সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হায়দ্রাবাদ এর ভাগ্যলতার সেই বাড়ী

হায়দ্রাবাদ এর ভাগ্যলতার একটি বাড়ীর ছবি পেলাম আমি আজ। সৌজন্যে সেই ইটিভির শুভাশীষ। বাড়ির সামনে সুন্দর করে একটা গেট সাজানো। কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে হয়তো। তাই এমন সাজানো গোছানো এই বাড়ির সামনেটায়। প্রথম দেখে একদম চিনতেই পারিনি আমি এই সেই বাড়ী। পরে বোঝা গেলো হ্যাঁ, সেই বাড়ীটা। যে বাড়িতেই আমার হায়দরাবাদ এর সেই পানিশমেন্ট ট্রান্সফার জীবনের কটা মাস কাটিয়েছিলাম আমি।

আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগের কথা হবে। এই কলকাতা শহর থেকে ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে নিয়ে আমি নিজের চাকরী বাঁচাতে হাজির হয়েছিলাম বর্তমানের তেলেঙ্গানা রাজ্য হলেও আগের সেই বিরিয়ানীর জন্য বিখ্যাত সেই হায়দরাবাদ এর শহরে। সকাল সাড়ে সাতটায় ফলকনুমা এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে প্রায় সাতাশ ঘণ্টার ট্রেন জার্নি করে আমি পৌঁছে গেছিলাম নিজামের শহরে। সেই বিশাল রামোজি রাও এর সাম্রাজ্যের অন্দরে। 

একদম জেলা থেকে কোলকাতায় সাংবাদিক হতে গিয়ে এ এক মহাবিপত্তি ঘটে গেলো আমার জীবনে। সেই বিখ্যাত মিষ্টি হাসির গ্রুপ এডিটর রাজেশ রায়নার দৌলতে এই পানিশমেন্ট ট্রান্সফার আমার। যিনি আবার সেই বিখ্যাত কি বলবো সাংবাদিক না তিনি অন্য কিছু সেই জগদীশ চন্দ্রের ভাবশিষ্য হয়ে হাত জোড় করে ঘুরে বেড়িয়ে খবর না বুঝে, কোনওদিন কোনও খবরের সন্ধান না করেই শুধু লোক ধরে ওপরে উঠে গিয়ে আমাদের শুধু পানিশমেন্ট ট্রান্সফার করে বেড়ান সেই সময়। আর হাসি মুখে রামোজি ফিল্ম সিটিতে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান সেজে গুজে। সত্যিই কতো যে এমন কাশ্মীরি পন্ডিত মশাই এর উত্থান ঘটে সেই সময় দেশের মাটিতে কে জানে। 

মহাকরণের হানিমুন পর্ব শেষ করে আমার হঠাৎ করেই সেই বিখ্যাত পানিশমেন্ট ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসা এই অজানা হায়দরাবাদ শহরে। যে শহরের ভাষা জানিনা আমি। যে শহরের রাস্তা চিনি না আমি। যে শহরের লোকজনকে চিনি না আমি। শুধু ভরসা এই একটাই যে ভাগ্যলতার এই বাড়ীতেই থাকেন আমাদের সবার পুলক দা। আর তাঁর সঙ্গী শুভাশীষ। কলকাতা থেকে কেউ হায়দরাবাদ এলেই যাঁর ঘর অবারিত দ্বার সবার কাছে। যাঁর সাহায্য নিয়ে, যাঁর সুন্দর সুস্বাদু রান্না খেয়ে বেঁচে থাকা যায় ভালোভাবেই। আর শুভাশীষের মতো একজন পরোপকারী ছেলের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। 

আর তাই ট্রেন সকালে পৌঁছতেই সোজা কোনও রকমে অটো চালককে বলে বুঝিয়ে অনেক কষ্টে শহরের অচেনা অজানা পথ ধরে সোজা এই বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম আমি। বেলা তখন এগারোটা হবে। অচেনা শহরে অচেনা জায়গায়, বন্ধুহীন স্থানে পেয়ে গেলাম বাংলা থেকে এসে দিব্যি সুখেই বেঁচে থাকা পুলক দা আর তাঁর সঙ্গী এই শুভাশীষকে। ব্যাগ পত্তর নিয়ে সোজা তাঁর ঘরে ঢুকে পড়লাম আমি। দুটো বাংলায় কথা বলে ধড়ে প্রাণ পাওয়া গেলো এই এতো ঘণ্টা পর। সত্যিই কি যে দিন গেছে সেই সময়বলে বোঝানো যাবে না।

সেই বাড়ীর একটি ছবি আজ‌ শুভাশীষ এর সৌজন্যে পেলাম আমার মোবাইল ফোনে। যে বাড়ীতে পা দিয়ে আজ থেকে প্রায় একযুগ আগে নিজের পানিশমেন্ট ট্রান্সফার এর জীবনে আশ্রয় নিয়েছিলাম আমি। সেই বাড়ীর ছবি দেখে, সেই বারান্দা দেখে, সেই রাস্তা দেখে কেমন যেন স্মৃতির সরণী বেয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম আমি। সত্যিই এই বাংলার সব দামাল ছেলেরা আর মেয়েরা পেটের জন্য কাজের জন্যে তো ছুটে এসেছে এই শহরেই। শুধুই নিজেদের চাকরী বাঁচাতে আর সংসার বাঁচাতে। 

সেই বিখ্যাত ধ্রুব, দুই অমিতাভ ভট্টশালী আর সেনগুপ্ত সেই কুকুর নিয়ে থাকা সুদীপ্ত, সেই জাগরণ দা, শাশ্বতী দি, বিখ্যাত জটাশঙ্কর লাহিড়ী, সেই মিষ্টি হাসি মুখের অনন্যা, সেই বিখ্যাত কাকলী গোস্বামী, সেই অয়ন ভট্টাচার্য, সেই আরামবাগের বিশ্বজিৎ, সেই পার্থ, আর সেই চিত্তরঞ্জন এর বিখ্যাত সাংবাদিক শুভ্রাংশু আরও কতজন যে এই শহরে ছুটে এসেছে পেটের টানে তার শেষ নেই। হয়তো সব নাম লেখা হলো না আমার। 

সেই বিদেশ চলে যাওয়া বিদিশা আর মধুরাকা। সেই পুনেতে বাস করা দেবলীনা, সবাই তো এক সময়ে এই শহরেই থাকতো তারা চাকরী করত। সেই আমার পরিচিত সুদীপ্ত আর পান্ডুয়ার মেয়ে রুনা। সেই চন্দননগরের সঞ্চিতা। আমাদের রিপোর্টার সুদীপ্তর বৌ। সেই হিন্দমোটরের বিভাস। সেই আরামবাগের জয়ন্ত। সেই আমার ন্যাশনাল ডেস্ক এর বস স্যার শুভাকর।আর সেই বিখ্যাত কৌশিক গিরি সে কোথায় গেল কে জানে। আর সেই সন্ধ্যা হলেই এর বাড়ী ওর বাড়ী গম্ভীর মুখে বন্ধু খুঁজতে ঘুরে বেড়ানো দরজায় ঠক ঠক করে টোকা মারা বিখ্যাত সাংবাদিক সুবীর চক্রবর্তী। যাঁর কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে আমাদের এই প্রজন্মের এর আর আমাদের মত বাতিলের দলে চলে যাওয়া মিডিয়ার লোকদের। শুধু কি করে টিকে থাকতে হয় এই পেশায় সেটা।

এই একটা তিনতলা বাড়ির কথা লিখতে বসে এতো কিছুই লিখে ফেললাম আমি। সত্যিই তো এই বাড়ির তিনতলার সেই এক কামরার ঘর। প্রথমে চার হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো আমায়। পুলকদার ঘরে ভাত খেয়ে বাড়ীর মালিককে যদিও মালকিন সব ছিলেন এই বাড়ীর। তাঁর হাতে টাকা দিয়ে ঘরের দরজা খুলে ঢুকে পড়া। সেই আমি আর শুভাশিস এর বিছানা কিনে আনা। গ্যাস এর ব্যবস্থা করে দেওয়া। বাড়ীর নিচের সেই মুদি দোকান থেকে বালতি মগ কিনে নেওয়া। ঠিক যেনো নতুন বিয়ে করে নতুন শহরে গিয়ে নতুন করে সংসার পাতা। 

যে সংসার টিকবে না জেনেও, যে সংসার একদিন ভেঙে যাবে জেনেও নীরব কর্মী হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সে কথা থাক আজ শুধুই সেই বাড়ীর কথা। সেই আমার পাশের ঘরে বাস করা উর্দু ডেস্কের জম্মু শহর থেকে আসা একজন। নাম মনে নেই আজ তাঁর। সেই বাড়ির নিচের মিষ্টির দোকান থেকে ভাত খাবার আগে কালো মিষ্টি আর টক দই কিনে আনা। একসাথে তিনজনে পেট ভরে ভাত খেয়ে বাস ধরে অফিস যাওয়া। আর সেই ভাত অফিসে নিয়ে গিয়ে পুলক দা আর আমি একসাথে রাতে ভাত খেয়ে অফিস সেরে রাতে একটার পর ঘরে ফেরা। সে একটা দিন গেছে আমাদের এই হায়দরাবাদ এর কঠিন কঠোর আনন্দের জীবন।

