সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হায়দ্রাবাদ এর ভাগ্যলতার সেই বাড়ী

হায়দ্রাবাদ এর ভাগ্যলতার একটি বাড়ীর ছবি পেলাম আমি আজ। সৌজন্যে সেই ইটিভির শুভাশীষ। বাড়ির সামনে সুন্দর করে একটা গেট সাজানো। কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে হয়তো। তাই এমন সাজানো গোছানো এই বাড়ির সামনেটায়। প্রথম দেখে একদম চিনতেই পারিনি আমি এই সেই বাড়ী। পরে বোঝা গেলো হ্যাঁ, সেই বাড়ীটা। যে বাড়িতেই আমার হায়দরাবাদ এর সেই পানিশমেন্ট ট্রান্সফার জীবনের কটা মাস কাটিয়েছিলাম আমি।

আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগের কথা হবে। এই কলকাতা শহর থেকে ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে নিয়ে আমি নিজের চাকরী বাঁচাতে হাজির হয়েছিলাম বর্তমানের তেলেঙ্গানা রাজ্য হলেও আগের সেই বিরিয়ানীর জন্য বিখ্যাত সেই হায়দরাবাদ এর শহরে। সকাল সাড়ে সাতটায় ফলকনুমা এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে প্রায় সাতাশ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি করে আমি পৌঁছে গেছিলাম নিজামের শহরে। সেই বিশাল রামোজি রাও এর সাম্রাজ্যের অন্দরে। 

একদম জেলা থেকে কোলকাতায় সাংবাদিক হতে গিয়ে এ এক মহাবিপত্তি ঘটে গেলো আমার জীবনে। সেই বিখ্যাত মিষ্টি হাসির গ্রুপ এডিটর রাজেশ রায়নার দৌলতে এই পানিশমেন্ট ট্রান্সফার আমার। যিনি আবার সেই বিখ্যাত কি বলবো সাংবাদিক না তিনি অন্য কিছু সেই জগদীশ চন্দ্রের ভাবশিষ্য হয়ে হাত জোড় করে ঘুরে বেড়িয়ে খবর না বুঝে, কোনওদিন কোনও খবরের সন্ধান না করেই শুধু লোক ধরে ওপরে উঠে গিয়ে আমাদের শুধু পানিশমেন্ট ট্রান্সফার করে বেড়ান সেই সময়। আর হাসি মুখে রামোজি ফিল্ম সিটিতে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান সেজে গুজে। সত্যিই কতো যে এমন কাশ্মীরি পন্ডিত মশাই এর উত্থান ঘটে সেই সময় দেশের মাটিতে কে জানে। 

মহাকরণের হানিমুন পর্ব শেষ করে আমার হঠাৎ করেই সেই বিখ্যাত পানিশমেন্ট ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসা এই অজানা হায়দরাবাদ শহরে। যে শহরের ভাষা জানিনা আমি। যে শহরের রাস্তা চিনি না আমি। যে শহরের লোকজনকে চিনি না আমি। শুধু ভরসা এই একটাই যে ভাগ্যলতার এই বাড়ীতেই থাকেন আমাদের সবার পুলক দা। আর তাঁর সঙ্গী শুভাশীষ। কলকাতা থেকে কেউ হায়দরাবাদ এলেই যাঁর ঘর অবারিত দ্বার সবার কাছে। যাঁর সাহায্য নিয়ে, যাঁর সুন্দর সুস্বাদু রান্না খেয়ে বেঁচে থাকা যায় ভালোভাবেই। আর শুভাশীষের মতো একজন পরোপকারী ছেলের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। 

আর তাই ট্রেন সকালে পৌঁছতেই সোজা কোনও রকমে অটো চালককে বলে বুঝিয়ে অনেক কষ্টে শহরের অচেনা অজানা পথ ধরে সোজা এই বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম আমি। বেলা তখন এগারোটা হবে। অচেনা শহরে অচেনা জায়গায়, বন্ধুহীন স্থানে পেয়ে গেলাম বাংলা থেকে এসে দিব্যি সুখেই বেঁচে থাকা পুলক দা আর তাঁর সঙ্গী এই শুভাশীষকে। ব্যাগ পত্তর নিয়ে সোজা তাঁর ঘরে ঢুকে পড়লাম আমি। দুটো বাংলায় কথা বলে ধড়ে প্রাণ পাওয়া গেলো এই এতো ঘণ্টা পর। সত্যিই কি যে দিন গেছে সেই সময়বলে বোঝানো যাবে না।

সেই বাড়ীর একটি ছবি আজ‌ শুভাশীষ এর সৌজন্যে পেলাম আমার মোবাইল ফোনে। যে বাড়ীতে পা দিয়ে আজ থেকে প্রায় একযুগ আগে নিজের পানিশমেন্ট ট্রান্সফার এর জীবনে আশ্রয় নিয়েছিলাম আমি। সেই বাড়ীর ছবি দেখে, সেই বারান্দা দেখে, সেই রাস্তা দেখে কেমন যেন স্মৃতির সরণী বেয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম আমি। সত্যিই এই বাংলার সব দামাল ছেলেরা আর মেয়েরা পেটের জন্য কাজের জন্যে তো ছুটে এসেছে এই শহরেই। শুধুই নিজেদের চাকরী বাঁচাতে আর সংসার বাঁচাতে। 

সেই বিখ্যাত ধ্রুব, দুই অমিতাভ ভট্টশালী আর সেনগুপ্ত সেই কুকুর নিয়ে থাকা সুদীপ্ত, সেই জাগরণ দা, শাশ্বতী দি, বিখ্যাত জটাশঙ্কর লাহিড়ী, সেই মিষ্টি হাসি মুখের অনন্যা, সেই বিখ্যাত কাকলী গোস্বামী, সেই অয়ন ভট্টাচার্য, সেই আরামবাগের বিশ্বজিৎ, সেই পার্থ, আর সেই চিত্তরঞ্জন এর বিখ্যাত সাংবাদিক শুভ্রাংশু আরও কতজন যে এই শহরে ছুটে এসেছে পেটের টানে তার শেষ নেই। হয়তো সব নাম লেখা হলো না আমার। 

সেই বিদেশ চলে যাওয়া বিদিশা আর মধুরাকা। সেই পুনেতে বাস করা দেবলীনা, সবাই তো এক সময়ে এই শহরেই থাকতো তারা চাকরী করত। সেই আমার পরিচিত সুদীপ্ত আর পান্ডুয়ার মেয়ে রুনা। সেই চন্দননগরের সঞ্চিতা। আমাদের রিপোর্টার সুদীপ্তর বৌ। সেই হিন্দমোটরের বিভাস। সেই আরামবাগের জয়ন্ত। সেই আমার ন্যাশনাল ডেস্ক এর বস স্যার শুভাকর।আর সেই বিখ্যাত কৌশিক গিরি সে কোথায় গেল কে জানে। আর সেই সন্ধ্যা হলেই এর বাড়ী ওর বাড়ী গম্ভীর মুখে বন্ধু খুঁজতে ঘুরে বেড়ানো দরজায় ঠক ঠক করে টোকা মারা বিখ্যাত সাংবাদিক সুবীর চক্রবর্তী। যাঁর কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে আমাদের এই প্রজন্মের এর আর আমাদের মত বাতিলের দলে চলে যাওয়া মিডিয়ার লোকদের। শুধু কি করে টিকে থাকতে হয় এই পেশায় সেটা।

এই একটা তিনতলা বাড়ির কথা লিখতে বসে এতো কিছুই লিখে ফেললাম আমি। সত্যিই তো এই বাড়ির তিনতলার সেই এক কামরার ঘর। প্রথমে চার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো আমায়। পুলকদার ঘরে ভাত খেয়ে বাড়ীর মালিককে যদিও মালকিন সব ছিলেন এই বাড়ীর। তাঁর হাতে টাকা দিয়ে ঘরের দরজা খুলে ঢুকে পড়া। সেই আমি আর শুভাশিস এর বিছানা কিনে আনা। গ্যাস এর ব্যবস্থা করে দেওয়া। বাড়ীর নিচের সেই মুদি দোকান থেকে বালতি মগ কিনে নেওয়া। ঠিক যেনো নতুন বিয়ে করে নতুন শহরে গিয়ে নতুন করে সংসার পাতা। 

যে সংসার টিকবে না জেনেও, যে সংসার একদিন ভেঙে যাবে জেনেও নীরব কর্মী হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সে কথা থাক আজ শুধুই সেই বাড়ীর কথা। সেই আমার পাশের ঘরে বাস করা উর্দু ডেস্কের জম্মু শহর থেকে আসা একজন। নাম মনে নেই আজ তাঁর। সেই বাড়ির নিচের মিষ্টির দোকান থেকে ভাত খাবার আগে কালো মিষ্টি আর টক দই কিনে আনা। একসাথে তিনজনে পেট ভরে ভাত খেয়ে বাস ধরে অফিস যাওয়া। আর সেই ভাত অফিসে নিয়ে গিয়ে পুলক দা আর আমি একসাথে রাতে ভাত খেয়ে অফিস সেরে রাতে একটার পর ঘরে ফেরা। সে একটা দিন গেছে আমাদের এই হায়দরাবাদ এর কঠিন কঠোর আনন্দের জীবন।

 কতো যে চেষ্টা করেছি আমি আমার এই চাকরি বাঁচাতে,পরিবারকে বাঁচাতে। কিন্তু না পারিনি আমি আমার পরিবার আর চাকরি বাঁচাতে। আমার অপরাধ কি সেটা না জেনেও যে একদিন আমায় পানিশমেন্ট দিলো সেই বিখ্যাত গ্রুপ এডিটর রাজেশ রায়না। শুনলাম আমি আজ আর তাঁর নিজের চাকরি নেই। শুনলাম কিছুদিন আগেই তাঁকে আর পানিশমেন্ট ট্রান্সফার দেওয়া হয়নি একেবারেই ছুটি কাটাতে বলে দেওয়া হয়েছে। এত বড় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও কেমন করে তাঁর কাজ চলে গেলো ভেবেই অবাক লাগে আমার। 

আসলে জীবন বোধহয় এমন করেই ঘূর্ণাবর্তে ঘুরতে ঘুরতে চলে নিজের আপন ছন্দে আর আপন খেয়ালে। এর জন্য আমাদের আড়ম্বরপূর্ণ ক্ষমতায় আমরা সেই সবকিছুকে নিজের মত করেই বদলে নিতে পারিনা। ভাবি সবটাই আমরা নিজের মতো করেই চালাবো সেটা আর হয়না। আমাদের সবার অলক্ষ্যে একজন সুতো নাড়েন। আর মনে মনে তিনি হাসেন। আর বলেন যে যতো ক্ষমতাশালী আর বলশালী হোক আসল ক্ষমতা তো শুধুই তাঁর হাতেই। 

সেই বাড়ির সামনে আবার একবার আমার এই বুড়ো বয়সে এসে বড়ো যেতে ইচ্ছা হয় আমার। সেই বাড়ির সামনের রাস্তায় একবার হাঁটতে ইচ্ছা হয় আমার। সেই বাড়ীর পাশের চার্চে সকাল বেলায় প্রার্থনা শুনতে ইচ্ছা হয়। সেই চায়ের দোকানে বসে বড়া আর চা খেতে ইচ্ছা হয়। সেই সোমবার হলেই রামোজি রাও এর ক্যান্টিন এর মোটা রুটি ভাজি আর হালুয়া খেতে ইচ্ছা হয় আমার। সেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হেঁটে বেড়াতে বড়ো সাধ হয়। সেই সন্ধ্যায় সাংভিদের মন্দির এর সামনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার আওয়াজ শুনতে বড়ো ইচ্ছা হয়। আর শনিবার হলেই সিদ্ধার্থ সরকারের বাড়ী বসে আড্ডা দিতে বড়ো ইচ্ছা হয়। আর রাত হলেই বৌদির হাতে ডাল আর আলু সেদ্ধ মাখা দিয়ে গরম ভাত খেয়ে ঘরে ফিরতে ইচ্ছা হয় অটো ধরে গভীর রাতে।

 সত্যিই একটা দাঁড়িয়ে থাকা তিনতলা বাড়ির এই ছবির গায়ে জড়িয়ে আছে আমার জীবন। আমার বারো বছর আগের ফেলে আসা জীবনের নানা গভীর গোপন যন্ত্রণার আঁধার মাখা দিন আর রাতের কথা। আমার গভীর গোপন ভালোবাসার সম্পর্কের কথা। আমার আকুতি আর আর্তি নিয়ে ঘরে ফেরার আবেদনের কথা। আমার ফেলে আসা সংবাদিক সত্তা আর সেই জীবনের কথা। 

যে জীবনটাকে আমি আজও এতো বছর অতিক্রান্ত হলেও বড়ই ভালবাসি। আমার হারিয়ে যাওয়া খবরের জীবন। যে জীবনটা এই বাড়ীটার গায়ে কেমন করে যেনো জড়িয়ে ধরে আজও বেঁচে আছে। সেই পুলকদা, সেই শুভাশীষ, সেই আমি সবাই যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আজও বেঁচে আছি। আর হায়দ্রাবাদ এর সেই ভাগ্যলতার মোড় থেকে একটু দূরেই সেই রাস্তার ওপর মাথা তুলে শ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই তিনতলার বাড়ীটা। একবুক টাটকা বাতাস আর অমলিন কিছু স্মৃতি ঝলমল রোদ্দুর নিয়ে। 

যে রোদ্দুরের লুটোপুটি আলো গায়ে মেখে আমার এই বুড়ো বয়সেও বেঁচে থাকতে বড়ই সাধ হয়। আর মনে হয় একবার যদি ফিরে যাওয়া যেত সেই পুরোনো দিনগুলোয় কি ভালো যে লাগতো আমার কে জানে। শুভাশীষ তোমায় ধন্যবাদ জানাই। শুধু এই ছবিটা তুমি দিলে বলেই তো আমি স্মৃতির উত্তাপ গায়ে মেখে এই শীতের রাতে একটু ওম নিয়ে বাঁচতে পারলাম। 

হায়দ্রাবাদের ভাগ্যলতার সেই বাড়ী - অভিজিৎ বসু।
বিশ জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য শুভাশীষ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...