সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবার ফের আন্দোলনে নেমে পড়েছেন তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই। আসলে আন্দোলন এর মাধ্যমে রাজনীতিতে দ্রুত উঠে আসা এই সব রাজনীতির লোকরা, খুব বেশিদিন তাঁরা কিন্তু আন্দোলন না করে ঘরে চুপচাপ করে বসে থাকতে পারেন না একদমই। কারণ একটাই আন্দোলন তাঁদের রক্তে, আন্দোলন তাঁদের ধমনীতে অক্সিজেন সরবরাহ করে সব সময়। না হলে বোধহয় তাঁদের বেশ অসুবিধা হয় বাঁচতে। জীবন যাপন করতে পারেন না তাঁরা একদম এই আন্দোলন ছাড়া।
আর তাই সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা। সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটির প্রধান নেতা সেই বিখ্যাত বেচারাম মান্না আবার পথে নেমে পড়েছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। তিনি আবার আন্দোলনের মাঝে। মন্ত্রী হয়েও আবার তিনি জনতার কাছে। মানুষের জন্য কাজ করতে ফের রাস্তায় নেমে পড়া তাঁর। এর উদ্দেশ্য তাঁর একটাই মানুষের পাশে, মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সেটা অবশ্য তিনি পালন করেন বরাবরই। তাঁর কাছে সাধারণ মানুষের যাতায়াত দেখলেই আর তাঁর বাড়ীতে ভোরবেলায় লাইন দেখলেই অনুমান করা যায় সেটা।
সেই সিঙ্গুরে টাটাদের জোর করে পুলিশ দিয়ে চাষীদের জমি অধিগ্রহণ এর সময় পাশে দাঁড়ানো নেতা আজ আবার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছেন হাসিমুখে লাল পাঞ্জাবী পড়ে। হাওড়া বর্ধমান কর্ড শাখা ও হাওড়া তারকেশ্বর শাখায় বিভিন্ন জায়গায় রেলগেট তৈরি ও সাধারণ মানুষের জন্য হরিপালে ফ্লাইওভার তৈরির দাবিতে আর দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ের বিভিন্ন জায়গায় আন্ডারপাস এর দাবিতে ও সিঙ্গুর লোকাল পুনরায় চালুর দাবিতে জোর কদমে ফের আন্দোলন শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই।
সিঙ্গুর ও হরিপাল, এই দুই জায়গায় দুই এলাকায় জোরকদমে আন্দোলনে সামিল দুই এলাকার স্থানীয় তৃণমূলের দুই দাপুটে বিধায়ক। একজন বেচারাম মান্না আর অন্যজন হলেন করবী মান্না। আর তাঁদের দুজনের এই আন্দোলনের ঢেউ লাগে হাওড়া ডি আর এম অফিসে। সেখানে এসে ডেপুটেশন দেওয়া হয় এই আন্দোলনের স্মারক চিহ্ন ধরে রাখতে। হাজির আরও অনেকেই। রেলকে বুঝিয়ে দিতে যে বিমাতৃসুলভ কেন্দ্রীয় আচরণ বরদাস্ত করা হবে না একদমই। তাতে যতদূর যেতে হয় সেটা তাঁরা করবেন।
এই অবধি সবটাই তো একদম নিয়ম মেনেই ঘটেছে। কোথাও কোনো রকম প্রশ্ন জাগে না এই আন্দোলন নিয়ে। যিনি রাজনৈতিক নেতা তিনি মন্ত্রী হয়ে যান আর যতো বড়ো কেউকেটা হয়েই যান তিনি তো এই
রাজনীতির ময়দানে একজন প্রবীণ খেলোয়াড়। যিনি খুব ভালো করেই জানেন কোন খেলায় অংশ নিলে কতটা তাঁর নিজের লাভ আর ক্ষতির পরিমাণ কতটা হয়। সিঙ্গুরে জমি বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করে এটা তো একদম পরিষ্কার তাঁর কাছে এতদিনে ঠিক জলের মতই।
কোনও ডিভিডেন্ড পাওয়া ছাড়া রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো কুশীলবরা কিন্তু কোনো কাজই করেন না আজকাল নিজের স্বার্থ ছাড়া। নিঃস্বার্থ আন্দোলন আর দেশ সেবা, জন সেবা সেটা বোধহয় আজ সেই সোনার পাথর বাটির মতই হয়ে গেছে। সে জমি বাঁচাও আন্দোলন থেকে শুরু করে, কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হোক, অনশন মঞ্চে অনশন করা হোক, কিম্বা রাস্তায় গতি আনতে রেলগেট তৈরি ও ফ্লাইওভার নির্মাণ এর আন্দোলন করা হোক। কিম্বা একটা লোকাল ট্রেনের জন্য আন্দোলন করা হোক। সবটাই তো সেই স্বার্থ সঙ্কুল পৃথিবীতে স্বার্থের সমুদ্রে গোসল করা বা অবগাহন করে মহাকুম্ভে পূণ্য স্নান করে পুণ্যি লাভ করার চেষ্টা মাত্র।
না হলে আর হঠাৎ করেই এতদিন পর জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সেই আন্দোলন কারী কৃষক দরদী নেতা ফের রাস্তায় কেনো। সেই সিঙ্গেল লাইনের তারকেশ্বর শাখায় তো এখন ডবল লাইনে ট্রেন চলে দ্রুত।গতিতেই। এক লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে আর তারপর দীর্ঘ সময় পর ক্রসিং হয়ে ট্রেন ছাড়ার দিন তো শেষ হয়েছে কবেই সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। সেই হাওড়া বর্ধমান কর্ড শাখাতেও এখন বেশ ভালোই ট্রেন চলে। তাহলে কিসের জন্য এত রেলগেটের দাবি।
সেই গোঘাটের ভবাদীঘির এলাকায় রেলের তারকেশ্বর বিষ্ণুপুরে শাখায় কাজ চলছে একটু একটু করে ধীরে ধীরে। যে সমস্যা ছিল সেটা মিটিয়ে দিয়ে। হরিপাল এলাকায় মানুষ তো স্বাধীনতার পর থেকেই এতগুলো বছর জীবন কাটিয়ে দিলো ফ্লাইওভার আর আন্ডার পাস ছাড়াই এপার ওপার করে রাস্তা পাড় হয়ে। তাহলে কিসের জন্য এত বড় আন্দোলন হঠাৎ করেই এতবছর পর। তৃণমূলের শাসক দলের দুই বিধায়ক তো গত পনেরো বছর ধরেই এলাকার বিধায়ক তাহলে।
সিঙ্গুর লোকাল তো এখন সিঙ্গুর থেকে না ছেড়ে তারকেশ্বর অবধি এক্সটেনশন হয়েছে যাতে রেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছোটো ছোটো পথে লোকাল ট্রেন এর যাত্রাপথকে বৃদ্ধি করা হয়েছে যাত্রীদের সুবিধার্থে। যাতে বেশি পরিমাণে যাত্রী প্রান্তিক হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতে পারে। আর তাই শ্রীরামপুর লোকাল, শেওড়াফুলি লোকাল, সিঙ্গুর লোকাল এই সব ট্রেনের যাত্রা পথকে বৃদ্ধি করা হয়েছে যাত্রী দের সুবিধার জন্য।
তাহলে এই ডেপুটেশন, এই জনগণের জন্য আন্দোলন কিসের জন্য। তাহলে এই স্লোগান কেনো যে, কেন্দ্রের এই বিমাতৃসুলভ আচরণের শিকার রাজ্যের মানুষ সেটা আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার হলো না একদম। শুধুই কি কেন্দ্র আর রাজ্যের দ্বৈরথ জারি রাখা। নাকি এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মাঝেও অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে গভীর গোপন হয়ে কে জানে।
আর তাই এই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আজ শুধুই যুদ্ধ যুদ্ধ আন্দোলন আর এই খেলনা বাটির খেলা। আঁকাবাঁকা পথ ধরে সর্পিল গতিতে এগিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা। নির্দিষ্ট গন্তব্যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে,ঠিক হিসেব নিকেশ করেই। একদম মেপে পা ফেলে। একটু এদিক ওদিক হলেই হিসেব নিকেশ মিলবে না সাবধান।
একটি আন্দোলন ও রাজনীতি - অভিজিৎ বসু।
বাইশে জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন