সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

২৪ ঘন্টার দেবশ্রী

বহুদিন পর ওর সাথে কথা হলো আমার। একসময় ও তিনটে বারোটার শিফটে অফিস এলে তারপর আমি একটু নিচে চা খেতে যেতাম সেই পোদ্দার কোর্টের বিখ্যাত অফিসে। পরে সেই নিয়মটা বহাল ছিল সেক্টর ফাইভের মিডিয়া সিটিতেও। বেশ সুখের, মজার আর আনন্দের তিনজনের সংসার ছিল আর কি আমাদের সেই সময়। আমি, দেবশ্রী, শুভ্রজিৎ আইচ আর তারপরে এলো বিখ্যাত সেই বাংলা সাংবাদিকতার উজ্জ্বল এক নক্ষত্র সেই দীপ এক দাদার হাত ধরে এই বাংলা চ্যানেলের মিডিয়াতে তাঁর শুভ পদার্পণ।

 যে একজন দীপ জ্বেলে যাই সিনেমার পর্দায় অভিনয় করা হিট সফল নায়ক হয়ে উঠল ধীরে ধীরে নিজের কর্মদক্ষতায় আর নিজ গুণে। যাকগে সে গল্প অন্য কোনোদিন। বেশ সুখের মা মাটির আর মানুষের মিলিজুলি সংসার আমাদের এই চারজনের। ঝগড়া ঝাটি নয় বেশ ভালই লাগত কিন্তু সেই সময় স্বর্ণযুগের খবরের চ্যানেল না হলেও সেই ভেঙে পড়া প্রস্তর যুগের জমানায় সেই খবর যেখানে থেমে থাকে না সেই ২৪ ঘন্টা দৌড়ে বেড়ায় যে চ্যানেল সেখানে দৌড়ে, ছুটে গাল খেয়ে, কখনও আবার বাহবা কুড়িয়ে বেরিয়ে কাজ করতে আমাদের এই চারজনের। 

সেই দেবশ্রী গোস্বামীর সাথে কথা হলো আমার বহুদিন পরে আজ। সেই মাঝে ওর সাথে যোগাযোগ করা হয়নি আর এই মিডিয়া জীবন ছেড়ে দিয়ে বেশ কিছুদিন হলো। সেই দেবশ্রী আর স্বপনের সুখের সংসার। ওর ছেলের মোবাইল ফোনে ফোন এলেই ঝাঁপিয়ে পড়া। মা ব্যস্ত আছে বলে ফোন ধরে নেওয়া একবারে জোর করে। আর স্বপনের সেই এক অফিসে ২৪ ঘণ্টার কাজ ছেড়ে প্রতিদিন কাগজের ডেস্কের কাজে চলে যাওয়া গুটি গুটি পায়ে সেই ব্যাগ হাতে নিয়ে। পরে সেখান থেকে আজতকে ডেস্কের কাজে যোগ দেওয়া ওর। এইভাবেই বেশ ভালই দিন কেটে যাচ্ছিল আমাদের সুখের দিন।

দেবশ্রীর একদিন হাসিমুখে চব্বিশ ঘন্টা ছেড়ে রিপাবলিক বাংলা চ্যানেলে চলে যাওয়া। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে কিছুদিন এই সময় ডিজিটাল এ কাজ করা এইভাবেই তো চলে যাচ্ছিল ওর সুখের জীবন। বেশ হাসিখুশি জীবন যাপন করেই কেটে যাওয়া আমাদের সুখের অ্যাসাইনমেন্টের টেবিল আর সেই টেবিল এর কিছু জীবন এর গল্প। যে সব জীবনে কোনো সময় খবর ধরানো হয়নি বলে কাগজ ছুঁড়ে দেওয়া ছিল। চিৎকার চেঁচামেচি ছিল। কত জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো কাঁচের ঘরে খবর নিয়ে, টিআরপি নিয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে কত আলোচনা। কত সাদা কাগজে প্ল্যান প্রোগ্রাম হতো ভোটের আগে নানা বড়ো ইভেন্ট এর আগে। চা, ব্ল্যাক কফি আর মুড়ি মাখা খেতে খেতে।

বাংলা বন্ধের আগে যদিও বন্ধ রাজনীতিতে কিছুটা ভাটা পড়লো এই ঘাসফুলের জমানায়। কি করে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি খবর হবে তার পরিকল্পনা হতো অফিসের দাদাদের নিয়ে আর ছোটো বড়ো মেজো সেজো কর্তাদের নিয়ে গম্ভীর মুখে। আমরা যেখানে সব রাজাদের মাঝে বোড়ের দল কেমন চুপটি করে বসে থাকতাম মাসের শেষে দুটো টাকা বেতন পাবো বলে। যে বেতনের টাকায় আমার সংসার চলত, যে বেতনের টাকায় দেবশ্রী তার নিজের জন্যে না হলেও ওর বাচ্চার জন্য খরচ করতে পারতো একটু হাসি মুখে। সেই বেতন পেয়ে শুভ্রজিৎ আইচ যাকে আমি ফ ব বলতাম সেই গল্প পরে একদিন বলবো সেই মাটি আর আইচ এর সংসার চলতো বেশ ভালোভাবেই হিসেব করে। 

