সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্বপ্ন দেখা সুদীপ্ত কুন্ডু

সুদীপ্ত কুন্ডু। দেখা হয়েছিলো আমার সাথে একদম অল্প কিছুদিন। মেরে কেটে হাতে গোনা বারো দিন এর আলাপ পরিচয় আর একসাথে কাজ করা আমাদের দুজনের একটা অফিসে। সেই হাজরা মোড়ের কাছে বাংলা জাগোর অফিসে।‌ বেশ ছটফটে একটি হাসিখুশি ছেলে। ওর উজ্জ্বল দুটি স্বপ্নালু আর মায়াবী চোখ। যে চোখের তারায় দূরের স্বপ্ন দেখতে বেশ ভালোবাসে সে ও বরাবর। যে স্বপ্ন ও দেখে আর বিশ্বাস করে সেই স্বপ্ন পূরণ একদিন হবেই। আর ভয়ঙ্কর সুন্দর হলো ওর গলা। ভালোবাসার দিনের একটি পুরোনো প্যাকেজে ওর এই গলার আওয়াজ শুনে মনে হলো আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে ওকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়। 


সেই সুন্দর কপি লিখতে ওস্তাদ সুদীপ্ত। সেই হাসি মুখে আমার গাল শুনেও কাউকে বসদের কাছে কোনোও কমপ্লেন না করে বাধ্য ছেলের মতো দুর্গাপুজোয় লাইভে স্ট্যান্ড বাই হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া সুদীপ্ত। সেই ভয়েস ওভার দিতে হবে এদিক ওদিক থেকে ওকে ডেকে নিয়ে সেই ছোট্টো ঘরে নিয়ে যাবার জন্য অন্য সহকর্মীদের তাড়া দেওয়া সুদীপ্ত। সেই হাজরা মোড়ের অফিস এর দুই বস এর মোস্ট ডিপেনডেবল কর্মী সুদীপ্ত। যদিও এক বস এখন অন্য চ্যানেলে কর্মরত বিখ্যাত অ্যাঙ্কর। আসলে কেউ কেউ বোধহয় এমন হয়। এমন সুন্দর করে গুছিয়ে চলতে জানে নিজের ডিমান্ড তৈরি করে নিয়ে। আর সেই সুদীপ্ত সবাইকে আশ্বাস দিয়ে একটু চা খেয়ে আসি বলে কাজ ছেড়ে উধাও। আর বসের কাছে অন্যদের অভিযোগ কোথায় যে যায় সুদীপ্তদা কে জানে।

বেশ মজার আনন্দের হৈ চৈ হুল্লোড় এর দিনগুলো ছিল‌ কিন্তু আমাদের সাংবাদিক জীবনের সেই সময়। সেই খালি দৌড়ে যাওয়ার দিন। সেই দৌড়ে খবর ধরানোর দিন। সেই একটা ছোট খবরের সংসারে কত কষ্ট করে আর আনন্দ করে একসাথে বেঁচে থাকা। পেটের টানে ছুটে বেড়ানো তিনতলা থেকে চারতলায় দৌড়ে আর ছুটে হাঁফিয়ে আনন্দে খবর এর জন্য। বেশ ভালই লাগত আমারও সেই অল্প কটা দিন। কিন্তু সেই বোকা বাক্সের পর্দায় নায়ক সুদীপ্ত একদিন হঠাৎ করেই পর্দা ছেড়ে মঞ্চ ছেড়ে একটু অন্তরালে চলে গেলো শুনলাম আমি। 

দাদা আমি এখন কাগজের সাংবাদিক হয়ে গেছি টিভি ছেড়ে দিলাম। বর্তমান কাগজের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের সাংবাদিক হয়ে গেলো সেই সুদীপ্ত কুন্ডু। টিভিতে দেখা যায়না আর ওকে। ওর সুন্দর গলা শোনা যায়না আর। সেই প্রেমের দিনে কিন্তু ওর লেখা নাম দেখা যায় কাগজের সাদা কালো অক্ষরে সেই সুদীপ্ত কুন্ডু। আর সেটা দেখে বেশ ভালো লাগে আমার। গুণী ছেলের কখনও কাজের অভাব হয় না। সেই শান্তিপুর এর রাসমেলার মাঠ ছেড়ে সুদীপ্ত এখন কলকাতার কাছে হাওড়া জেলায় চলে এসেছে। 

মাঝে মাঝেই রাতে ঘুম না এলে কথা হয় আমাদের দুজনের। ওর লেখা পড়ে আমি বলি আহা কি দারুন লিখলে তুমি ভাই। ও বলে দাদা তুমি কি যে বলো। তুমিও খুব ভালই লেখো দাদা। আসলে অল্প কিছু দিনের আলাপ, অল্প সময়ের একসাথে কাজ করা মাত্র বারো দিন তবু কেমন যেনো একটা গভীর গোপন সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেছে ওর সাথে আমার আজ এই অল্প কদিনেই। যা দীর্ঘ দিন কারুর সাথে একসাথে কাজ করেও তৈরি হয়নি আজও। তাই ভালোবাসার দিনের একটা প্যাকেজে ওর সেই ভয়ংকর সুন্দর গলা শুনে আমার মনে হলো সুদীপ্তকে নিয়ে কিছু লিখলে কেমন হয়। 

ওর সেই কলম আর নোট প্যাড নিয়ে এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়ানো। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বাইকে বসে দু হাত তুলে আনন্দে জঙ্গলের মাঝে গাড়ী থামিয়ে ওর উদাত্ত গলায় গান ধরা। এদিক ওদিক ছুটে বেড়ানো। আর সেই স্বপ্ন দেখা চোখে জীবনকে আতিপাতি করে খুঁজে বেড়ানো। যে জীবনে কোনো বাধা নেই। যে জীবনে কোনো নিষেধ নেই। যে জীবনে কোনও চোখ রাঙানি নেই। আছে শুধু খবরের হাতছানি। মানুষের কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা। আর মানুষের জীবনের কথা লিখে যাওয়া। বেশ মন্দ নয় কিন্তু বোকা বাক্সের পর্দা ছেড়ে বেরিয়ে এসে বোকা মানুষদের কথা লিখে যাওয়া। ভালো থেকো তুমি সুদীপ্ত। 

স্বপ্ন দেখা সুদীপ্ত কুন্ডু - অভিজিৎ বসু।
পনেরো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...