সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মোমো কথা

যে খাবারের জন্মস্থান ছিল নেপাল ও তিব্বতের পাহাড় এলাকায়।সেই খাবারই পাহাড় থেকে সুর সুর করে নেমে এলো ধীরে সুস্থে। নেমে সমতল এলাকায় আজ কাল বিকোচ্ছে হু হু করে। সত্যিই ভাবলেও অবাক লাগে কেমন তাই না। 

সোজা ভাবে বলতে গেলে মোমো হল আমাদের বাংলার পুলিপিঠা বা পিষ্টক জাতীয় একরকম খাদ‍্য ইংরাজীতে ডাম্পলিং বলা হয়। এখন এই খাদ‍্যটিকে ভারতে মোমো বিপ্লব বললে একটুও অতিশয়োক্তি হবে না। লুচি, রোল, ভেলপুরী, ইডলি, দইবড়া,দোসা, চাউমিং,পাস্তা, সবাইকে পিছনে ফেলে এই ফাস্টফুডটি দূর্বার গতিতে ছুটে চলেছে। অধুনা জলযোগ হিসাবে চটপট উদরপূর্তি ও রসনেন্দ্রিয়কে সুখী করতে তরুণ তরুণীদের কাছে এর জুড়ি মেলা ভার।

সাধারণত মোমো দু রকমের হয়। ‌ভাপা (steamed) বা ভাজা (fried)। স‍্যুপ মোমো জুসের মধ‍্যে ডুবে থাকে। অনেক জায়গায় আবার টমেটো ভিত্তিক চাটনি বা আচার সহযোগেও এটি পরিবেশিত হয়।

মূলত দক্ষিণ-এশীয় খাবার এটি। বলা হয় তিব্বত হল এর জন্মস্থান। তিব্বতী ভাষায় Mo অর্থ বাষ্প(Steam)। পরে প্রতিবেশী নেপাল, সিকিম, দার্জিলিং এও ছড়িয়ে পড়েছে। এটার সঙ্গে চীনা বাওজি বা জিয়াওজি, মঙ্গোলীয় বাজ, কোরিয়ার মান্ডু বা জাপানের গিয়োজার সাথে তুলনা করা যায়। 

তিব্বতীয় রা চলতি ভাষায় এটিকে মগমগ বলে। অন‍্য স্থানেও বিভিন্ন নামে এর চলন। যেমন আসামে মম, নেপালে মমচা, চীনে পিনইন ইত‍্যাদি।


মোমোর ইতিহাস :-
এই পদটি নেপালের কাঠমান্ডু উপত‍্যকায় নেওয়ার সম্প্রদায়ের, মূলত তুলাধর জাতির মধ‍্যে প্রথম ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নেওয়ার ব‍্যবসায়ীরাই তিব্বত থেকে এটি প্রথম ক্রয় করে আনে। পরবর্তীকালে তারা নিজেরাই রন্ধন প্রক্রিয়াটি একটু পরিবর্তন করে নেয়। যেহেতু নেপালে মহিষ সহজলভ‍্য তাই তারা মোমোর পুর হিসাবে মহিষ মাংসের কিমাই সর্বদা ব‍্যবহার করত যদিও এটি নেপালের ব্রাহ্মণ ও ছেত্রী সম্প্রদায়ের কাছে নিষিদ্ধ ছিল।

 নেপালের জন আন্দোলনের পর পরই ৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত নেওয়ার সম্প্রদায়ের কাছে এটি অন‍্যতম জনপ্রিয় প্রধাণ খাদ‍্য হিসাবে ব‍্যবহৃত হত। নিজেরাই প্রাত‍্যহিক মিল হিসাবে ভোজন করত। পরবর্তীকালে কাঠমান্ডু থেকে ব‍্যাপক দেশান্তর (Migration) হেতু এবং মুক্ত অর্থনীতির কল‍্যাণে ২০০০ সালের‌ মাঝামাঝি ভারতের সমস্ত মেগাসিটিতে এই খাবারটি ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ তে এসে এখন এই মোমো আমেরিকা, ইংল‍্যান্ড‌ ও আমাদের ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ এলাকার আনাচে কানাচে প্রবেশ করে গেছে।

মোমো বানানো পদ্ধতি :-

মোমো বানানোর জন‍্য মাকটু বলে একটা‌ বাসন ব‍্যবহার করা হয়। আজকাল বাজারেও কিনতে পাওয়া যায়। সহজলভ‍্য! পরম্পরা রীতি অনুযায়ী মোমোর আস্তরণ হিসাবে ময়দার তাল বা লেইকে বেলনা দিয়ে ছোট ছোট গোলকরে লুচির মত বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারে বেলে নিতে হয়। কেউ কেউ একটু বেকিং পাউডারও মিশিয়ে নেয়।

মোমোর পুর হিসাবে উপাদান:-

কিমা-মাংসর জন‍্য হিমালয় রেঞ্জে পর্ক, চিকেন,ছাগল, মহিষ। 
ভারতে ভেঁরা, ছাগল, মুরগী ইয়াক।
সরিষা তেল, পিয়াজ, রসুন, ধনেপাতা, ধনিয়া, টমেটো পিউরি ও সয়াসস।

কুচি কুচি করে বাঁধাকপি, আলু ও বিনস আনাজগুলো কেটে নিতে হয়। তাজা পনীর, অনেকে খোয়া ক্ষীরে সামান‍্য চিনিও দেয়। এদের সংমিশ্রণে পুর তৈরী হয়।
এবার ময়দার পাতগুলো পুর দিয়ে ঘিরে বন্ধ করে দিয়ে পিঠাগুলো মা়ংসর হাড়ের বা আনাজের তৈরী স‍্যুপে ঢেলে, মাকটুতে (mucktoo) দিয়ে স্টিম দিতে হবে। অনেকে আবার স্টিমড মোমো গুলো হালকা বা কড়া করে ভেজেও নেয়।

নেপাল, তিব্বত, ভুটান, সিকিম এর পথ পেরিয়ে অসম ও উত্তরবঙ্গ হয়ে সোজা কবি গুরুর দেশে মোমো এখন সুপার হিট খাবার বলতেই পারেন আপনারা। শুধু তাই নয় এগরোল, চাউমিন কে পিছনে ফেলে মোমো এখন বাজারে অনেকটাই এগিয়ে চলেছে বলা যায়।

 না হলে কি আর কলকাতার দু জন যুবক সাগর দরাইনি ও বিনোদ হোমাগাই তারা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনী। তারা বাবার অমতে মোমোর দোকান খুলে দিয়ে সুপার হিট হয়ে গেলো কপাল গুণে। তারা দু হাজার আট সালে মোমো বেচার কোম্পানি চালু করলেন বাড়ির অমতেই। সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ল সেই তাদের দুজনের তৈরি ওয়াই মোমোর নাম। প্রতিদিন যারা প্রায় ছয় লাখ মোমো তৈরি করে বিক্রি করে সারা দেশ জুড়ে। যাদের ব্যবসার পরিমাণ দুহাজার একশো কোটি টাকার মতো প্রায় ভাবা যায়। শুধু মোমো বেচার কোম্পানি করে কোটি টাকার সম্পদ করে ফেললো তারা দুই বন্ধু মিলে এটা সত্যিই ভাবার বিষয়। 

পাহাড় থেকে সমতলে নেমে এসে একদম ফ্রি স্টাইল সাঁতার কেটে বা একশো মিটার লম্বা দৌড়ে সবাইকে টপকে পিছনে ফেলে দিয়ে মোমো এখন বিশ্বজনীন হয়ে গেছে বলতেই পারেন আপনি। না হলে সন্ধ্যায় মুড়ি আর লেড়ো বিস্কুট খাওয়া বাঙালি দিব্যি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে মোমোর দোকানে। সেখানে গিয়ে বাটি আর চামচ দিয়ে দিব্যি হাসি হাসি মুখে মোমো খেয়ে গরম সূপ খেয়ে নিচ্ছে আর হাসি মুখে বাড়ী ফিরে আসছে কেমন একটা গম্ভীর মুখে। সস্তায় স্মার্ট টিফিন বলতে পারেন আর কি।

পাড়ার মোড়ে ওই যে শিবুদার ছেলে কেলো যে কদিন আগেও তেল চিট চিটে কড়াতে চপ আর বেগুনি ভাজত বাবার দোকান সামলে নিয়ে। বাবার নাম রাখতে সেই কেলোই দেখলাম একদিন সব বদলে ফেললো দোকানের দুম করে। ঝা চক চকে দোকান হলো। সুন্দর আলোর রোশনাই এলো। দোকানে বাজছে হালকা গানও। সুন্দর সুন্দর বড়ো বড় ডেকচিতে রাখা নরম তুলতুলে সেই সব পাহাড়ি সুস্বাদু খাবার তৈরি হলো ধীরে ধীরে। চপ বেচা ছেড়ে দিয়ে কেলো হয়ে গেলো মোমোর দোকানদার। এত গেলো কেলোর কথা। 


বোলপুরের হৃদয় মোমো এখন বিখ্যাত হয়ে গেছে বলা যায়। হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা দিয়ে তৈরি বলে হৃদয় মোমো তার নাম। একেবারে সোজা হৃদয়ে ধাক্কা মারবে এই মোমো খেলে। বিকোচ্ছে বেশ ভালই এই হৃদয় হরণ করা মোমো। চাকরি ছেড়ে মোমোর তিনটে দোকান করে সুপার হিট বোলপুরের হৃদয় মোমোর আউটলেট।

আসলে আমিও সেই পথের পথিক হলাম আজ। বুড়ো বয়সে হৃদয় হরণ না করে সোজা চলে গেলাম গুরুপল্লীতে নিজের হৃদয়কে সাথে নিয়ে আর পরিবার নিয়ে। দু ভাই মিলে ছোটো একটা ভ্যান ভাড়া নিয়ে মোমোর দোকান চালায় ওরা দুজন মিলে। শীতের সন্ধ্যায় ভীড় উপচে পড়ছে সেই দোকানে। যেখানে দেড়শো টাকায় পাঁচ পিস মোমো দিয়ে সারা দেশের বাজার ধরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওয়াই মোমোর মালিকরা। 

সেখানে মাত্র ষাট টাকায় চিকেন মোমো আর পঁয়তাল্লিশ টাকায় ভেজ মোমো দিয়ে বাজার মাত করছে গুরুপল্লীতে মোমো বিক্রি করা ওই দুই ভাই। লাইন দিয়ে রীতি মত কসরৎ করে মোমো খেতে বা কিনতে হবে সেই দোকানে। দাঁড়িয়ে মোমো খাওয়া। সূপ খাওয়ার মজাই আলাদা শীতের সন্ধ্যায়। 

আচ্ছা রবি ঠাকুরের সময় যদি এই খাবারটি বাজারে আসতো। বিক্রি হতো এই ভাবে নিশ্চয়ই। কবিগুরু নিশ্চয় তিনি, এটির পরখ করতেন আর বলতেন এমন নরম সুন্দর তুলতুলে পাহাড়ি সুস্বাদু খাবার আগে খাইনি তো কোনো সময়। বলে আগের স্মৃতি রোমন্থন করতেন। তাঁর বিদেশ বাস এর সময়ে এমন খাবার নিশ্চয়ই পাননি তিনি। তাই বোধহয় মোমোর জন্য কিছু লিখতে চাননি বা চেষ্টাই করেননি কবি গুরু। 

আসল কথা হল মাছে ভাতে বাঙালি, চা, মুড়ি, আলুর চপ খাওয়া বাঙালি জাতি এখন একটু আধুনিক মানুষ হবার চেষ্টা করছে। আর তাই সন্ধ্যা হতেই তারা গুটি গুটি পায়ে বউ বাচ্চা নিয়ে ভীড় করছে এই সব মোমোর দোকানে। হৃদয়ের টানে। একটু আপ টু ডেট হতে।

যেখানে শীতের সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা গরম খাবার খেতে খেতে। পাহাড়ি সুস্বাদু খাবার কে স্যালুট করে বলছে আম পাবলিক , ভাগ্যিস তুমি পাহাড় থেকে নেমে সোজা এসেছিলে সমতলে না হলে কি যে হতো কে জানে। এই ভাবে কি আর চলে। 

পেট রোগা বাঙালি আমার মতোই যার অবস্থা। সেও দিব্যি মুড়ি চপ ছেড়ে শীতের সন্ধ্যায় ভালই ভাজা মোমো না বলে ফ্রায়েড মোমোর প্লেট হাতে নিয়ে বসে পড়ছে, গুরুপল্লীতে রাস্তার পাশে গাছের নিচে চুপ করে। নরম তুলতুলে পাহাড়ি সুখকে উপভোগ করছে সে বেশ ভালই মন দিয়ে। কে বলবে সে বেকার, কাজ নেই তার।

আর ওই দুই ভাই মিলে শুধু একটি সন্ধ্যায় মোমো বিক্রী করে কয়েক হাজার টাকা রোজগার করছে কম পড়াশোনা করা ওই বোলপুরে গুরুপল্লীর দুই ভাইটি। সত্যিই অসাধারন পারফরম্যান্স এই মোমোর। এভারেস্ট শৃঙ্গের মতই পাহাড়ের অন্য আর একটি স্মরণীয় খাবার এই মোমো। তাই বোলপুরে ঘুরতে এলে হৃদয়ের সন্ধান পেতে হৃদয় মোমো না হলেও গুরুপল্লীতে যান। মোমো খান, ভালো লাগবে আপনার মন ভালো হবে এটা বলতে পারি।

মোমো কথা - অভিজিৎ বসু।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...