কিছু কিছু মানুষ শুধুই এই সমাজে এই সংসারে নিজেদের জন্য বাঁচে না। কিছু কিছু মানুষ শুধুই আত্মস্বার্থে তাঁরা দিন যাপন করে না। কিছু কিছু মানুষ মনে করে নিজের ভালো থাকা পূর্ণ হয় যদি অন্য কারুর জন্য কিছু করা যায় এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে। কেউ কেউ আবার জীবনের সব কিছুর মাঝেই কোলে তুলে নেয় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের হাসি মুখে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নিজের সাধ্যমতো সেই সব পিছিয়ে পড়া পরিবারদের কাছে। আসলে এই ধরনের মানুষের সংখ্যা খুবই কম দেখা যায় সমাজে। হাসিমুখে নিজেই ভালো থাকবো আর ভালোভাবে জীবন অতিবাহিত করবো হিসেব করে মেপে পা ফেলে সেই সংখ্যাই বেশি দেখা যায় আজকাল। আর এই সবের মাঝেই দুর্গাপুরের মিতালী দিদি বলি আবার রেগে না যান তিনি জানিনা কি বলবেন রেগে গিয়ে একটু আলাদা একটু অন্য রকম আর পাঁচ জনের থেকে। সেই প্রনাম জানাই লিখে কি বিপত্তি যে হয়েছিল একবার আমার।
আলাপ হয়েছিলো আমার দুর্গাপুরে সেই গোপালের বাড়ীতে গিয়ে। বিয়ের পাঁচ বছর পর গোপালের আর রূপার বাড়ীতে গিয়ে দেখা হলো এক সন্ধ্যায়। সেই মুখে ঝকঝকে সুন্দর হাসি। একদম সবাইকে নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় করে বেঁচে থাকা। প্রাণশক্তিতে ভরপুর একদম একজন মানুষ যে সবাইকে নিয়ে চলতে ভালোবাসে। বেশ ভালই লেগেছিল একদম গোটা বাড়িকে একাই মাতিয়ে রাখতে পারে সে হাসিমুখে যে কোনো সময়। তিন বোন আর দাদা বৌদির সংসারে মিতালি দি একটু অন্য ধরনের। শুধুই শাড়ি, গয়না, ব্যাংক ব্যালেন্স এই সবের মধ্য নিজেকে আটকে না রেখে একটু নিজের জীবনের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে সে নিজে নিজেই। আর পাঁচটা মেয়ের মতোই শুধুই একা বেঁচে থাকা নয় একটু অন্যদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করা। আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে সেই দুর্গাপুরের মিতালীর কথা।
এই অনাবিল হাসির মাঝেও লুকিয়ে আছে কঠিন সংগ্রাম আর লড়াই। নিজের শরীরের সাথে লড়াই। নিজের মনের সাথে লড়াই। যে লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই এই লেখা আমার। কিছুদিন আগেই শুনলাম আমি ওর দুটো হাঁটু অপারেশন হবে। মনে হলো এত কম বয়সে হাঁটুর এই সমস্যা নিয়ে আবার অপারেশন করা। যাই হোক ভাবলাম ভালই হলো কম বয়সে অপারেশন করিয়ে যদি সুস্থ হয়ে যায় ভালই হবে। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে গেল শুধু ওর দুটো পা এর জন্য। কিন্তু মানুষের মনের জোর থাকলে সব সম্ভব হয় সেটাই ও বুঝিয়ে দিল আমাদের। অপারেশন হলো ফোন করে খোঁজ খবর নিতাম আমি সোনালীদির কাছে বিরাটিতে। কেমন আছেন কত দিনে হাঁটতে পারবেন তিনি জানতাম আমি। ধীরে ধীরে সুস্থ হলেন দুর্গাপুর ফিরে এলেন তিনি হাসিমুখে। আবার শুরু করলেন সেই সোশ্যাল কাজ। যে কাজ তাঁর জীবন আর জীবনের একমাত্র বেঁচে থাকার রসদ।
আর তাই সেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল লিখবো কিছু তাঁকে নিয়ে। তাঁর জন্মদিন পার হয়ে গেছে যদিও দুদিন আগেই কিন্তু আজ মনে হলো কিছু লিখি আমি। সেই নিজের উদ্যমে আর মনের জোরে আজ আবার তিনি বেরিয়ে পড়েছেন একভাবেই মানুষের কাজ করতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। নানা ভাবে তাঁদের সাহায্য করতে যেটা করতে তাঁর ভাললাগে খুব। হয়তো আগের মতো সুস্থ নয় তাঁর দুই হাঁটু। তাতে আগের মত জোর পাবেন না আর হাঁটার সময় তিনি,তবু তিনি মনের জোরে বেড়িয়ে পড়ছেন রাস্তায় হাসিমুখে আর মনের জোরে। বেরিয়ে পড়ছেন রক্তদানের ক্যাম্পে, বেরিয়ে পড়ছেন শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে নানা কাজ করছেন হাসি মুখে। সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করে সবাইকে বলছেন সকলের হাত বাড়িয়ে দেবার কথা যাতে পিছিয়ে পড়া মানুষজন একটু সাহায্য পায় সে কথা।
হাজারও জীবনের ভীড়ে এমন উজ্জ্বল হয়েই মিশে আছেন আমাদের দুর্গাপুরের সেই সদা প্রাণবন্ত হাস্যময় মিতালীদি। সেই লাল, নীল, তিন্নি, বাবু, সেই পাশের বাড়ির লাহিড়ী বাবু আজ আর নেই তাঁর পরিবারের সব লোকজন আছেন ছেলে, বৌমা আর নাতি নাতনীরা আছে সবাই। সেই ছাদে উঠে সবাই মিলে আনন্দ করা। সেই ভবু দাদু চলে আসা। পিসি আজ আর নেই। সেই কতজন এর কথা যে মনে পড়ে গেলো আমার আজ এই লেখা লিখতে বসে। সেই দুর্গাপুরের চেনা রাস্তা, সেই লাইট হাউস দোকান, সেই ভিরিঙ্গী মা এর মন্দির, সেই দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার। সেই ভর্তি গমগমে বাড়িতে আজ লোক কমছে দ্রুত। তিন্নি কর্মসূত্রে বাইরে, বাবু পড়তে বাইরে। লাল আর নীল কোথায় জানিনা। সেই একসাথে হৈ চৈ হুল্লোড় করে থাকার দিন শেষ প্রায়। শুধুই দৌড়ে আর ছুটে চলার দিন। তবু এইসবের মাঝে মিতালী দিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন আপনি। সুস্থ থাকবেন আপনি।
দুর্গাপুরের মিতালী দি - অভিজিৎ বসু।
বাইশে ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন