সেই মহাকরণে চেয়ার নড়ছে বা নিজেই চেয়ার নাড়িয়ে দিয়ে এটা দেখিয়ে মহাকরণে ভূতের উপদ্রব বেড়ে গেছে খবর করে চারিদিকে হৈ চৈ আর হুল্লোড় ফেলে দেওয়া সেই জয়। সেই পায়রার উপদ্রবে মহাকরণে কর্মীদের কাজের অসুবিধা হচ্ছে এটা নিয়ে স্টোরি করা আর ক্যামেরাম্যানকে সারাদিন পায়রার ছবি তুলতে বলা জয়। আর সেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের উল্টোদিকে মহাকরণে পুলিশের নাচ এর ছবি করে দেখানো আর মহাকরণে পুলিশের ঘুম ছুটিয়ে দেওয়া সেই বিখ্যাত এক দাপুটে সাংবাদিক জয়। আবার সেই বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনে হাজির হয়ে হাসি হাসি মুখের ছবি পোস্ট করা বিখ্যাত সাংবাদিক জয়।
সত্যিই অসাধারণ এই সাংবাদিক জীবন জয় এর। যে বর্ণময় আর কর্মময় উজ্জ্বল জীবনের সাথে অল্প কিছুদিন সাক্ষী ছিলাম আমিও। আর তাই আজ ওর এই ছবি দেখে মনে হলো কিছু লিখি আমি। এই বিখ্যাত জয়কে তো চিনি আমি কিছুদিন এর জন্য হলেও। বেশ কিছুদিন মহাকরণের বারান্দায় ঘুরে বেড়াবার সৌভাগ্য হয়েছিল আমারও অল্প কিছুদিন। আর তাই আজ মনে হলো কিছু কথা লিখে ফেলি আমি।
সেই আমার শনি গ্রহ নিয়ে লেখা পড়ে ওর খুব ভালো লেগেছিল। আর তাই ভালো ইনফরমেশন দিয়েছো বলে আমায় লেখার প্রশংসা করা জয়। এদিক ওদিক মহাকরণে ঘুরে এই ঘর আর ওই ঘর ঘুরে সারাদিন চরকির মত পাক খেয়ে নানা খবর সংগ্রহ করতে ওর জুড়ি নেই একদম। পকেটে হাত দিয়ে খবর পকেটে ভরে অপেক্ষা করা। যদিও ওর কাছে খবর এলে বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারতো না সে কোনোদিনই। যেখানে অন্য বড়ো হাউসের সাংবাদিকরা মুখে হাসি নিয়ে আর পকেটে খবর নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও কাউকে কিছুই বলেনা সেখানে জয় অনেকটাই অন্য ধরনের এক সাংবাদিক। তাঁর চ্যানেলে খবর ব্রেক হয়ে গেলে তার সেই খবর অন্যদের বিলি করতে কোনো অসুবিধা নেই তাঁর। যেটা অন্যদের ক্ষেত্রে সচরাচর দেখাই যায়না একদম।
একটু বড় রিপোর্টারদের সেই খবরের সন্ধান দিয়ে দিতে তার আপত্তি ছিল না কোনও সময় কোনো দিন। আর তাই মহাকরণের নানা জনের মাঝে জয় বেশ ভালই কাজ করতো সেই সময়। জয়, তুহিন, সুমন, কল্লোল, তরুণ দা, রূপম দা, অংশু দা, লাহিড়ী দা, রঞ্জন দা, জগন্নাথ বর্তমানে বিজেপির নেতা, সেই প্রভাত দা, শ্যামলেন্দু দা, অত্রি, অশোক সেনগুপ্ত, সুনন্দ দা, সব আরও কতজন যে ছিল সেই সময় মহাকরণের বিটে কাজ করতো বলে বা সেই নাম লিখে শেষ হবে না কারুর নাম বাদ গেলে সেটা ইচ্ছাকৃত নয় কিন্তু একদম। বড়ো ব্র্যান্ডের রিপোর্টার না হলেও নানা জনের সাথে, নানা অফিসার এর সাথে ওর পরিচয় আর জনসংযোগ ওকে নানা খবর পেতে সাহায্য করত সেই সময় কারণ মনে হয় ওর ক্যামেরাম্যান হয়ে বিভিন্ন খবরের সোর্স জেনে যাওয়ার জন্যে। আর তার সুফল পেতে তাঁর কোনোও অসুবিধা হতো না কাজের সময়ে নানা সময়ে।
সেই ওর সুন্দর পরিচিত মুখ, বিগলিত হাসি মুখ, বিনয় ঝরে পড়ছে তাঁর। একদম একটা ভালো জনসংযোগ করা সাংবাদিক যার জন্য সে অন্যদের থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে যেতো এই মহাকরণে। আর তাই সেটাকে মাথায় রেখেই একের পর এক চ্যানেল বদলেও কাজের কোনো অসুবিধা হয় নি তার কোনওদিন। দিব্যি মেনে ও মানিয়ে নিয়েছে সে হাসিমুখে যে কাজটা আমি করতে পারিনি কোনোদিন। সেই রাখী বন্ধনের দিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে রাখী পড়ে সেই ছবিকে নিজের হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিতে রেখে দেওয়া এটাও বেশ ভালো লাগে আমার।
বেশ ভালই কাটত সেই সময় দিনগুলো কিন্তু আমাদের। সেই খবর নিয়ে আলোচনা আর দৌড়দৌড়ি শীতের দুপুরে। মহাকরণে যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে ক্যামেরা আর বুম নিয়ে প্রবেশ করা যেতো সেই সময় হৈ হৈ করে। এত নজরদারি আর কড়াকড়ির ঘেরাটোপে বন্দী হয়নি এই মহাকরণের চারপাশ। আর তাই বোধহয় সেই পুলিশের নাচের ছবি মোবাইল ক্যামেরায় জয় তুলেছিল অনায়াসে। এখন কি আর সেটা করা সম্ভব কিছুতেই নয় মনে হয়।
সত্যিই দেখতে দেখতে মহাকরণের সাংবাদিকতার জীবন আর সেই দিনগুলো কেমন বদলে গেছে অনেকটাই। মহাকরণ সরে চলে গেছে নবান্নে বহুদিন আগেই। সেই বিখ্যাত লালবাড়ী এখন অনেক কিছুই হারিয়ে নতুন করে ফের তৈরি হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে লালবাড়ির ইতিহাস। তবে সেই মহাকরণের ক্যান্টিন, মহাকরণের প্রেস কর্নার, সেই মেন গেট, সেই কোন গাড়ীকে মেন গেটে ডাকা হচ্ছে মাইকে গাড়ীর নম্বর বলে দেওয়া, আর বিখ্যাত কোনোও ব্যক্তির গাড়ী হলে দৌড়ে নিচে চলে যাওয়া সাংবাদিকদের। যদি কোনোও খবর মেলে এই আশায়।
সেই সাংবাদিকদের তৎপরতা সবকিছুই আজ হারিয়ে গেছে অনেকটাই। আজকাল রিপোর্টারদের পায়ে এখন অনেকটাই বেড়ি পড়ে গেছে। তবু সেই রিপোর্টার জয় এর কথা লিখতে বসে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় মনে পড়ে গেলো নানা হারিয়ে যাওয়া কথা। সেই মিষ্টি হাসি মাখা মুখের জয়। সেই এক্সক্লুসিভ খবর করে মৃদু গোঁফের ফাঁকে হাসি মুখে ঘুরে বেড়ানো আর জল খেতে এসে সবাইকে একবার আলগোছে পর্যবেক্ষণ করে যাওয়া। কে কি বলছে কোনোও প্রশংসা করে কি না কেউ তার দিকে নজর রাখা। আর কেউ যদি বলে এই খবরটা আমি পাইনি একটু দেবে, তাহলেই পকেট থেকে নোটবুক বের করে বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গড় গড় করে বলে দেওয়া এটাই আমাদের সেই জয়। আর তারপরেই পরের খবরের সন্ধানে ওর হারিয়ে যাওয়া। ভালো থেকো তুমি জয়। এইভাবেই হাসিমুখে কাজ করে যাও।
মহাকরণের বর্ণময় জয় - অভিজিৎ বসু।
ছয় ফেব্রুয়ারি দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন