সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই মনিময় সেনগুপ্তদার কথা। সেই চন্দননগর তথ্য সংস্কৃতি দফতর, সেই হুগলীর চুঁচুড়া সদর শহরের সেই গঙ্গার ধারের রবীন্দ্র ভবনের পাশের সেই জেলা তথ্য সংষ্কৃতির আধিকারিক এর অফিস। সেই অফিসের দোতলায় নানা সংবাদপত্রের ফাইল রাখা। সেই মহাকরণের লম্বা বারান্দা পেরিয়ে একটা বিরাট ঘরের সামনে ছোট্ট টেবিল এর ফাইল এর মাঝে বসে থাকা। আর আমায় দেখে বলা আসুন অভিজিৎ বাবু। বসুন চা খান। তারপর টুকিটাকি কথা হওয়া দুজনের।
আর সেই চাকরির সূত্রে নানা জেলায় ঘুরে বেড়ানো এক আপাদমস্তক ভালো সুন্দর মনের মানুষ। যাঁর কাছে সবকিছুই মনের কথা খুলে বলা যায়। যিনি বেশ অনেক কথাই তাঁর মনের কথা বলেন আমায় বিশ্বাস করেই। কি করে যে এই সম্পর্ক স্থাপন হলো কে জানে। সেই নবান্নে অ্যাক্রিডেশন কার্ড পাওয়া, সেই মহাকরণ থেকে কলকাতার সরকারি কার্ড পাওয়া, জেলার সাংবাদিক থেকে কলকাতায় চলে এসে রিপোর্টার হয়ে যাওয়া। মেনে আর মানিয়ে নিয়ে কোনও রকমে টিকে থাকার চেষ্টা করা আর কি। সেই সময় নানা সুখ এর দুঃখের কথা বলে নিজেদের বন্ধুত্ব টিকে থাকা আর সম্পর্কও টিকে থাকা দীর্ঘ বছর ধরে।
এইভাবেই তো আজ প্রায় কতবছর ধরেই কাটিয়ে দিলাম আমরা দুজন। মনিময় দা অবসর নিলেন সরকারী চাকরি থেকে। মনে করলে এক্সটেনশন নিতে পারতেন তিনি নিলেন না নিজের ইচ্ছায়। আর কিছু দিন সরকার এর কাছ থেকে কাজ করে টাকা আয় এর মাধ্যমে ভালো ভাবেই নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকতে পারতেন তিনি একটু ভালো করেই। কিন্তু না নিজের আদর্শ আর নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলেছেন তিনি হাসি মুখে। কিছু কিছু মানুষ এমন করেই কাটিয়ে দেন জীবন কিছু কিছু মানুষ হাজার দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণাকে বুকের মাঝে আগলে রেখেই কাটিয়ে দেন জীবন। একটু অন্যদের সাথে এডজাস্ট করে বেঁচে থাকলে ভালো নিশ্চিত জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটা না নিয়েই দিব্যি সুখেই কাটিয়ে দিলেন তিনি হাসি মুখে।
একজন সরকারী অফিসার হয়ে এমন করে জীবন কাটিয়ে দিয়ে নিরন্তর সৎ থাকার চেষ্টা করা। যেটা আজকাল খুব একটা দেখাই যায় না একদম। কিছু দিন হলো তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। ছেলেকে নিয়ে ভালোই অবসর জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন বেশ হাসি মুখে। মাঝে মাঝেই কথা হয় ফোনে আমাদের। নানা পুরোনো দিনের কথা। সেই চন্দননগরের গিরিদূতের কল্যাণ চক্রবর্তীদার কথা, সেই উপেন, নীলুদা, মিল্টন সেন, বিধান, সেই দূরদর্শনের গৌতম আশ এর কথা। সেই মারা গেলেন সাংবাদিক সমীরণদার কথা, সেই আকাশবাণীর সান্যালদার কথা।
সেই তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক মদনমোহন বাবুর কথা। সেই চন্দননগরের এসডিও নবনীদের কথা। যিনি বর্তমানে নিউ টাউনে থাকেন। সেই ভিখারী পাসওয়ান এর ঘটনার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ব্যাগে রেডিও ভরে নিয়ে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করে রাখার ঘটনার কথা। সেই জেলাশাসক এ কে সিং এর নানা গল্প। সেই যে দিদি চুঁচুড়া অফিসে বসে থাকতেন হাসি মুখে সব কাজ সামলে দিতেন মিনতি দি বা কিছু নাম হবে তাঁর কথা। সেই মানব গুহর কথা জিজ্ঞাসা করা। সেই কত পুরোনো অফিসার এর প্রসঙ্গ ওঠা সেই বিখ্যাত মালবিকা যাকে দেখলাম টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করতে একদিন। সেই উত্তরপাড়ায় বাড়ী সুন্দরী তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক ছিলেন চন্দননগরে কি নাম বেশ অলক্তিকা মুখোপাধ্যায় বোধহয় বর্ধমানে ট্রান্সফার হয়ে গেছেন তিনি বর্তমানে।
এমন নানা মানুষের ভীড়ে মিশে গিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিলেন হাসিমুখে জীবন। মনিময়দার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে আর পুরোনো দিনের তথ্য সংগ্রহ করতে আমার বেশ ভালই লাগে। অনেক কিছু জানলেও একদম নিরহঙ্কার হয়ে সব কিছুই ব্যক্ত করেন তিনি হাসিমুখে। আর তাই এই শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হলো মনিময় দার কথা লিখতে। যে মানুষটা আমার এই এলেবেলে এলোমেলো বিন্দাস জীবনের অনেক কথাই জানেন। আমার সাংবাদিক জীবনের নানা চড়াই উৎরাই এর ঘটনা জানেন। আমার সাদা জীবনের কালো কথার অর্থ কি সেটাও জানেন।
যখন তিনি বলেন অভিজিৎ বাবু আপনি একরকম কাটিয়ে দিলেন কাউকে পাত্তা না দিয়ে মাথা উঁচু করে সাংবাদিকতা করে। কারুর কাছে আত্মসমর্পণ না করে তখন বেশ ভালই লাগে আমার। হয়তো আমায় জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করে বাঁচতে হয়। সংসারে আর্থিক অনটনের জেরে জেরবার হতে হয়। বউ এর মেয়ের আর পরিবারের নানা লোকের কথা শুনতে হয়। তবু এই সব পুরোনো দিনের মানুষদের কাছে এমন কমপ্লিমেন্ট পেতে বেশ ভালই লাগে আমার এই বুড়ো বয়সে এসে।
মনে হয় সবার থেকে জীবনে শুধুই পিছিয়ে যেতে যেতে এই একটি জায়গায় হয়তো আমি এক কদম এগিয়ে গেছি অন্য সবার থেকে। যেখানে আজও আমায় অনেকে ভালোবাসেন। অনেকেই মনে রাখেন। অনেকেই বিশ্বাস করে অনেক কিছুই বলেন অবসর গ্রহণ করার পরেও। হাসিমুখে কথা বলেন। আর এই খানেই আমার এই শীতের সকালে মনে হয় সত্যিই তো জীবনের এই পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে এগুলোই বা কম কি। এই আমার শুধুই পিছিয়ে পড়ার মাঝে এগুলোই বা কম এগিয়ে যাওয়া কি। আর তাই সেই সব কথা আমি লিখে রাখি আঁকাবাঁকা অক্ষরে আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে। ভালো থাকবেন দাদা আপনি।
আমাদের সবার মনিময় দা - অভিজিৎ বসু।
বারো জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন