সেই আগের মেজাজ আর আগের মতই হুটার বাজিয়ে ছুটে বেড়ানো এদিক থেকে ওদিক। যদিও হাঁটার গতি একটু কম আর কী তাঁর আগের থেকে। শরীর কিছুটা তাঁর ভেঙেছে এই দীর্ঘ জেল জীবন যাপনের পর। তবে তাঁকে ঘিরে আবারও নানা মানুষের ভীড় আর উচ্ছাস দেখা যাচ্ছে। বীরভূমের জেলা রাজনীতির মানচিত্রে আবার তিনি ধীরে ধীরে ফের স্ব মহিমায় ভাস্বর আর উজ্জ্বল হচ্ছেন হাজার বাধা বিপত্তি কাটিয়ে ঠিক নিজের মত করেই নিজের স্টাইলে।
মহম্মদ বাজার ব্লক অফিস। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে। সুন্দর সাজানো গোছানো গাছে ঘেরা বিডিও অফিসে পলাশ ফুলের টুপটাপ খসে পড়া গাছ থেকে। আমার এইসব দেখতে বেশ ভালই লাগে ঘুরে বেরিয়ে হেঁটে চলে। চুপচাপ বসে থাকতে আর এমন সুন্দর দৃশ্য দেখতে বেশ মন্দ লাগে না আর কি। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো গ্রামের লোকদের এই ব্লক অফিসে। নানা কাজে কেউ কাজ মিটিয়ে ঘরে ফেরে আনন্দে, কেউ আবার সেটাও পারেনা একদম বিফল হয়ে ঘরে ফেরা।
ঘন ঘনও সরকারী গাড়ীর আনাগোনা আর মিটিং এর মাধ্যমে সরকারি কাজে গতি আনার চেষ্টা করা। দেউচার কয়লা খনি নিয়ে এখন সব থেকে বেশি ব্যস্ততা এই মহম্মদ বাজার ব্লকের বিডিও অফিসে। কোনোভাবেই এই বিশাল কাজে গাফিলতি করা চলবে না কারুর। যে কোনোও অসুবিধা হলেই সেটা দ্রুত মিটিয়ে নিতে হবে আলোচনা করে কোনও খামতি না রেখে আর কোনো রাজনীতি না করে। ঠিক যেমন আজ থেকে কুড়ি বছর আগের সিঙ্গুর বিডিও অফিসে এমন ব্যস্ততা দেখা যেত টাটাদের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার সময়।
আর তাই প্রায় প্রতিদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দেউচা প্রকল্পের কাজকে বাস্তবায়িত করতে ছুটে বেড়াচ্ছেন তাঁর নিজের লোক সেই প্রিয় কেষ্ট মণ্ডল, সেই অনুব্রত মণ্ডল। সেই বীরভূমের বীর সন্তান। সেই বীরভূমের রাজনীতির ক্ষমতার প্রধান নিয়ন্ত্রক। মিটিং করছেন জেলার নেতাদের সাথে, জেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে। যাতে কোনোও অসুবিধা না হয় তাঁর খবর নিচ্ছেন। আর জেলার দ্বিখণ্ডিত ক্ষমতার রাশকে নিজের হাতে রাখতে চাইছেন তিনি নিজেই। বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু এটা। হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতার রাসকে নিজের হাতে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করা।
সেই কলকাতার ২৪ ঘণ্টার অফিসে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তাঁকে নিজের ফর্মে দেখা একদম ঠিক যেনো বিরাট কোহলি স্টাইলে খুব কাছ থেকেই। একেবারেই সামনে থেকে ছক্কা মারতে দেখা, বল না দেখেই ব্যাট চালিয়ে হাসি মুখে ছয় মারা। আর মনে মনে বলা দেখ কেমন লাগে। আমার নাম কেষ্ট মণ্ডল। আর এতদিন পর ক্রিজে নেমে বল দেখে, কে কোথায় ফিল্ডিং করছে সেটা দেখে নিয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাট করা। যাতে কোনোও ভুলচুক না হয় আর নিজের লোকদের পাতা ফাঁদে আটকা না পড়েন তিনি। হঠাৎ করেই আউট হয়ে না যান। বেশ ভালই লাগলো আমার কিন্তু এতদিন পর তাঁকে একদম কাছ থেকে দেখে।
বদলে যাচ্ছে সময়, বদলে যাচ্ছে জেলার নানা ধরনের রাজনৈতিক চিত্রও। বদলে যাচ্ছে নানা সম্পর্কের সমীকরণ আর কঠিন সহজ সরল সম্পর্কের নানা গভীর রসায়ন। এই সবের মাঝে নানা বদলে যাওয়ার মাঝেই ফের স্বমহিমায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই জেলা জুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি একা একাই তাঁর নিজের লোকদের নিয়ে নিজের মতো করেই। মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে। সেই মুখ্যমন্ত্রীর ভরসার ভালোবাসার আর খুব কাছের মানুষ কেষ্ট মণ্ডল সেই অনুব্রত মণ্ডল। সেই জেলার সব কাজেই হাসিমুখে নিদান দেওয়া বীরভূমের কেষ্ট দা। যিনি আজ নিজেও অনেকটাই বদলে গেছেন স্বেচ্ছায় আর স্বমহিমায়।
এক বদলে যাওয়া নেতার গল্প - অভিজিৎ বসু।
উনিশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন