কদিন আগেই ভোটের ডিউটি করতে এসে বোলপুরে ফোন করেছিল আমায়। কিছুদিন আগেই নিউজ এইট্টিন এর অফিসে চাকরি করার সময় কথা হয়েছিল আমার আর ওর মোবাইল ফোনে। মহাকরণে সেই পুরোনো সময়ে দুজনের মধ্যে দেখা হলে হাসি মুখেই কথা হতো আমার। সেই ইটিভির সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। সেই সুদীপ্ত আর সঞ্চিতার জুটি। সেই ওর হাসি মুখের কথা কি হলো কাকা, কি খবর গো। কিছু খবর আছে নাকি। এমন টুকটাক কথা, কম যোগাযোগ দিয়েই চলছিল আমাদের সম্পর্ক।
তবু আজ মনে পড়লো আমার সেই সুদীপ্তর কথা। একটু কাঠখোট্টা। মুখে আমার মত অত খারাপ নয় একটু মধু কম দিয়ে কথা বলে ও। একটু চুপচাপ থাকা সাংবাদিক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে কাজ করা সুদীপ্ত। সেই ইটিভির পুরোনো আমলের লোক সুদীপ্ত। হায়দরাবাদ ডেস্ক থেকে কলকাতায় এসেছিল মনে হয়। আজকাল বুড়ো হয়ে কিছুই মনে আসে না আমার। সেই সঞ্চিতার হায়দরাবাদ এ কাজ করা। ওদের পরিচয়, প্রেম, বিয়ে। জীবন তো এই ভাবেই জড়িয়ে যায় একে অপরের সাথে। সেই সঞ্চিতার বাবা আর মায়ের আমার সাথে হুগলী জেলায় কাজ করতাম সেই সময় কথা হতো কত। সেই তেলিনীপাড়ায় জগদ্ধাত্রী পূজোর সময় অঞ্জলি দিতে যাওয়া। জগদ্ধাত্রী পূজোর সময় দেখা হওয়া ওদের সাথে। পরে কলকাতায় ফিরে এসে প্রফেশন চেঞ্জ করে নিয়ে অন্য কাজের জগতে প্রবেশ করা সঞ্চিতার।
বেশ ভালো জুটি ওরা আগে কত যে গল্প হতো আমাদের। ওর ছেলের ব্যান্ডেল ডন বক্স স্কুলে ভর্তি হওয়া। সুদীপ্তর হাসি মুখে আমায় দেখিয়ে সবার সামনে বলা বাপটা এমন হলে কি হবে ওর মেয়েটা কিন্তু জুয়েল। আজ সেই শীতের সকালে সুদীপ্তর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আমার কেনো কে জানে। সেই রাতে বালি স্টেশনে দেখা হওয়া ওদের সাথে ফেরার পথে। কোনো সময় কথা হওয়া আবার কোনো সময় অন্য কামরায় উঠে পড়া ছুটে। আসলে এই ভাবেই চলে আমাদের জীবন। জীবনের চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কিছু মানুষ যাদের কথা মনে পড়ে যায় আমার। ভোলা যায় না তাদের কথা কিছুতেই। হয়তো সেই সম্পর্কের সরু সুতোয় মরচে পড়ে যায় তবু সেই সম্পর্কটা ছিঁড়ে যায়না কিছুতেই।
আর তার জোরেই আজ সুদীপ্তর কথা লিখতে বসলাম আমি সেই জোরে। হয়তো ও আমায় কোনোদিন পছন্দ করেনি। আমায় পছন্দ করে না কেউই। আমি কর্কশ ভাষী মানুষ। আমি ঠিক সফিস্টিকেটেড সাংবাদিক নই। আমি লোকের মন জুগিয়ে চলতে সক্ষম নয়। প্রতিবাদ আন্দোলন আমার রক্তে আর মজ্জায়। তবু অনেকের মাঝে সুদীপ্তর কথা আমার মনে পড়ে যায়। সেই ওর যখন একটু ওর পুরোনো অফিসে ওর টালমাটাল অবস্হা তখন ওর ফোন পেলাম। কাকা তুমি কি আছো অফিসে আসবো আমি দেখা হবে। দু চার মাস অফিস করার সুবাদে ওকে বললাম হ্যাঁ, চলে এসো। বড়ো ব্র্যান্ড ছেড়ে ও চলে এলো রিপোর্টার হয়ে ছোটো ব্র্যান্ডে। আসলে রিপোর্টার সুদীপ্ত বেশ ভালো কিন্তু। সে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক যে মাধ্যমেই হোক। কপালের ফেরে ওর ভাগ্য ক্লিক করেনি সেটা আলাদা ব্যাপার।
আর আজ সেই পুরোনো দিনের কথা ছবি দেখে মনে পড়ে গেলো এত কিছু। সেই বোলপুরে ওদের সাথে দেখা হওয়া। হাসিমুখে কথা বলা। টোটো চালক বলে নিজেকে ঠাট্টা করা। সেই সুদীপ্ত যে কি করে পিছনে পড়ে গেলো পরীক্ষার খাতায় কে জানে। কম নম্বর পেয়ে গেলো কি করে কে জানে। আসলে আগে এমন বাংলা মিডিয়ায় পাশ ফেল প্রথা ছিল না। সবাই যে লেটার মার্কস পাবে সেটাও নয়। তবে গড়পড়তা মার্কস পেয়ে দিব্যি হেলেদুলে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যেতো এই প্রফেশনে। এই বাংলা মিডিয়ায় হঠাৎ করেই এই পাশফেল প্রথা চলে এলো বাবুদের দৌলতে। আর বাবুরা তাদের আশপাশে নজর করে কে তার সাথে আছে আর কে নেই সেটা দেখেই পাশ ফেল প্রথা চালু করে পারফর্মার আর নন পারফর্মার স্ট্যাম্প দিয়ে দিলেন পিঠে। ঠিক যেনো ওই গ্রেডেশন পদ্ধতি মেনে কারুর পিঠে ছাপ মেরে দেওয়া। সত্যিই অসাধারণ এই পাশ আর ফেল প্রথা।
নতুন বছরে ওর সাথে কথাও হয়নি আমার। ওর এই ছবি গুলো দেখে মনে হলো এই ছেলেটাও তো এই বাংলা মিডিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই খেলে বেড়ালো। কোনো সময় উয়াড়ি টিমে আবার কোনো সময় মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল টিমে। সেই খেলোয়াড় কি করে যে আর খেলতে পারছে না হঠাৎ করে কে জানে। আমি না হয় খেলতে পারিনি ফাউল করে মাঠের বাইরে চলে গেছি নিজে নিজেই। ওর এই আমার মতো এক অবস্থা হলো কেনো, আর কি করে কে জানে। আমি জানিনা টোটো চালিয়ে ঘুরে বেড়াবো বলে ও ঘুরতে পারবে কি না হাসি মুখে। আসলে এই মিডিয়ায় এখন নানা ঘটনা আর সেই ঘটনার সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছি আমি এই বুড়ো বয়সে। একদম নির্বাক হয়ে। কোনও প্রতিবাদ, কোনো আন্দোলন, কোনো কিছুই আর করা যায় না। নিজের দাবি সনদ পেশ করা যায়না। শুধুই পাশ আর ফেল এর স্ট্যাম্প বুকে বয়ে বেড়াতে হয়। সত্যিই অসাধারণ এই বদলে যাওয়া বাংলা মিডিয়া।
ইটিভির সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় - অভিজিৎ বসু।
চার জানুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন