সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহাকুম্ভে পঞ্চুর পূণ্য স্নান

দিকে দিকেই এখন পাপ আর পূণ্যর হিসেব কষে, পাপকে ধুয়ে মুছে সাফ করার একটা দিন। একদিকে মহাকুম্ভে স্নান এর উপচে পড়া, আকুল করা, মাতাল করা উদ্দাম ভীড়। একদিকে মহাকুম্ভ আর অন্যদিকে অনুকুম্ভ। অমৃতকুম্ভের সন্ধানে ঠিক যেনো বেরিয়ে পড়েছেন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ। শুধুই একটু পুণ্য লাভের আশায়। সারা জীবনের পাপকে স্নান করে কে না ধুয়ে মুছে সাফ করতে চায় বলুন। একটা ডুব মেরে দিলেই যদি জীবনের সঞ্চিত সব পাপ মোচন হয় তাহলে আর ক্ষতি কী। 


রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে মায় আমজনতা এমনকি পাড়ার পঞ্চুও হাজির এই পুণ্য লাভের আশায় এই বিখ্যাত কুম্ভমেলায়। পঞ্চুর অবশ্য খুব বেশি পাপ মোচন করতে হবে না তাঁকে এই জীবনে। সে তো আর ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা কথা বলেনি রাজনৈতিক নেতাদের মত। দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেনি একদমই কোন সময়। ধর্মের জিগির তুলে দেশের মানুষের মধ্য ভোটের রাজনীতি নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেনি একদম সে। আর টাকাপয়সা নয়ছয় করে এদিক ওদিক সরিয়ে রাখেনি সে নিজের ধনসম্পত্তি প্রভূত তৈরি করেনি সে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে। 

শুধুই ভোটের অধিকার রক্ষা করে একটু আধটু এদিক ওদিক করেছিল সে। সাকুল্যে সে তার পিসির কিছু সম্পত্তি দখল করেছিল পিসিকে দেখভাল করেই হাসিমুখে সেটা তো সবারই জানা আছে বেশ ভালো করেই। পাড়ার এক বৌদিকে একটু কু নজরে দেখার অভ্যাস তার ছিল কিন্তু সেটা তো একটু আধটু সবারই হয় অমন দোষ আর কি। অফিসের বসের কাছে কাজ করে দিয়ে দু পাঁচ টাকার উপরি লাভ সেটা তো তাঁর নিজের হকের পাওনা এটা নিয়ে আর বলার কি আছে। আর সেই যে অফিস ফেরত এর সময় শুক্রবার রাতে ঝুমার হাত ধরে ঘরে ফেরা আর বাসের ভীড়ের মধ্য একটু ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টায় আকুল আবেদন করা তার কাছে। সেগুলো নিয়ে এত ভাবনা আর চিন্তার কি আছে কে জানে। তবু তো কেমন বুক ঢিপ ঢিপ নিয়ে পুণ্য কুম্ভ মেলায় ডুব দেওয়া তাঁর অন্যদের মতই।

তাই তো পাড়ার পঞ্চু একদম সব তার পাপকে ধুয়ে মুছে এই কুম্ভে স্নান সেরে মুছে ফেলতে চায় চুপিচুপি। কেউ যেনো টের না পায় এইসব একদমই। এতো আর একদম সেজে গুজে লাল রঙের জ্যাকেট পড়ে ফ্যাশন শো করা নয়। একদম মেপে মেপে পা ফেলে দিয়ে। সারা জীবনের সংসার ধর্ম না করে শুধুই রাজনীতির বেসাতি করে হাসি মুখে বুক ফুলিয়ে ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। আর মোহ মুক্ত হয়ে মহাকুম্ভে স্নান সেরে পুণ্য অর্জনের চেষ্টা করা। একদম গৃহী হয়েও কেমন সন্ন্যাসীর বেশে। সেতো আর কোনো সময় গেরুয়া আবার কোনো সময় সবুজ শাড়ি পরে দুই কুম্ভে মেপে মেপে পূণ্য সঞ্চয় নয় হাসি মুখে রঙের উজ্জ্বল আলোয় নিজেকে মুড়ে নিয়ে।

সত্যিই অসাধারণ এই ধর্ম মেনে নিয়ে জীবনে চলা। যে ধর্মের ঘেরাটোপে শুধুই নিজেকে বন্দী করে পাপ আর পূণ্যের সুনিপুণ বেচাকেনা করা। ধর্ম তো আমাদের ধারণ করে। ধর্ম তো আমায় পালন করে। ধর্ম তো আমায় পূরণ করে। তাহলে আর সেই ধর্মকে আঁকড়ে ধরে এতো হৈ চৈ হুল্লোড় আর হিল্লোল কেনো গোটা দেশ জুড়ে। ধর্ম নিরপেক্ষতার পোশাক পড়েও কেনো যে এত ধর্ম নিয়ে মাতামাতি কে জানে।

 যে ধর্ম দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের একমুঠো ভাত এর জন্য হাহাকার দেখেও কেমন মুখ ফিরিয়ে থাকে মুখ বুজে রাজনীতি করে যায় সবাই। যে ধর্ম কেমন অনায়াসেই একে অপরকে আঘাত হানে অবলীলায় সে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ হোক না কেনো। একতা আর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান দিয়েও কেমন করে যে সারা দেশ জুড়ে বিভেদের রাজনীতি করে কে জানে। তাহলে সেই ধর্মকে নিয়ে এত মাতামাতি আর হৈ চৈ হুল্লোড় এর কী আছে কে জানে। 

মহাকুম্ভ ও পঞ্চুর পুণ্য স্নান - অভিজিৎ বসু।
তেরো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...