সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাসন্তী রঙের হালকা বিবর্ণ স্মৃতি

সেই কবেকার ছবি আমি খুঁজে পেলাম ঠিক সরস্বতী পুজোর আগের রাতে। আর তাই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বের করলাম এই নানা পুরোনো ছবি আর কিছু হারিয়ে যাওয়া একটু ঝাপসা হয়ে যাওয়া, মলিন হয়ে যাওয়া, রং চটা বিবর্ণ কিছু স্মৃতি। যে স্মৃতিকে আগলে বুকে জড়িয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। ঝলমল উজ্জ্বল হলদে বাসন্তী রঙের জামা পরে আমার বুটার সেই হাতে খড়ির মিষ্টি ছবি দেখে মনটা ভরে গেলো আমার।


হাতে খড়িতে ওর সেদিন বিশেষ একটা সায় ছিল না একদমই। তবু সেই ছোট্টো বুটা সেদিন ওর মার কোলে বসে একটু বিরক্ত হয়েই, হাতে চক আর পেন্সিল নিয়েও ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য দিকেই দেখতে বেশি ব্যস্ত ছিল সেদিন। কে কে ওর চেনা সব মানুষজন এসেছে সেদিনের ওর এই বিশেষ হাতেখড়ির অনুষ্ঠানে। ওর হাতেখড়ির সেই দিন। আসল কাজে মন না দিয়ে সেটাই পর্যবেক্ষণ করছিল ও গম্ভীর মুখে মার কোলে বসে।

 কতদিন আগের হবে এই ছবি। নয় নয় করে প্রায় কুড়ি বছর হবে প্রায় হয়তো। দেখতে দেখতে কুড়িটা বছর অতিক্রান্ত হলো আমাদের এই আঙ্গু পাঙ্গু আর গাঙ্গুর জীবনের। এই তিনটে নাম ওর দেওয়া। সেই নন্দী মাঠের বাড়ী। সেই মোজায়েক করা ঠাণ্ডা মেঝে। সেই বড়ো বড়ো ঘর। সেই পুরোনো বাড়ীরবড়ো বড়ো জানলা। সেই ওপরে কাকু থাকতেন। সেই কাকীমা ভালোবাসতেন খুব আমার নতুন বিয়ে করা বউকে। সেই ইটিভির হুগলী জেলার অফিস। সেই চেনা ফোন নম্বর ২৬৫২৪০৯০ আর নানা চেনা মুখ আর নানা নেতার ভীড়। 

যাঁদের কেউ হারিয়ে গেছে আর কেউ বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে টুক করে হারিয়ে যাওয়ার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন আর ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ শুনছেন চুপ করে। সেই সুধীর চক্রবর্তীদার কাছে বসে চক পেনসিল আর স্লেট নিয়ে অ, আ, ই , ঈ লেখা ওর। সেই নতুন কালো স্লেটে ওর আঁকিবুঁকি কাটা শুরু। জীবনের পথে হাঁটতে শেখার সেই শুরু ওর। সেই ছোট্টো বুটা আমার।

 
আর তারপর তো কেমন নিজে নিজেই গটমট করে সেজে গুজে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে,গলায় গলবন্ধ বেঁধে জলের বোতল আর পছন্দের টিফিন নিয়ে, এই রিক্সা বলে গলা ফাটিয়ে ডাক দেওয়া ওর। তারপর হাসি মুখে সবাইকে টাটা জানিয়ে সেই শ্রীরামপুরের প্রদীপ ভড়ের কিডস পয়েন্ট স্কুলে চলে যাওয়া। খেলার জন্যই বেশি ইন্টারেস্ট পড়ার থেকেও। আর তাই বোধহয় এত আনন্দ করেই ছোটবেলার খেলার স্কুলে ভর্তি হয়ে যাওয়া ওর। 

সত্যিই ছোটোকালটা বোধহয় বড্ড ভালো ছিল ওর, আমার, আপনার, সবারই। সেই পল্লীডাক পত্রিকার সম্পাদক প্রবীর মুখার্জীদার নন্দী মাঠের বাড়িতে আসা। বুটাকে একটা সুন্দর পেন উপহার দেওয়া। সেই মেজো মামা আর মেজো মামীর পুজোয় এসে অঞ্জলি দেওয়া। সেই মার চলে আসা একটু গম্ভীর মুখে। আজ যে সে সব কথা বড্ড বেশি করে মনে পড়ে যায় আমার ঠিক সরস্বতী পূজোর এই আগের নিশুতি রাতে। 

মা সরস্বতীর পূজা এলেই মনে পড়ে যায় সেই সকাল বেলায় হাতজোড় করে স্নান সেরে অঞ্জলি দেওয়া।‌ কুল না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে সেটা পালন করা। আর মার কাছে হাতজোড় করে বলা, ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে, কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতি ভারতি দেবি নমস্তে॥ 
আর মাকে প্রণাম করে হাতজোড় করে বলা, সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোঽস্তু তে। 

ধীরে ধীরেই বুটা একটু একটু করে বড়ো হলো। বোধহয় সেই স্লেট পেন্সিল এর জগৎ এর যে অনাগ্রহ ভাব ছিল ওর সেটা ধীরে ধীরে কেটে গেলো। ও একটু বুঝতে পারলো নিজে নিজেই। আর তারপরে সেই প্লে গ্রুপের খেলার পছন্দের স্কুল থেকে শ্রীরামপুর এর সেই চেনা পরিবেশ থেকে সোজা চন্দননগরের বড়ো স্কুলে চলে যাওয়া ওর। কি কান্না, কি কষ্ট করে স্কুলে সময় কাটানো ওর গাল ফুলিয়ে আর ঠোঁট ফুলিয়ে। সেই সব দিন যা গেছে একদিন।

তবে ধীরে ধীরে সেই ন্যানেট নার্সারী থেকে ওর বড়ো হয়ে যাওয়া। বারো ক্লাসের গণ্ডী পার হওয়া। সেই সিস্টার আন্না মারিয়ার সহায়তায় আর ভালোবাসায়। সেই চন্দননগরের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুল থেকে পাশ করে সোজা বীরভূমের লালমাটিতে বিশ্বকবির অঙ্গনে বিশ্বভারতীতে ভর্তি হয়ে যাওয়া। যে স্কুলে কেটে গেলো ওর বারো বছর। সত্যিই সেই স্লেট পেন্সিল হাতে এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকা বুটা আজ একদম কলেজ জীবন কাটিয়ে দিলো প্রায়। দেখতে দেখতে সে আজ স্নাতক এর পথে জাপানী ভাষা নিয়ে পড়ে, আর কদিন বাদেই গ্রাজুয়েট হয়ে যাবে ও।

সেই টলমল পায়ে হেঁটে কিডস পয়েন্ট স্কুলে যাওয়া ছোট্টো বুটা আজ কেমন যেন বদলে গেছে অনেকটাই। যে বুটা আমায় নিজে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে দুপুর হলেই, কি রান্না করলে আজ। কিছু খেলে না ঘুরে বেড়াচ্ছ রাস্তায় রাস্তায় এখনও তুমি। ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই আর মনে মনে বলি সেই ছোট্ট হলদে বাসন্তী জামা পড়া বুটা আমার বেশ বড়ো হয়ে গেছে সত্যিই। 

এই সরস্বতী পূজোর আয়োজন করতে আর ঠাকুর কিনতে ঘুরে ঘুরে বাজার করতে কত ব্যস্ততা থাকতো একটা সময় এই পূজোর আগের দিন আমাদের সবার। কলকাতা থেকে অফিস সেরে এসে রাত অবধি ঘুরে ঘুরে পূজোর বাজার করা। ঠাকুর পছন্দ হতে রাত বারোটা বেজে যাওয়া প্রায়। আমার গজগজ করা আর ওর বলা ঠাকুরের মুখ পছন্দ না হলে আমি কি করবো? তোমার যা ইচ্ছে হয় নিয়ে যাও কিনে আমার কী বলেই গম্ভীর হয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট অভিমানী মুখ। আর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার নতুন করে আমার এর ওর ঠাকুর খোঁজা শুরু করা। 

সত্যিই খুব ভালো দিনগুলো ছিল কিন্তু সেই ওর স্কুল জীবনের দিনগুলো। সেই বাড়িতে পূজোর ঘন্টা বাজা দিনগুলো বেশ ভালো ছিল। সেই নন্দী মাঠের ইটিভির ভাড়া বাড়ী, সেই কুমির জলা রোডের ইটিভির ভাড়া মশা ভর্তি বাড়ী, সেই কুমিরজলা রোডে আমাদের নিজেদের দু কামরার ছোটো আটশো স্কোয়ারের ফ্ল্যাটে পূজো হতো সেই সময়। আজ যখন সেই বাড়ীতে একা একা দিনযাপন করি আমি সেই সব কথাই মনে পড়ে যায় আমার এই গভীর নিশুতি রাতে।

মনের আর দোষ কি বলুন। দেখতে দেখতে কেটে যাওয়া কুড়ি বছরের এই পূজোর ঘন্টা বন্ধ হলো মা চলে গেলেন বলে। এই শ্রীরামপুরের বাড়িতে আজ আর কোনো আয়োজন নেই পূজোর। নেই লোকের ভীড়। নেই নতুন বাসন্তী রঙের জামা পরে বুটার ঘুরে বেড়ানো। নেই ধূপের গন্ধ। নেই রাত জেগে আলপনা দেওয়ার তাড়া। নেই ভোর বেলায় উঠে গরম জলে স্নান সেরে অঞ্জলি দেওয়ার তাড়া। নেই আমার মা এর সেই ছেলেকে শাসন করার চেষ্টা। 

এখনকার এই জীবন যাপন তো অনেকটাই মাপা জীবন। একদম ফিতে দিয়ে মাপা এই জীবন আমার। বেহিসাবি জীবন ছেড়ে মাপা এই জীবন। যে জীবনে একটু এদিক ওদিক করার কোনোও উপায় নেই আজ আর। একদম সোজা দড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে চলা কোনরকমে ব্যালেন্স করে ধীরে ধীরে।

 যে জীবনে জড়িয়ে আছে শুধুই আমার ফেলে আসা অতীত দিনের কিছু উজ্জ্বল বাসন্তী রঙের হালকা স্মৃতি। যে স্মৃতিকে আগলে ধরেই আমার এই বেঁচে থাকা। বুটার বকা খেয়েই চুপ করে বেঁচে থাকা। আর মনে মনে ওকে বেশি করে আঁকড়ে ধরা। সেই হলদে জামা পড়া ছোট্টো বুটাকে‌। যে বুটা আজ বড্ড বড়ো হয়ে গেলো দেখতে দেখতে। 

বাসন্তী রঙের হালকা বিবর্ণ স্মৃতি - অভিজিৎ বসু।
দোসরা ফেব্রুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...