সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক হেরে যাওয়া বন্ধুর শুভেচ্ছা

ম্যানেজিং এডিটর এর জন্মদিন। এডিটর এর জন্মদিন। রাগী এক ডেপুটি এডিটর এর জন্মদিন। স্টার আনন্দের অ্যাসাইনমেন্ট ডেস্ক থেকে বেরিয়ে কলকাতার কোর্ট এলাকায় চার আর ছয় মারা চোয়াল শক্ত করে লড়াই করা এক দাপুটে সাংবাদিকের জন্মদিন। খবর পাগল হায়দরাবাদ এর সেই ইটিভি নিউজ বাংলার প্রয়াত রামোজি রাওয়ের খুব প্রিয় সেই ধ্রুবর জন্মদিন। সেই এক সময়ের সবার জেলার মসীহা, জেলার সবার প্রিয় এক কো অর্ডিনেটর আর আমার বাংলা নামক জেলার এক মাত্র তিরিশ মিনিটের এক ভালোবাসার স্পর্শ মাখা বুলেটিনের একনিষ্ঠ এক ক্যাডার এর জন্মদিন। 


সেই সাংবাদিক জীবনের শুরুতে নানা স্বপ্ন দেখে সাদা বাড়ীর সিঁড়িতে পা দেওয়া তার। সেই মাত্র তিন হাজার টাকার সদ্য ট্রেনি রিপোর্টার হওয়া, জেলা থেকে আসা একটি ছেলের জন্মদিন। যাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ভীড় জমে যাবে আর কিছুক্ষণ পরেই গোটা দেওয়াল জুড়ে। আরো বেশি করেই নানা মানুষ, নানা জন, নানা বিশেষ ব্যক্তি ফুলেল শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দেবে তাঁকে। আর সেই শুভেচ্ছা গ্রহণ করে তিনি এগিয়ে যাবেন ধীরে ধীরে হাসি মুখে ঠিক নায়ক সিনেমার উত্তম কুমার এর মতই। আরও দূরে, অনেক দূরে এই বিশ্ব বাংলা ছেড়ে। আরও একটু ওপরে সবাইকে হাসি মুখে টা টা করে এগিয়ে যাবেন তিনি মেঘের কোলে ভেসে ভেসে নিজের অভিষ্ট লক্ষ্যে। 

ধাপে ধাপে কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা মানুষকে সফল হতে দেখে কার না ভাললাগে বলুন। কিন্তু এই সফলতার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে গভীর গোপন যন্ত্রণা আর নানা অকথিত বেদনা। অভিমান আর নানা ধরনের অব্যক্ত কিছু কথা। যা মাঝে মাঝেই মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে চুপটি করেই দিন যাপন করতে হয় একা একদম একাই। পিছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে এগিয়ে চলতে হয় বুক চিতিয়ে কেউ যেনো বুঝতে না পারে সেও এক রক্ত মাংসের হাসি আর কান্নার মানুষ। আর ঠিক রোবটের মতই যে কোনো বলের মোকাবিলা করতে হয় হেলমেট ছাড়াই। একদম হাসিমুখে চার আর ছয় মেরে। মাঠের বাইরে তখন হাত তালির ঝড় ওঠে। পিঠে তখন বসদের চাপড় পড়ে। কোনও রকমে চোখের জল সামলে নিয়ে আবার ব্যাট হাতে পরের বলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় হাসি মুখে, চোয়াল শক্ত করে। 

আর তাই আজ আমার মত অকিঞ্চিৎকর একজন, বিখ্যাত না হতে পারা একজন, কোনো মতে বেঁচে থাকা একটি বার বার হেরে যাওয়া মানুষের মনে হলো তাঁকে নিয়ে কিছু কথা লিখে ফেলার। সেই ম্যানেজিং এডিটরকে নিয়ে লেখার সাহস দেখানো উচিৎ নয় আমার মত একজন নগণ্য টোটো চালকের। তবু পারলাম না আমি লোভ সামলাতে। দীর্ঘ পঁচিশ বছরের এই দুজনের জীবনের নানা ওঠা আর নামা, গভীর গোপন ভালোবাসা আর নানা সুখ দুঃখের অভিজ্ঞতার কথা আমার সাদা জীবনের কালো কথায় লেখা থাক। যে কথা আমার জীবনের আঁকাবাঁকা অক্ষরে আঁকিবুঁকি ব্লগে লেখা থাক। নানা অকথিত কথা। নানা গভীর গোপন ভালোবাসার সম্পর্কের নিনড় বন্ধনের কথা। যে কথা শুধু মাত্র আমাদের দুজনের মধ্যেই বেঁচে থাক এই নিশুতি রাতে রাতচরা পাখির মতই। 

নানা জনের মাঝে ভীড় করে থাকা নানা মানুষের মাঝে একটু একা একাই হেঁটে বেড়ানো বিমানবাহী এই সাংবাদিককে নিয়ে কিছু কথা লিখে ফেলি আমি এই গভীর রাতে তাই। সেটা হয়তো কেউ কেউ পছন্দ করেন না। কেউ আবার বলেন এসব খুব বাড়াবাড়ি ব্যাপার। কিন্তু জীবনের এই শেষ প্রান্তে হাজির হয়ে, দূরে অনেক দূরে বাস করেও মনে হয় জীবনের এই দীর্ঘ পথে হাঁটতে হাঁটতে কার কথাই বা মনে করে এমন রাত দুপুরে লেখার ইচ্ছা হয় আমার আর। 

কার জন্য মনে হয় সত্যিই তো জীবনের এই কঠিন ঘাসহীন মাঠে খেলতে নেমে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে একজনকে অন্ততঃ পাশে পাবো যে কোনোও সময়। যে আমার কথায় রাগ করে, যে আমায় বোঝায়,যে আমায় এই বুড়ো বয়সেও নতুন ভাবে হাঁটতে আর চলতে শেখায়, আবার যখন সে বোঝে এই মানুষটাকে বুঝিয়ে কোনোও লাভ নেই তখন আপনমনে কষ্ট পায় আর আমায় সেটা বুঝতে দেয় না কিছুতেই। যে খুব দুরে থেকেও বলতে পারে দাদা, আমি দুটো ভাত খেতে পেলে তুমিও পাবে চিন্তা কোরো না তুমি।

 আর তাই তো আজ মনে পড়ে গেলো আমার এই মেরুদণ্ড সোজা করে চলা এই মানুষটির কথা। বাংলার রঞ্জি ট্রফিতে চান্স পেয়েও তাকে চক্রান্ত করে খেলতে না দেওয়ার কথা। সেই বাংলার মাঠে না খেলে ওয়াংখেড়ের মাঠে দিব্যি সুখেই ব্যাট করে আর রান করে স্কোর বোর্ডকে সচল রাখা এক মানুষের কথা। চারিদিকে সেই নানা ধরনের অনুগ্রহ আর রাজনৈতিক অনুগ্রহ নিয়ে বাঁচা মানুষের ভীড়ে সেসব কিছুই না নিয়ে হাসিমুখে সোজা হয়ে বেঁচে থাকা এক বন্ধুর জন্মদিনের দিন তাকে আমার ভালবাসা ও শুভেচ্ছা। ভালো থেকো তুমি। 

এক হেরে যাওয়া বন্ধুর শুভেচ্ছা - অভিজিৎ বসু।
চার ফেব্রুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...