 কতো যে চেষ্টা করেছি আমি আমার এই চাকরি বাঁচাতে,পরিবারকে বাঁচাতে। কিন্তু না পারিনি আমি আমার পরিবার আর চাকরি বাঁচাতে। আমার অপরাধ কি সেটা না জেনেও যে একদিন আমায় পানিশমেন্ট দিলো সেই বিখ্যাত গ্রুপ এডিটর রাজেশ রায়না। শুনলাম আমি আজ আর তাঁর নিজের চাকরি নেই। শুনলাম কিছুদিন আগেই তাঁকে আর পানিশমেন্ট ট্রান্সফার দেওয়া হয়নি একেবারেই ছুটি কাটাতে বলে দেওয়া হয়েছে। এত বড় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও কেমন করে তাঁর কাজ চলে গেলো ভেবেই অবাক লাগে আমার। 

আসলে জীবন বোধহয় এমন করেই ঘূর্ণাবর্তে ঘুরতে ঘুরতে চলে নিজের আপন ছন্দে আর আপন খেয়ালে। এর জন্য আমাদের আড়ম্বরপূর্ণ ক্ষমতায় আমরা সেই সবকিছুকে নিজের মত করেই বদলে নিতে পারিনা। ভাবি সবটাই আমরা নিজের মতো করেই চালাবো সেটা আর হয়না। আমাদের সবার অলক্ষ্যে একজন সুতো নাড়েন। আর মনে মনে তিনি হাসেন। আর বলেন যে যতো ক্ষমতাশালী আর বলশালী হোক আসল ক্ষমতা তো শুধুই তাঁর হাতেই। 

সেই বাড়ির সামনে আবার একবার আমার এই বুড়ো বয়সে এসে বড়ো যেতে ইচ্ছা হয় আমার। সেই বাড়ির সামনের রাস্তায় একবার হাঁটতে ইচ্ছা হয় আমার। সেই বাড়ীর পাশের চার্চে সকাল বেলায় প্রার্থনা শুনতে ইচ্ছা হয়। সেই চায়ের দোকানে বসে বড়া আর চা খেতে ইচ্ছা হয়। সেই সোমবার হলেই রামোজি রাও এর ক্যান্টিন এর মোটা রুটি ভাজি আর হালুয়া খেতে ইচ্ছা হয় আমার। সেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হেঁটে বেড়াতে বড়ো সাধ হয়। সেই সন্ধ্যায় সাংভিদের মন্দির এর সামনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার আওয়াজ শুনতে বড়ো ইচ্ছা হয়। আর শনিবার হলেই সিদ্ধার্থ সরকারের বাড়ী বসে আড্ডা দিতে বড়ো ইচ্ছা হয়। আর রাত হলেই বৌদির হাতে ডাল আর আলু সেদ্ধ মাখা দিয়ে গরম ভাত খেয়ে ঘরে ফিরতে ইচ্ছা হয় অটো ধরে গভীর রাতে।

 সত্যিই একটা দাঁড়িয়ে থাকা তিনতলা বাড়ির এই ছবির গায়ে জড়িয়ে আছে আমার জীবন। আমার বারো বছর আগের ফেলে আসা জীবনের নানা গভীর গোপন যন্ত্রণার আঁধার মাখা দিন আর রাতের কথা। আমার গভীর গোপন ভালোবাসার সম্পর্কের কথা। আমার আকুতি আর আর্তি নিয়ে ঘরে ফেরার আবেদনের কথা। আমার ফেলে আসা সংবাদিক সত্তা আর সেই জীবনের কথা। 

যে জীবনটাকে আমি আজও এতো বছর অতিক্রান্ত হলেও বড়ই ভালবাসি। আমার হারিয়ে যাওয়া খবরের জীবন। যে জীবনটা এই বাড়ীটার গায়ে কেমন করে যেনো জড়িয়ে ধরে আজও বেঁচে আছে। সেই পুলকদা, সেই শুভাশীষ, সেই আমি সবাই যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আজও বেঁচে আছি। আর হায়দ্রাবাদ এর সেই ভাগ্যলতার মোড় থেকে একটু দূরেই সেই রাস্তার ওপর মাথা তুলে শ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই তিনতলার বাড়ীটা। একবুক টাটকা বাতাস আর অমলিন কিছু স্মৃতি ঝলমল রোদ্দুর নিয়ে। 

যে রোদ্দুরের লুটোপুটি আলো গায়ে মেখে আমার এই বুড়ো বয়সেও বেঁচে থাকতে বড়ই সাধ হয়। আর মনে হয় একবার যদি ফিরে যাওয়া যেত সেই পুরোনো দিনগুলোয় কি ভালো যে লাগতো আমার কে জানে। শুভাশীষ তোমায় ধন্যবাদ জানাই। শুধু এই ছবিটা তুমি দিলে বলেই তো আমি স্মৃতির উত্তাপ গায়ে মেখে এই শীতের রাতে একটু ওম নিয়ে বাঁচতে পারলাম। 

হায়দ্রাবাদের ভাগ্যলতার সেই বাড়ী - অভিজিৎ বসু।
বিশ জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য শুভাশীষ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...