সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালোবাসার দিনে উজ্জ্বল ছবি

কেটে গেলো বিশ্ব প্রেমময় একটা দিবস। কেটে গেলো বিশ্বময় একটা ভালবাসার জোয়ারে ভেসে যাওয়ার একটা দিবস। কেটে গেলো ভালোবাসার সম্পর্কের রক্ষা করার একটা গোটা দিবস। কেটে গেলো একটা হৈ চৈ আর হুল্লোড় করা ভালোবাসাকে স্মরণ করার একটা দিবস। ভালবাসাকে মনন করে কাটিয়ে দেওয়ার একটা দিবস। কেটে গেলো ভালোবাসাময় একটা দিন আর রাত, যেদিনটা একটু অন্য রকমের, একটু অন্য ধরনের। সত্যিই অসাধারণ কিন্তু এই দিনটা। আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতো নয় একদমই। যদিও এই দিনেও নিয়ম মেনেই সুয্যি মামা পূবে উঠে পশ্চিমেই অস্ত গেছেন নিজের ছন্দে আর নিজের নিয়মে। 

এই ভালোবাসার দিনে বুড়ো বয়সে এসে আমার ভালোবাসার জনদের নিয়েই ছবি তুলে একটু ধরে রাখা। আমার সাদা কালো জীবনে সাদা কালো চুলের ঝাপটায় বয়সও বেড়েছে এখন অনেকটাই। মিডিয়ার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এর তকমা হারিয়েছি আমি অনেক আগেই বহুদিন আগেই। এখন তো সেই সিনিয়র সিটিজেন এর দোরগোড়ায় প্রায় পোঁছে গেছি আমি আজ। আর কদিন বাদেই ট্রেনের কামরায়, বাসের ভীড়ে, ব্যাংকের পাশ বই এর লাইনে কেমন যেনো একটু বাড়তি পাওনা আদায়ে সোচ্চার হবো আমি নিজে নিজেই। যদিও সেই সবের জন্য আমার বিশেষ একটা চিন্তাও নেই আর তার জন্যে কোনোও ভাবনাও নেই। আর আমার কোনোও বাড়তি তাড়াও নেই এই জীবনে। 

সন্ধ্যায় বোলপুরের ফাঁকা রাস্তায় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো। মাটির ভাঁড়ে চা খেয়ে তেষ্টা মেটানো। আর গরম ভেজিটেবল চপ খেয়ে সান্ধ্য কোর্স এর সমাপ্তি ঘোষণা করা। খারাপ কাটলো না আমার এই বিশেষ ভালোবাসার দিনটি কিন্তু। আঙ্গু, পাঙ্গু আর গাঙ্গুর
 এই চেনা তিনজনের ভালোবাসার সংসারে একটা চেনা ছবি। যে ছবির সাথে আমার প্রতিদিনের পরিচয় আছে। 

যে ছবি তোলার দিন শেষ হয়েছে আমাদের অনেক আগেই। স্টুডিওর উজ্জ্বল আলোয় দাঁড়িয়ে,বন্ধ ঘরে যত্ন করে ভালোবেসে পাশে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে ছবি তোলার দিন শেষ হয়েছে অনেক আগেই আমাদের এই দ্রুত দৌড়ে চলা জীবনে। সেই সেজে গুজে পাত্র পাত্রীর ছবি তোলার দিনও শেষ প্রায়। সেই নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে নতুন ঘর বাঁধার পর সাদা কালো প্রেম আর রঙিন ভালোবাসার সাদা কালো ছবির জমানা শেষ হয়েছে অনেক আগেই আমাদের এই জীবনে। 


আর তাই স্টুডিওর দোকানে ভীড় কমেছে অনেক আগের থেকে। মাথায় হাত পড়েছে ছবি তুলে বেঁচে থাকা লোকদের। তাঁদের কথায় ছবি তো এখন হাতের ছোঁয়ায় আর হাতের মুঠোয় বন্দী হয়ে গেছে দাদা। আর তার সাথে বন্দী হয়েছে এই ভালোবাসাও। যে ভালবাসা আজ বিশ্বময়, যে ভালোবাসা আজ প্রেমময় হয়ে ঘুরে বেরিয়েছে এদিক ওদিক হাসিমুখে দাঁত বের করে। ঠিক যেনো শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রেমের ফাঁদে পা দেবার মতই বিশ্বজনীন হয়ে। সেই ভালোবাসাই আজ হাতের মুঠোয় বন্দী হয়ে গেছে। 

তবু এই আজকের দিনে ঘুরতে ঘুরতে আমি কেনো জানি না একটা সেই উজ্জ্বল আলোয় দাঁড়িয়ে, বন্ধ স্টুডিওর ঘরে দাঁড়িয়ে, ভালোবাসার স্পর্শ নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষদের কাছে নিয়ে একটা ছবি তুলে রাখলাম ভবিষ্যতের জন্য। যে ছবির মূল্য মাত্র ষাট টাকা। যে ছবির কোনোও মূল্য আজ হয়তো নেই আমাদের তিনজনের কারুর কাছেই। 

কিন্তু ভবিষ্যতে যেদিন আঙ্গু, পাঙ্গু আর গাঙ্গুর এই তিনজনের আদি অকৃত্তিম অমলিন ভালোবাসার জুটি একদিন ভেঙে যাবে। সেদিন এই ভালোবাসার দিনের পুরোনো ছবির কথা মনে পড়ে যাবে নিশ্চয়ই কারুর না কারুর মনে। সেদিন হয়তো এই ভালোবাসার দিনে বুড়ো হয়ে যাওয়া আর হারিয়ে যাওয়া এই ছবিকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবে বাকি জনরা এই ভালোবাসার ধুলো পড়া পৃথিবীতে। কেমন ভালোবাসার সম্পর্কের কথাকে স্মরণ করেই হাসি মুখে। আর সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষের ছবির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে।

ভালোবাসার দিনে উজ্জ্বল ছবি- অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য স্টুডিও বোলপুর।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...