কিছু কিছু মানুষ বেশ দিব্যি হাসি মুখেই বিন্দাস জীবন নিয়ে বেঁচে থাকে। হাজার দুঃখ, কষ্ট, সহ্য করেও পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে দু হাত তুলে বলতে পারে দেখ কেমন লাগে আমায়। আসলে এই ধরনের মানুষের সংখ্যা পরিযায়ী পাখির মত দ্রুতই কমছে আমাদের চারপাশে। চারিদিক জুড়ে এখন শুধুই হতাশা, না পাওয়ার বেদনা, আর দুঃখ দুঃখ মুখ,আর সুখের অনুভুতিকে ঢেকে রেখে দুঃখের ভাব করে বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করা।
ঠিক এসবের মাঝেই পুরুলিয়ার একটা মন ভালো করা ছবি দেখে মনে হলো দু চার কথা লিখলে কেমন হয়। আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। আমার এই এলোমেলো,এলেবেলে বিন্দাস জীবনের রাস্তায় তো অনেকের সাথেই দেখা হলো আমার এই দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে। অনেকেই আমায় বলেছেন আগেও ওর কথা লিখলে না তুমি একবার, ওর কথা লেখো। আসলে লেখার জন্য একটা ভূমিকা লাগে, ক্ষেত্র লাগে, পরিমন্ডল লাগে, তিথি আর নক্ষত্রের ঠিকঠাক একটা যোগ লাগে। তাই আর ওর কথা লেখা হয়নি আমার এতদিন ধরে।
আজ এই একটি ছবি, পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে দু হাত তুলে উচ্ছাসের মুখ আর ওর ছবি দেখে মনে হলো সত্যিই অসাধারণ এই জীবন আর জীবনের এই জলছবি। যে ছবির মাঝে লুকিয়ে থাকে অনেক যন্ত্রণা, ভালোবাসা, বিরহ, প্রেম,আবেগ আরও অনেক কিছুই। যে ছবি দেখে মনে মনে বলতে ইচ্ছা হয় সত্যিই আমিও যদি ওর মতো এমন নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম অমন একবুক কষ্ট, যন্ত্রণা আর ভালবাসা ও আবেগকে সঙ্গী করে কি ভালো যে হতো তাহলে। পারলাম কই, শুধু কে কি ভাববে, আর কে কি মনে করবে এই ভেবেই তো যৌবন কাটিয়ে বৃদ্ধ হয়ে গেলাম আমি আজ। তবু আজ মনে হয় আমার এই একটি ছবির সৌজন্যে বাপির কথা লিখে ফেলি আমি আজ আপনাদের কাছে।
হ্যাঁ, সেই দৌড়ে ক্যাসেট নিয়ে যাওয়া তাজা খবরের বাপি। সেই নিউজ টাইম এর ক্যামেরাম্যান বাপি। সেই ডিপি নিউজ এর বাপি। সেই শ্রীরামপুর প্রেস ক্লাবের বাপি। সেই বাটার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাপি। সেই যে কোনো নেতাকে মুখ বুজে না দাঁড়িয়ে থেকে উত্তর দেওয়া বাপি। সেই নানা মুডের বাপি। কখনও বিয়ের সাজে। কখনও কোর্ট প্যান্ট পরে। আবার কখনও একদম ছাদে মেপে পা ফেলে হাসি মুখে এগিয়ে চলা ফুলের বাহারি শোভাকে পাশ কাটিয়ে। ঠিক যেনো তৃণমূলের কালারবয় মদন মিত্রের মতই। কালারবয় ক্যামেরাম্যান আমাদের সেই চির পরিচিত বাপি। যার ভালো নাম শুভাশীষ হলেও সেটা আর মনে থাকে না কারুর আমাদের। মুখে হাসি নিয়েই ঘুরে বেড়ালো আর ছুটে বেড়িয়ে খবর করলো বহুদিন ধরেই। আজও ছুটে চলেছে ক্যামেরা নিয়ে, বাইক নিয়ে, হাতে বুম নিয়ে।খবরের সন্ধানে আর খাবারের সন্ধানে।
সত্যিই এই ছুটে বেড়ানোই তো জীবন। এই দৌড়ে বেড়ানোই তো একজন সাংবাদিক আর চিত্র সাংবাদিকের জীবন। যে জীবনে শুধুই দৌড়, দৌড় আর দৌড়। ওর সাথে আলাপ কবে মনে নেই আর। সেই তাপস আর বাপির অভিন্ন হৃদয় জুটি। সেই মিন্টে, বাপি আর ঝন্টের মিলেমিশে থাকা সংসার। সেই সব পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার আজ লিখতে বসে। সেই গলির মধ্য ওর ছোটো ঘর। সেই বারান্দায় ওকে ডাকতে গেলেই ওর মার বেরিয়ে আসা নিচু হয়ে। ওর মেয়ের আমাদের ইটিভির অফিসের পুজোয় আসা। সব যে আজও মনে পড়ে যায় আমার এতোদিন পরেও।
সেই সিঙ্গুরে লাঠি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাওয়া, সেই পুলিশ আর সাংবাদিকদের মধ্য ভাগ হয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া। প্রতিবাদে আমার আর ওর মুখর হওয়া বেশ ভালো ছিল কিন্তু সেই সব হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো। সেই ছোটো ওর মেয়ে আজ অনেক বড়ো হয়ে গেছে। মিন্টের মেয়ে এখন লেডি হয়ে সংসার করছে ছেলে নিয়ে হাসিমুখে। ঝন্টের ছেলের বিয়ে হলো সেদিন। বাপির মেয়েও কোনোদিন বিয়ে করে বাবাকে ছেড়ে দূরে চলে যাবে। এই বাবা আর মেয়ের জড়িয়ে থাকা সংসার। একে অপরকে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা সংসার একদিন ভেঙেই যাবে। মেয়েও চলে যাবে বিয়ে করে শশুরবাড়ি। তবু তো এই মেয়েকে আঁকড়ে নিয়েই বেঁচে থাকা ওর সেই কবে থেকে।
সেই ওর মার পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙা অপারেশন করে ঠিক করা। উদ্বিগ্ন মুখে মার জন্য চিন্তা করে দিনযাপন করা আর কষ্ট করে চিকিৎসা করা। আর এই সবের মাঝেও কেমন বিন্দাস চালে জীবন কাটিয়ে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখিয়ে দু হাত তুলে বলা দেখ কেমন লাগে আমায়। আর এই জন্য আমি ওর ফ্যান। আমি ওর ভক্ত। আমি ওর সেই হাসি মুখ দেখার জন্য অপেক্ষা করি। ওর সেই বিখ্যাত নানা কথা শুনতে বড়ই ভালবাসি।
দেখো দাদা দিন বদলে গেছে এখন আমাদেরও বদলে যেতে হবে। না হলে যে তুমি টিকে থাকতে পারবে না এই সমাজে, সংসারে, কোথাও। গিভ এন্ড টেক পলিসিতেই এখন চলছে গোটা জগৎ সংসার। আমি ওর কথা শুনি আর মনে মনে ভাবি সত্যিই তো ও ঠিক কথাই বলেছে একদম। একশো ভাগ ঠিক কথা বলেছে ও। এই দ্রুত বদলে যাওয়া দিনে আমারও বোধহয় উত্তেজিত হয়ে একটু বদলে যাওয়াই উচিত। কিন্তু পারি কই চেষ্টা তো করি অনেক, কিন্তু নিজেকে বদলে ফেলে বিন্দাস হয়ে দু হাত তুলে বলতে পারি না যে দেখ কেমন লাগে। আর এইজন্যই এই বুড়ো বয়সেও আমি ওকে বড়ই হিংসা করি। যদি ওর মতো একটু বাঁচতে পারতাম। দু হাত তুলে আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার এই এলোমেলো এলেবেলে জীবনটাও বদলে যেত। ভালো থেকো তুমি। এমন হাসি মুখে থাকো তুমি।
আমাদের বাপি - অভিজিৎ বসু।
চার ফেব্রুয়ারি দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন