এই দুজনের ছবি একদিন গোটা দেশ জুড়ে, বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই অপা আর পার্থর বিখ্যাত উত্তম সুচিত্রার হাসিমুখের জুটির ছবি। যে ছবি দেখে হৈ চৈ আর হুল্লোড় পড়ে গিয়েছিল সর্বত্রই। টাকার পাহাড়ে বসে হাবুডুবু খাচ্ছেন একটি রাজনৈতিক দলের এক মহাসচিব। তিনি বিপদে পড়ে একে ওকে আকুল হয়ে ফোন করছেন কিন্তু না, কেউ আর ফোন ধরছেন না তাঁর সেই বিপদের সময়। সাথে তাঁর বিখ্যাত এক মাত্র সুন্দরী সঙ্গিনী সেই অপা রানীও আছেন সেই বিপদের বেড়াজালে আটকা পড়ে আছেন আর ছটফট করছেন।
সেই শান্তিনিকেতনের মাটিতে ঘুরতে এসেই অপার বন্ধ সুন্দর বাগান বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে তবেই মনে শান্তি ছিল পর্যটকদের। আর আজ সেই দুজনের হারিয়ে যাওয়া একটা ছবি দেখেই মনটা কেমন যেন ভালো হয়ে গেলো আমার এই মাঘী পূর্ণিমার চাঁদের আলো মাখা সন্ধ্যায় সাইকেল নিয়ে আপনমনে ঘুরতে ঘুরতে। ঠাকুরের টোটোর পিছনে সেই হাসিমুখের চেনা পরিচিত জুটির ছবি লাগানো আছে। ঠিক যেনো যাত্রা পালার দৃশ্য অবলোকন করে আনন্দ উপভোগ করা আর কি।
একজন অন্যজনকে বলছে আমি বাড়ী পৌঁছে গেছি ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে তুমি কবে আসবে বলো। অন্য জন হাত নেড়ে বলছেন, একটু অপেক্ষা করো তুমি উপর মহলে কথা চলছে। সত্যিই একদম হিট বাংলা সিনেমার হিট ডায়লগ যেনো এই দুজনের। সেই চেনা মুখ, ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, চোখে অন্তর্ভেদী নির্লিপ্ত একটা গুরুগম্ভীর দৃষ্টি। একদম চালচলনে একটা রাজকীয় ভাব। যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ব্যাপার যেনো।
তিনি খেতে ভালোবাসেন যখন তখন খুব। রাজনৈতিক ঘটনা ঘটলেও, কারুর মৃত্যু হলেও তিনি গাড়ীতে বসেই কিছু খেয়ে তবে মৃতের বাড়িতে পৌঁছে গাড়ী থেকে নেমে সান্ত্বনা দিতে ভালোবাসেন সেই মৃতের পরিবারকে। খানাকুল যাওয়ার পথে এমন অভিজ্ঞতা আমার নিজেরও আছে একটা সময় একসাথে এক গাড়িতে যেতে যেতে বাপুজি কেক খেতে খেতে। সে যাক গে যা হয়েছে হোক অতীত কে আর মনে রাখে। মনে করে আর লাভ কী বলুন। আজ সন্ধ্যায় সেই দাপুটে নেতার সুন্দর মুখের ছবি আর তার কাতর আবেদন দেখেই কত কিছুই যে মনে পড়ে গেলো আমার।
সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সেই সিঙ্গুরে তাপসী মালিক এর মৃত্যুর দিন তাঁর বাড়িতে মালা দিতে গিয়ে চাষীদের বিক্ষোভের মুখে পড়া সেই দাপুটে তৃণমূলের দু নম্বর দাপুটে নেতা। একমাত্র আমাদের ইটিভির ক্যামেরায় সেই বিক্ষোভের ছবি তুলে প্রচার করা রাত নটার খবরে আর হৈ চৈ পড়ে যাওয়া। আর সেই খবর জানতে ইটিভির কলকাতা অফিস এর বিশিষ্ট তৃণমুল বিট এর সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরীকে ফোন করা অন্যদের। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী সুখের আর দুঃখের। তাঁর সেই ছবি দেখলাম আমি বোলপুরে একটা টোটোর পিছনে। লজ মোড়ের কাছে রাস্তার ওপর রবীনের চায়ের দোকানের সামনে। একদম ঠিক যেনো কোনও বিখ্যাত যাত্রা পালার প্রচার অভিযান চলছে। প্রথম দেখে এমনটাই মনে হয়েছিল আমার।
সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সেই মুকুল রায় কোথায় যে গেলো সব এঁরা। সেই মা মাটি আর ঘাসফুলের দলের সব সেরা সেরা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সেনাপতি আর স্ট্রাইকার যাঁদের উপর নির্ভর করেই একদিন দল বেঁধে সব ক্ষমতা দখল করে ফেললো এই বহুদিনের কাস্তে আর হাতুড়িকে তাড়িয়ে ঘাস ফুলের দল হাসতে হাসতেই। চৌত্রিশ বছরের সেই বিখ্যাত বার্লিন দেওয়ালের মতই ভেঙে পড়ল রাজ্যের লাল পার্টির শক্তপোক্ত দেওয়াল একদিন হঠাৎ করেই।
আর আজ সেই সব বিখ্যাত নেতার সুন্দর মুখের ছবি ঠাকুরের টোটোর পিছনে যাত্রাপালার পোষ্টারের মতো উজ্জ্বল হয়ে ঝুলে আছে ঠিক যেনো মাঘী পূর্ণিমার চাঁদের মতই। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন আর সেই জীবনের নানা জলছবি। যে জলছবিতে ফুটে ওঠে নানা সুখ আর দুঃখের, জোয়ার আর ভাঁটার, হাসি আর কান্নার , প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির ছবি। যে ছবি একদিন হৈ চৈ আর হুল্লোড় ফেলে দেয়। সেই উত্তম কুমার আর সুচিত্রার ছবি আর ছবির চরিত্ররা ফিরে আসেন আমাদের সামনে ঠাকুরের টোটোর পিছনে।
ঠাকুরের টোটোয় উত্তম সুচিত্রা - অভিজিৎ বসু।
এগারো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের ক্যামেরায় তোলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন