কোথায় আমাদের দুজনের প্রথম দেখা হলো আমাদের মনেই নেই আজ আর। সেই কবে ওর সাথে আমার আলাপ হলো কতদিন কত বছর আগে সেই কথাও মনে নেই আজ আর। শুধু মনে আছে সেই রাখী আজ যে বিখ্যাত সাংবাদিক বর্তমানে নিজের ইউটিউব চ্যানেল আর কাগজ করেছে, সেই সৌমেন খবরের জগতে আছে কিনা জানিনা আমি আজ,আর দীপান্বিতার বা সোমার আমাদের সেই রিষড়ার বাড়ীতে যাওয়া সেই কতদিন আগের ঘটনা হবে সেটা।
আজ থেকে প্রায় ছাব্বিশ বা পঁচিশ বছর আগের ঘটনা হবে। সেই টালির ঘরে এক দিন মজুর হয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো ছন্নছাড়া এক সাংবাদিক এর সাথে আলাপ করতে যাওয়া দুই সুন্দরী কন্যা আর ধোপদুরস্ত সাংবাদিক সৌমেন এর। একটি কাগজ বের হচ্ছে সেই কাগজের জন্যে কিছু সাহায্য করতে হবে এই আশায় ওদের আমার কাছে আশা তিনজনের। আমি বাড়ীতে না থাকায় আমার মার ওদের বসতে দেওয়া। আর নজর রাখা কি জন্যে এদের আগমন হয়েছে তার ছেলের কাছে সেই কথা ভেবে চিন্তা করা। সাথে সহকারী গোবিন্দ হলো মার বিশ্বস্ত অনুচর।
যাই হোক ঘুরে ঘুরে সাইকেল নিয়ে সেই কালো একটা ঢোলা প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে এসে বসে পড়া হাসিমুখে ওদের পাশে ঘরের মেঝেতে। ওদের তিনজনকে দেখে কে এলোরে বাবা বলে অবাক হয়ে যাওয়া সবার। কিন্তু সৌমেন দত্ত আমার পরিচিত বন্ধু হলেও খুব যে কাছের বন্ধু তেমন নয় আর কি সেই সময়। কিন্তু ও যখন নিয়ে এসেছে এদের কথা তো কিছু বলতেই হয়। সেই ১৯৯৯ সালের ঘটনা হবে পূজোর আগে বা পরে ওদের তিনজনের যাওয়া আমার রিষড়ার বাড়িতে।
আমার একটু কম ভারিক্কি ভাব থাকলেও গম্ভীর মুখে বলা কাগজে কে আর বিজ্ঞাপন দেবে আপনাদের বলুন। আর সেটা শুনে দুই কন্যার এক সুন্দরী কর্মরত কন্যা না বলে রাগী মহিলা তো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। যাই হোক অন্যজন একটু চুপ করেই বসে ছিল সেই সময় মাথা নিচু করে। সেই ওদের কথা হওয়া এক উঠতি তারকা হয়ে ওঠা সম্ভাবনাময় এক সাংবাদিকের সাথে আলাপ হওয়া দুই সুন্দরী মহিলা সাংবাদিক এর আর সৌমেন এর। আজ ওর জন্মদিনের দিন সেই কথাই মনে পড়ে গেল আমার হঠাৎ করেই এই রাত দুপুরে।
সেই আমি আজ আর পঁয়ত্রিশ বছর মিডিয়ার কাজ করে সাংবাদিক নই। সেই দুই কন্যার একজন এখন আমার পাশে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে অকাতরে বেকার স্বামীর চিন্তায় হাই প্রেসার নিয়ে। সংসারের চাপে ক্লান্ত হয়ে। আর অন্য জন শ্রীরামপুরে তার সংসার সামলে খবর করতে ব্যস্ত থাকে সবসময়। আর সেই অভি শোন এটা চল দুজন মিলে করি আমি তুই ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে মার্কেটিং আমি দেখে নেবো তোর চিন্তা নেই বলা সৌমেন এখন আরামবাগে থাকে বর্তমানে পরিবার নিয়ে।
সেই রাখীদের বাড়ীর অন্ধকার রাস্তা, সেই অঙ্কিত ভবন, সেই খটির বাজার থেকে সৌমেন এর দৌড়ে এসে ট্রেন ধরা। স্টেশনে ওর জন্যে অপেক্ষা করা এমন কত কথা যে মনে পড়ে যায় আমার এতদিন পড়ে এই গভীর রাতে। মাঝে মাঝেই ওর ফোন চলে আসে অভি কি করছিস তুই। বেশ ভালই কথা বলতে পারা আর ওর গম্ভীর মুখ দেখে অনেকেই ভাবে বেশ কেউকেটা বটে। যে কেউকেটা আমি আজও ওর মতো হতেই পারলাম না এতদিন খবর করেও। সেই ওর বিখ্যাত স্টাইলে কথা বলা, ওর সুন্দর সেজেগুজে বেরিয়ে পড়া খিদে পেটে চেপে রেখে হাসি মুখে একদম ঠিক সিনেমার পর্দায় নায়কের মত। যেটা যে কোনোও মানুষের পক্ষে রপ্ত করে অভিনয় করা বেশ কষ্টের। কিন্তু ও কেমন কষ্ট করে আর মুখে হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়াতো সাংবাদিক হয়ে এদিক ওদিক কে জানে।
আজ ওর জন্মদিন এর দিন আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই সৌমেন এর কথা সেই সৌমেন দত্তর কথা লিখতে ইচ্ছা হলো আমার। সেই ওর মাধ্যমে আলাপ হয়ে দুজন অসম পরিবেশে মানুষ হওয়া দুটি ভিন্ন মেরুর মানুষের কাছে চলে আসা। প্রথমে কেউ কাউকে দেখতে না পেয়ে একে অপরকে গাল মন্দ করা। তারপর কেমন করে যে এতগুলো বছর একসাথে কাটিয়ে দিলাম আমরা দুজনে কে জানে। সেই শ্রীরামপুরে প্রেস ক্লাবের মঞ্চে উপস্থিত বিখ্যাত সাংবাদিক রাখীর মুখে উজ্জ্বল হাসি ওর হাত থেকে অন্য সাংবাদিকদের সংবর্ধনা পাওয়া দেখে বেশ ভালই লাগে আমার এই এতদিন পড়েও।
সেই দুই কন্যার সংসারে আজ অনেক ঝক্কি আর ঝামেলা। কন্যা থেকে গিন্নী হয়েছে কবেই তারা দুজন বদলে গেছে চেহারা আর তাদের সেই ফেলে আসা দিনের ছবিও। সৌমেন আজও সেই একভাবেই হিরো হয়েই বেঁচে আছে কেমন হাসি মুখে ঘুরে বেড়িয়ে। আজ ওর জন্মদিনের দিন পুরোনো কিছু কথা মনে পড়ে গেলো আমার। জানিনা আমি রাখীর বাবা মা কেমন আছেন। সোমার বাবা নেই যিনি মেয়ের এই খারাপ পছন্দের রিপোর্টার পাত্রকে বিয়ে করাকে একমাত্র সমর্থন করেছিলেন সেই সময়। বাকি কেউ আর এই কম টাকার কম বেতনে কাজ করা রোগা পটকা চেহারার সাংবাদিককে কেউ আর পছন্দ করেনি সেই সময়। আজ সোমার মা অসুস্থ।
আমাদের মেয়ে লেডি বার্ড হয়ে জাপানী ভাষা নিয়ে পড়া করছে বর্তমানে বোলপুরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে আমায় বলে মাকে কি তুমি আগে বলেছিলে, Kimi o aishite iru এটা জাপানী ভাষায় বলা যার ইংরাজিতে মানে হলো I Love you বা আমি তোমায় ভালবাসি। দেখো এটা আবার এই বুড়ো বয়সে অন্য কাউকে বলে ফেলো না তুমি কিমি ও আশিতে রু। তাহলে কিন্তু মারধর খাবে তুমি। আমি মনে মনে বলি পাগল নাকি আর বলি।
সত্যিই আজ ওর জন্মদিনের দিন কত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে এই সব ফেলে আসা দিনের কথা। আজ দু বছর হলো আমার মা নেই। সেই অঙ্কিত ভবনের সাজানো জীবনে সাজানো সংসারে এখন ধুলোর আস্তরণ জমেছে কবেই। বিবর্ণ স্মৃতি আর বিবর্ণ বন্ধুত্ব বেঁচে আছে কোনরকমে আজ এতদিন পরেও। সেই সৌমেন এর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে আমার মনে পড়ে গেলো কিছু কথা। আমার এই এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস টোটো চালকের জীবনে চলে এলো সেই সৌমেন দত্ত। আমাদের সবার সেই হাসি মুখের সৌমেন। ভালো থাকিস ভাই। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম।
সৌমেন এর জন্মদিনে শুভেচ্ছা - অভিজিৎ বসু।
সতেরো ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন