সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খড়গপুরের ই গোপী

আজ সেই খড়গপুরের ইমানুয়েল গোপীর কথা। সেই খড়গপুরের ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টার গোপী। সেই একদম চুপচাপ নির্বিরোধী একজন সাংবাদিক গোপী। হৈ চৈ হুল্লোড় করা সাংবাদিক নয় সে একদমই। সেই কবে থেকেই ও খড়গপুরের ডন হয়ে মাথায় টুপি পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক চুপচাপ ফুলে ছাপ এর মতই। যাই হোক একদিকে তার কেবলের ব্যবসা আর অন্য দিকে তার সাংবাদিকতা নিয়ে সে ভালই আছে। আর এইসবের মাঝে, ওর তিরুপতির মন্দির চলে যাওয়া পূজো দিতে। আর লাড্ডু এনে অফিস পৌঁছে যাওয়া দাদা প্রসাদ বিতরণ করতে এসেছি আমি। একটু বাংলা মিডিয়াতে কাজ করেও বাংলা বলার অসুবিধা হলেও কোনোও অসুবিধা হয়না ওর। সেই গোপীর কথা আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়।


কিছু কিছু মানুষ থাকেন এমন ভাবেই নিজের মতো করেই নিজের চেনা ছন্দে বেঁচে থাকেন তারা একদম বিন্দাস হয়ে। কি করে গোপী খড়গপুর চলে এলো সেটা আমার জানা নেই আজ। ওর পরিবার হয়তো কাজের সূত্রে চলে এসেছিল বর্তমানের তেলেঙ্গানা থেকে, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এই বাংলায় বহুদিন, বহু বছর আগেই। সেই থেকেই ওদের বাংলায় চলেছে জীবন যাপন, কর্ম, ব্যবসা বাকি সব কিছুই। ও কেমন নিজেই এডজাস্ট করে গেছে এই বাংলায় হাসি মুখে ইডলি, ধোসা আর সম্বর বড়া খেয়ে আর খাইয়ে। সেই গোপীকে, খড়গপুরের বিখ্যাত গোপীকে পেলাম চাকরির সূত্রে পোদ্দার কোর্টের অফিসে। একদম বেশ শান্ত নির্বিরোধী একজন সাংবাদিক হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে চারিদিকে। 

সেই গোপীকে কোনোও খবরের জন্য ফোন করলেই বলতো দাদা দেখছি আমি কি হয়েছে। আমি উত্তেজিত খড়গপুরের শুট আউট এর খবর দেখে আর তখন ই গোপী ততটাই নিশ্চিন্তে, নিরাপদে, নির্ভয়ে বলছে দাদা দেখছি আমি। বলেই এক লহমায় সেই খবর পাঠিয়ে দিত। একদম উত্তেজনাহীন গলায় বলতো দাদা খবর পাঠালাম দাদা, একটু দেখে নিন আপনি সব পেলেন কী না। এটাই আমাদের সেই গোপী। যে গোপীর কথা আজ মনে পড়ে গেলো আমার বহুদিন পড়ে।

সেই রৌরকেল্লা বেড়াতে গেছি ট্রেন ধরে হাওড়া ফেরার সময় গোপীর ফোন এলো দাদা তুমি কোথায় কোন বগিতে আছো। আমি বললাম বি ফাইভ। খড়গপুর স্টেশনে গোপী টিফিন নিয়ে হাজির। ধোসা, বড়া, ইডলি আর একটা ফ্রুটির ঠাণ্ডা বোতল। আমি অবাক হলাম ওকে দেখে। বললো দাদা ট্রেন লেট আছে হাওড়া পৌঁছতে ট্রেন দেরী হবে একটু টিফিন করে নেবেন আপনারা। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ওর এই আতিথেয়তা ওর এই খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমি আজও মনে রেখেছি এতদিন পরেও। আর তাই আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় এই কথা লিখে ফেললাম আমি। যে কথা বলতে কোনোও লজ্জা নেই। গোপীর খবর পাঠাতে দেরি হলেও খাবার নিয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেরী হয়নি সেদিন কিন্তু একদমই। 

সেই হারিয়ে যাওয়া ২৪ এর পরিবারে আজ ভাঙন ধরেছে অনেক আগেই। ভেঙে গেছে সেই লাল মাটির গন্ধ মাখা জীবন এর নানা স্বাদের বর্ণময় উজ্জ্বল অভিজ্ঞতা। সেই চেনা অফিস, চেনা টুকরো মুখ আজ অনেকটাই অচেনা মুখে পরিণত হয়েছে। সেই অফিস চত্বরে এখন মোগল যুগের সম্রাট শাহজাহান থেকে শুরু করে নূরজাহান, আর নানা বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিকদের ভীড় উপচে পড়ছে। তবু এই সবের মাঝেও এতদিন পরেও কেমন উজ্জ্বল হয়ে আছে গোপীর মুখ। সেদিনের সেই ট্রেন করে ফেরার যাত্রাপথে ওর খড়গপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা। যা আমায় লিখতে আগ্রহী করলো এতদিন পরেও।

আসলে কিছু কিছু মানুষ এইভাবেই হাসিমুখে বেঁচে থাকতে ভালবাসে। আবার কিছু জন লোক দেখিয়ে, ক্ষমতা দেখিয়ে বেঁচে থাকতে চায়, এই সমাজে, এই সংসারে, এই পরিবারে, আর নানা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে। এদের সবার থেকেই একটু আলাদা সেটা গোপী বারবার বুঝিয়ে দেয় আমাদের নানা সময় আর নানা ঘটনায়। গোপী হয়তো দুর্দান্ত রিপোর্টার হতে পারেনি কোনওদিন। বসদের মনের মত হয়ে আকর্ষণ করতে পারেনি কোনোও ভাবেই। কিন্তু একজন ভালো মানুষ হয়ে ও টিকে আছে আমাদের এই ধূলি ধুসর স্বার্থপর সমাজে হাসিমুখে চুপ করে। ভালো থেকো তুমি ভাই গোপী। এইভাবেই হাসিমুখে মানুষের কাছের হয়ে থেকো তুমি। আমাদের সেই চেনা ইমানুয়েল গোপী হয়ে।

খড়গপুরের ই গোপী - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...