সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই কলকাতা টিভির কল্লোল এর কথা। সেই কল্লোল মণ্ডল। সুন্দর করে জামা জুতো প্যান্ট পরা একদম সবসময়ে ফিটফাট কল্লোল। নিজেকে ধোপদুরস্ত করে সেজে রাইটার্স চলে আসা কল্লোল। একদম নিখুঁত পরিপাটি করে চুল আঁচড়ে ঘুরে বেড়ানো কল্লোল। সেই প্রতিদিন এক এক রঙের উজ্জ্বল রঙের জামা পরে আসতো কল্লোল। আর তারপর গোটা রাইটার্স বিল্ডিং ঘুরে বেড়াতো ও পায়ে হেঁটে। একবার দোতলা থেকে একতলা।
আবার কোনো সময় প্রেস কর্নার। আর চুপ করে কম কথা বলে কল্লোল নানা এক্সক্লুসিভ খবর করতো কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়েই হৈ চৈ না করেই। কারণ ওর জনসংযোগ, ওর নানা অফিসার এর সাথে যোগাযোগ বেশ সুনিবিড় ছিল। আর ওর এই ঘুরে ঘুরে এই ঘর থেকে ওই ঘরে চলে যাওয়া। হাসিমুখে বলা স্যার, আজ কিছুই দেবেন না। এই বলে অফিসার এর কাছে বসে পড়া। চা খাওয়া আর ঠিক কোনো না কোনও খবরের সুলুক সন্ধান পাওয়া।
শনিবার হলেই তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরবে কল্লোল ওর গ্রামের বাড়ি। তাই একটু তাড়াতাড়ি করে মহাকরণ ছেড়ে চলে যাওয়া। সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দূরে গ্রামে ওর ঘর। গ্রামে জমি আছে, পুকুর আছে। গ্রামে একটি স্কুল করেছে সে নিজের উদ্যোগে। সেখানে ছেলেমেয়েদের পড়ানো হয়। কল্লোল ছুটির দিনে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরে। আনন্দে দিন যাপন করে। ঘরে বউকে নিয়ে আনন্দে গ্রামের বাড়িতে দিন কাটায়। আবার সোমবার সকালে বাস ধরে ঘন্টা তিনেক লাগে ও শহরে চলে আসে সাংবাদিকতা করতে। বেশ ভালো জীবন যাপন করা ওর।
এই করেই কল্লোল মণ্ডল বেশ ভালই জীবন কাটিয়ে দিলো। ওর সাথে মহাকরণে দেখা হতো আমার। প্যান্টের পেছন পকেট থেকে নোটবুক বের করে বলে দিত কি খবর করেছে সে। আর আমায় বলতো শোন এটা আবার সবাইকে রাষ্ট্র করে দিস না তুই। বলেই বাথরুমে গিয়ে পকেট থেকে চিরুনি বের করে সুন্দর চুলটা আর একবার আঁচড়ে নিত কল্লোল। একদম ফিটফাট হয়ে থাকার নিরলস প্রচেষ্টা ওর।
সেই কল্লোল কে দেখলাম পোদ্দার কোর্টের কলকাতা টিভির অফিসে পিসিআর এ বসে আছে আলো আঁধারি পরিবেশে। প্রোডিউসার কম সকালবেলায় তাই রিপোর্টারদের প্রোডিউসার করে বসিয়ে দেওয়া। কেমন দৌড়ে বেড়ানো জীবনের কল্লোল এর স্থবির সেই অন্ধকার পিসিআর এ বসে যাওয়া জীবন। এটা দেখে বেশ খারাপ লাগতো আমার। ওর সেই মুখের হাসিখুশি ভাবটাই উবে গেছিলো সেই সময়।
বহুদিন কল্লোল এর সাথে দেখা হয়নি আমার। সেই মহাকরণের লম্বা করিডোর ধরে জামা জুতো প্যান্ট পরে হেঁটে আসছে ও দেখা হয় নি। কথা হয়নি আমার সাথে ওর বহুদিন। তবু মহাকরণের প্রেস কর্নার, সেই লম্বা ডোরাকাটা বারান্দা, সেই শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে কোনও মন্ত্রীর ঘর থেকে এককাপ চা ম্যানেজ করে নিয়ে বসে থাকা আর আড্ডা মারা সবার সাথে। আর সেই তাজা খবরের কুন্ডুদার সবাইকে বসে খইনি ডলতে ডলতে পর্যবেক্ষণ করা দেখা হয়নি আমার। কুন্ডু দা বেশ মজার মানুষ। আমায় বেশ পছন্দ করতেন তিনি।
বেশ দুপুর হলেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাসিমুখে চলে আসতেন সেই লাহিড়ী দা। আকাশবাণীর সেই মেয়েটি নাম মনে নেই আমার। সুন্দর হাসির সাথে এলাচ দিত যে সবাইকে হাসিমুখে। বেশ একটা সুন্দর পরিপাটি গুছানো সংসার। যে সংসারে দুপুর বেলায় বুক ফুলিয়ে সবার সাথে হাসি মুখে প্রবেশ করতো অত্রি মিত্র। সাদা বাড়ীর বিখ্যাত হাসিমুখের উজ্জ্বল সাংবাদিক। যার সাথে আজও আমার যোগাযোগ আছে অল্প। এমন অনেকের সাথেই মিশে ছিল আমাদের এই চুপচাপ থাকা কল্লোল মণ্ডল। সেই অফিসে ফোন ইন দেওয়ার সময় যে ভীড় ছেড়ে দুরে অনেক দুরে চলে যেতো সে বারান্দা ধরে হেঁটে হেঁটে। আর বলতো এই চুপ কর অফিসের ফোন এসেছে।
আর তাই আজ মনে পড়ে গেলো আমার কল্লোলের কথা। ওর হাসি মুখের কথা। ওর নানা কাজের কথা।কেমন একভাবেই এই ভাবেই ও হাসিমুখে কাটিয়ে দিলো ওর এই ভালোবাসার সাংবাদিকতা জীবন। যে জীবনে খুব বেশি প্রাচুর্য নেই, খুব বেশি উপচে পড়া সুখ নেই। কিন্তু কল্লোল বেশ হাসি মনেই সব কিছুকে মেনে নিয়ে আর মানিয়ে নিয়ে কাটিয়ে দিলো ওর এই খবরকে ভালবেসে দৌড়ে বেড়ানো জীবন। ভালো থাকিস ভাই কল্লোল।
কলকাতা টিভির কল্লোল মণ্ডল - অভিজিৎ বসু।
সাত জানুয়ারি দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন