সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রেস ক্লাব ও আমি

কত চেনা মুখ। প্রায় এক যুগ আগের ফেলে আসা অতীত দিনের স্মৃতি ঝলমল কিছু খণ্ড খণ্ড চিত্র। সেই চেনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে তৈরি হওয়া হুগলী প্রেস ক্লাব। খুঁজে পাওয়া কিছু পুরনো ছবির টুকরো টুকরো চেনা মুখ। যে মুখ ধীরে ধীরে চেনা আর অচেনার ভীড়ে মিশে গেছে। প্রায় বারো বছর আগের এই ছবি আমায় দিলো প্রদীপ। যে ছবিতে মৃণাল দা, তাপস লাহা, প্রকাশ পাল, সৌগত রায় আর বাপি আর প্রদীপ হাজির। এদের সাথে কতো যে দৌড়ে বেরিয়ে খবর করেছি তার ঠিক নেই। আর সবার মাথার ওপর তরুণ মুখোপাধ্যায়। 

সংবাদিকদের জন্য নতুন ঘর তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় শ্রীরামপুরে আর এম এস মাঠের ওপর। সাংবাদিকদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই ঘর। তখন আমি সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করতাম সেই সময়। হৈ হৈ করে নানা ধরনের লোকের কাছে পৌঁছে যেতে পারতাম নিমেষে দ্রুত। আজকাল সেই পেশা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি আমি। তবু তো এই ছবিগুলো দেখে ভালই লাগলো আমার। সেই সময় বোধহয় পুরপ্রধান কেষ্ট মুখোপাধ্যায় এর সময় ছিল।  

সেই চেনা জেলার রিপোর্টার সব। আজ কত বদলে গেছে এই বাংলা মিডিয়ায় সাংবাদিকতা। সেই সাংবাদিকতার ধরন আর ধারণ। দ্রুত জেলার এক প্রান্ত থেকে ছুটে চলে আসে ছবি জেলার সাংবাদিকের পকেটে। শীতের ভোরে ঘুম ভেঙে উঠেই দৌড়ে যেতে হয়না স্পটে। একদম হাতে গরম টাটকা ছবি মিলে যায় ঘরে বসে। সত্যিই বেশ ভালো ব্যবস্থা কিন্তু। এই মোবাইল যুগের জমানায় এক নতুন ধরনের আপডেটেড ব্যবস্থা। 

আজকালের পাতায় সৌগতর সাদা কালো অক্ষরে ছাপা নিজের নাম দেখে বেশ আনন্দ পাওয়া। প্রকাশের আনন্দবাজার পত্রিকার পাতায় নিজের ছবি খবর আর নাম ছাপা দেখে ওর মনে মনে খুশি হয়ে যাওয়া। বাপি আর তাপসের সেই নিউজ টাইম এর পর্দায় নিজেদের হাতে তৈরি খবর দেখে আনন্দে পুলকিত হয়ে যাওয়া। ইটিভির পর্দায় আমার করা খবর দেখে নিজের মন ও পেট ভরা। আর মৃণাল দার আজতক চ্যানেলে নিজের দেওয়া ছবি দেখে মনে মনে আত্মপ্রসাদ লাভ করা। আর সন্ধ্যায় শ্রীরামপুরে বাটার মোড়ে সেই খবর নিয়ে পোস্টমর্টেম করা। বেশ সুখের দিনগুলো ছিল কিন্তু সেই সময়।

এতো কড়াকড়ি, নিষেধাজ্ঞা ছিল না তখন এই বাংলা মিডিয়ায়। কারুর কড়া নজরদারি ছিল না সেই সময়। বেশ মনের সুখে, মনের আনন্দে কাজ করা যেতো এই বাংলা সংবাদ মাধ্যমে। অফিসে খবর পাঠিয়ে দিয়ে দেখতে হতো না সেই খবরে কাঁচি পড়েছে কার অঙ্গুলি হেলনে। সিপিএম এর খবর, তৃণমূলের খবর, নিদেনপক্ষে দুর্বল কংগ্রেসের খবর, এস ইউ সি র বিক্ষোভের খবর দেখানো হতো সমান অধিকার আর গুরুত্ব দিয়েই। আলু চাষের মাঠে তৈরি হওয়া ফড়েদের মতো বাংলা মিডিয়াতে তখনও তৈরি হয়নি সেই নতুন ফড়ে নামক বাবুদের দল। যাঁরা ঠিক করে কে কাজ পাবে আর কে ঘরে বসে থাকবে জেলায়, শহরে গ্রামে সব জায়গায়। সত্যিই কি অসাধারন ব্যবস্থা এটা। 

কিন্তু হঠাৎ করেই যেন বদলে গেলো এই বাংলা মিডিয়া। কাগজ, চ্যানেলে সব জায়গায় রাজনৈতিক দলের আধিপত্য বিস্তার লাভ করলো ধীরে ধীরে। বেড়ে গেলো স্থানীয় নানা ছোটো ছোটো খবরের সংস্থা। যারা আজ জেলায়, গ্রামে, শহরে নগরে ঘুরে বেড়ায় নতুন এক সংবাদ মাধ্যমের ঘরানার প্রতিনিধি হয়ে। যাঁরা খবর হলেই ছুটে চলে যান। লাইভ করেন, ছবি দেখান, নিজেদের রিচ বাড়ান, স্থানীয় নেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে যান তাঁরা দ্রুতহারে। সেই কম লোকের তৈরি হওয়া প্রেস ক্লাবে আজ অনেক মানুষের ভীড়। যে ভীড় কে আমি বেশ ভয় পাই ইদানিং। একটু দূরেই থাকি সেই ভীড় থেকে।

সেই চেনা সংবাদিকদের ক্লাবে একযুগ পার করে নতুন অনুষ্ঠানের আয়োজন। বেশ ভালই লাগলো দেখে আমার দুর থেকে। জেলায় জেলায় এই দ্রুত বদলে যাওয়া ছবি। বদলে যাওয়া গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়েছে নানা ভাবেই। যেখানে পুলিশ অফিসার মানেই চির শত্রু নয়। যেখানে লাল পার্টির লাল চা খাওয়া নেতা মানেই গরীবের মসিহা নয়। সবুজ ঘাসের মাঠে জোড়া ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ানো নেতা মানেই আদ্যন্ত সৎ নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী নয়। 

সব কিছুই বোধহয় বদলে গেছে এই বাংলায়। শুধু আমি নিজেই নিজেকে বদলে নিতে পারিনি। আর তাই এই সব বদলে যাওয়া শহর থেকে একটু দূরে থাকাই ভালো। ধন্যবাদ প্রদীপ এই পুরনো আমলের ছবিগুলো দেবার জন্য। 

প্রেস ক্লাব ও আমি - অভিজিৎ বসু।
সতেরো জানুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য প্রদীপ চক্রবর্তী।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...