধন গাঙ্গুলীদার বাড়ী রেল লাইন এর পাশ দিয়ে। সেই তরুণ মুখোপাধ্যায় যাঁর সাংবাদিকতার গুরু। সেই আমাদের সবার প্রিয় হাসি মুখের সৌম্য মুখোপাধ্যায়। নামে সৌম্য যেমন কম বয়সে দেখতেও সৌম্য দর্শন সে কিন্তু বেশ।


মাঝে মাঝেই কথা হয় ওর সাথে আমার। ওর বোলপুরে আসার আগে কথা হল বেশ কিছুদিন আগেই আমার সাথে। ভেবে ছিলাম দেখা হবে একমিনিট ওর সাথে । কিন্তু না দেখা হলো না আর। সবার সাথে কি আর দেখা করা যায় এই জীবনে। তবু সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি ভেসে ওঠে গঙ্গার জলপথ ধরে রাতের অন্ধকারে। এদিক ওদিক ভাসতে ভাসতে কোনোও ভাবে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া একটা জীবন। যে জীবনে ঝড় ঝাপটা সামলে হাসি মুখেই বেঁচে আছে সেই সৌম্য মুখোপাধ্যায়। 

কিছুদিন আগেই ওর সাথে কথা হলো আমার। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম গোপালদার কথা। সেই গোপাল চ্যাটার্জী। প্রিয়রঞ্জন দাশ মুন্সীর লোক ছিল গোপাল দা। সিপিএমের আমলে কংগ্রেসের পতাকা ধরে দল করা বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল। পরে মদন মিত্র এই রামঘাটে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্কুল তৈরি করে। সেই স্কুল নিয়ে খবর করে দিতাম আমি, সৌম্য, তরুণ দা। খুশী হতেন গোপাল দা। সৌম্য মুখোপাধ্যায় উত্তরপাড়ায় থাকার সুবাদে ওর সাথেই বেশি যোগাযোগ ছিল। হঠাৎ করেই গোপাল দা মারা যান। কিন্তু আমাদের সেই রামঘাটের স্মৃতির কথা আজও মনে আছে। 

আপ করে এই রাতের অন্ধকারে সেই সৌম্য চুঁচুড়াতে যেতো হুগলী আজকে অফিসে খবর এর কাজ করতে। নানা জায়গায় কাজ করে চেষ্টা করেছে নিজেকে দাঁড় করাতে। হয়তো খুব বড়ো কিছু করে উঠতে পারেনি সে। কিন্তু ওর সেই উত্তরপাড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে আমার বাজার এর টাকা জোগাড় করে দেওয়া, সেই রমঘাটে আড্ডা মারা এগুলো আজও ভুলতে পারিনি আমি। ভালো থেকো তুমি সৌম্য। একদিন দেখা করতে হবে। যেতে হবে আমাদের সেই গোপাল দার প্রিয় রামঘাটে। একসাথে ঘুরতে হবে উত্তরপাড়ার চেনা পথ ধরে এদিক ওদিক। ভালো থেকো তুমি। 

উত্তরপাড়ার সৌম্য মুখোপাধ্যায় - অভিজিৎ বসু।
একুশে জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...