পরে সেই দীপ এসে সেই সুখের সংসারে একদিন যোগ দিলো আনন্দে আত্মহারা হয়ে দাদাদের হাত ধরে কলার তুলে। আর সেই ইডেন এর মাঠে খেলার খবর পেলেই কেমন কাঁচের ঘরে এডিটরের কাছে প্রবেশ করে হাসি মুখে ভি আই পি বক্সের টিকিট জোগাড় করে হাসি মুখে অ্যাসাইনমেন্টের ডেস্কে ফিরে আসতো মুখে হাসি নিয়ে আর বুক ফুলিয়ে। বেশ ভালই লাগত আমার ওকে দেখে। মনে মনে ভাবতাম এই ছেলে লম্বা রেসের ঘোড়া অনেকদূর যাবে কিন্তু একদিন। সেটাই আজ হয়েছে দুর থেকে দেখতে পাই ওকে। 

সেই দেবশ্রী আজ ফোন করলো কথা হলো। যে সেই ওর ট্রেন একটু লেট হলেই যে আমায় ফোন করে বলতো দাদা আমি আসছি তুমি একটু দেখো দাদা। আমি বলতাম নো চিন্তা। উল্টোডাঙ্গা থেকে দুপুরে অটো না পেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে দৌড়ে অফিস ঢুকতো কিছুটা লজ্জা পেয়ে। আর অফিসের নানা কোণে বসে থাকা নানা মাপের দাদারা সেটা দেখে ওকে জরিপ করতো কড়া নজরে চশমার ফাঁক থেকে। সত্যিই ঠিক যেনো একটা জেলখানার বন্দী তার কুঠুরিতে প্রবেশ করতে একটু লেট করেছে আর কী। এতে খুব যে পিছিয়ে পড়তো চ্যানেল টিআরপিতে সেটা কিন্তু নয়। ওই নজরদারির মধ্যে দিয়েই সেই সব নানা মাপের খবরের কর্তাদের বেঁচে থাকার চেষ্টা করা আর কী এই দ্রুত গতিতে ছুটে চলা খবরের দুনিয়ার জীবনে। মোটা মাস মাইনে, বছরের শেষে মোটা ইনসেনটিভ, আরও কত কী যে জুটে যেতো তাঁদের কে জানে।

সত্যিই অসাধারণ এই মিডিয়া জীবন বলতে আর ইচ্ছা হয় না আমার কিছুতেই। এই দীর্ঘ সময়ে দীর্ঘদিনের ঘেরাটোপে বন্দী জীবন যে খুব ভালো ছিল সেটাও নয় কিন্তু একদমই। শুধু একটা জীবনে কিছুটা স্থায়িত্ব ছিল সেই সময়ে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছিল, পকেট থেকে বের করে দু দশ টাকার চা খাওয়া যেত আর খাওয়ানো যেতো কাউকে কাউকে। এখন যেমন সেটার জন্য আমার মেয়ের কাছে হাত পেতে বলতে হয় পাঁচ টাকা হবে চা খাবো একটু। মেয়ে বেশ কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে আমায়। ওর ব্যাগ থেকে মিষ্টি হেসে টাকা বের করে দিয়ে বলে এই নাও তুমি। খালি চা খাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো সাইকেল করে। 

সত্যিই আজ দেবশ্রীর সাথে ফোনে যোগাযোগ হয়ে মনটা কেমন বড়ো ভালো হয়ে গেলো আমার। কেমন যেনো সেই স্মৃতির ঝাঁপি থেকে বেরিয়ে এলো নানা ধরনের সব ঘটনার মিষ্টি মধুর সুন্দর কিছু ছবি। সেই অনুতোষ এর দ্রুত পায়ে গজগজ করতে করতে বুলেটিনের জন্য পিসিআর এর দিকে চলে যাওয়া খুব রেগে গিয়ে, কিন্তু বুলেটিন শেষ করে সেই রাগ কমিয়ে আবার কথা বলা হাসি মুখে অ্যাসাইনমেন্টের লোক দের সাথে কাছে এসে। কারণ একটা খবর একটু দিতে দেরী হয়েছে আমাদের তাই রাগ ওর আর সেই খবর বুলেটিনের শেষে দেখিয়ে দিয়ে রাগ কমিয়ে হেসে বলা যা টেনশন হয় না দেখালে তো আবার কেনো দেখানো গেলনা বলে কথা হবে। তোমরা কিছু মনে কোরো না কিন্তু। আর একটু দূরে বসে তিন্নির মিটিমিটি হাসি। সত্যিই বড্ড মিস করি আমি দিনগুলো। 


সেই বিখ্যাত অর্পিতা, কোয়েল, সঞ্চিতা, মিমি, অনুসুয়া, কতজন যে ছিল সেই সময় সব বিখ্যাত সুন্দর মুখের সমাহার। যাঁদের সাথে একসাথে কাজ করেছি বলে কিছুটা গর্ব হয় আজ আমার। সেই দিব্যেন্দু আর শুভ্রাংশু, সেই ভাস্কর দা। সেই ডেস্কের প্রদীপ, সোমনাথ আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। সেই দেবরাজ, সেই বিখ্যাত সৌম্য সিনহা, দেবশ্রীর বর স্বপন, প্রবাল আর কুশল। সেই ব্রেকিং লেখা অজয় দা, জয়ন্ত আর সেই বেঁটে করে কি নাম বেশ পড়ে সিএন নিউজে দেখলাম তাঁকে ব্রেকিং লিখতে বসে আছেন তিনি বিরাটির অফিসে। নামটা মনে পড়লে লিখবো আমি কারুর থেকে জেনে নিয়ে। খুব সম্ভবত কৃষ্ণদা হবেন মনে হয় তিনি। 

সেই রিসেপশন এর গম্ভীর মুখের মেয়েটি। সেই লেস্টার। সেই ফ্যাসিলিটির দেবু, দীপক, সুজিত এর সুখের সংসার। সেই রাইডার দেবু আর জয়। সেই হাসি মুখের অফিসের সর্ব সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত ঠাণ্ডা মাথার মুন্না, টাকার হিসেব সামলানো মহাদেব আর ওমং ঝুনঝুন ওয়ালার ঘর। সেই ছবি কাটার লুপ আর বাইট কাটার সেই বিখ্যাত সোমনাথ কর যিনি অজয় করের নাতি তার সুখের অক্ষত হাসির সংসার। যে সংসারে মার্চ মাস এলে অন্য জায়গার লোকদের বুক দুরুদুরু হলেও ওদের কিছুই হতো না। সেই নরেন, সৌরভ , রতন, অনিল দা, শীর্ষেন্দু আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। আর সেই মলয় দা, আর টেকনিকাল এর লোকজন ছিল সব সেই বিখ্যাত সিতাংশু। সেই সাউন্ড এর অভিজিৎ দা। আর ক্যামেরা রুমের দেবু দা। আকবর দা। আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। বেশ ভালো লাগতো কিন্তু এদের সাথে দল বেঁধে একসাথে কাজ করতে সেই সময় হৈ হৈ করে। 

কতজন এর সেই সুখের আর হাসিমুখের চেনা সংসার।যে সংসার গুলো কেমন অনিশ্চিত হয়ে গেলো ধীরে ধীরে। যে সুখের মিডিয়ার সংসার আর নেই বর্তমানে এই মা মাটি আর মানুষের আমলে। দেবশ্রী এখন মিডিয়ার কাজে তেমন উৎসাহ পায়না আর একদমই। সেই সব এক দাদাদের প্রণাম করে আর পায়ে ধরে ঘুরে বেড়ানো আর ভালো লাগে না ওর একদম। তাই অন্য কাজে যোগ দিয়ে বেশ ভালই আছে ও বর্তমানে। 

সেই চেনা দাদাদের অচেনা ছবি দেখে ও বোধহয় কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে আসলে কিছুই যে সেই এতদিন একসাথে কাজ করেও ঠিক ছিল না কোনও সম্পর্কই। গড়ে ওঠেনি মিষ্টি মধুর সম্পর্ক কোনওদিন। কেমন দূরের সহকর্মী হয়েই বেঁচে থাকা আর কী ওর, আমার সবার। অফিস এর ঘেরাটোপে বন্দী সম্পর্ক স্থাপন হয়না কোনোদিন, সেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে না কোনোভাবেই কোনওদিন আর কোনসময়। 

শুধু ওই পাঁচ টাকার চা আর দশ টাকার মুড়িতেই আটকে থাকে একফালি বাঁকা চাঁদের হাসির মতোই সেই সব নকল কাঁচের চুড়ি পড়া সম্পর্ক। তবু এসবের মাঝেও ওর ফোন আমায় বেশ আনন্দ দিলো আজ। বেশ ভালো কিছু পুরোনো দিনের স্মৃতি কথা মনে করিয়ে দিলো ওর এই ফোন। 

আর তাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে আমি লিখে ফেললাম আমি কিছু ফেলে আসা দিনের কথা। সেই আমার মিডিয়ার জীবনের কথা। যা একদিন আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়া ছিল, অর্থের অভাবে সংসার চালানোর চিন্তা ভাবনা ছিলোনা সেই বাংলা মিডিয়া কেমন করে যেন বদলে গেলো। সেই মিডিয়ার চেনা মানুষ গুলোও কেমন করে যেন কর্পোরেট স্টাইলে বদলে গেলো। শুধু তার মাঝেই দেবশ্রীর ফোন কিছু কথা আমায় মনে করিয়ে দিলো আমাদের ফেলে আসা দিনের মিষ্টি মধুর সম্পর্কের কথা। ভালো থেকো তুমি দেবশ্রী। 

২৪ ঘণ্টার দেবশ্রী - অভিজিৎ বসু।
বারো ফেব্রুয়ারী, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...