সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কড়িধ্যার মন্দিরে

বীরভূমের সিউড়ির কড়িধ্যা গ্রাম। সিউড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে খুব একটা দূরে নয়। মেরে কেটে তিন কিলো মিটার হবে হয়তো। টোটো চাপলে পনেরো টাকায় আপনি পৌঁছে যাবেন কড়িধ্যায়। একে কি গ্রাম কি বলা যাবে এখন। না আর গ্রাম নেই সেই আগের কড়িধ্যা। একদম পুরো দস্তুর শহর এর চাকচিক্য লেগে গেছে তার গায়ে। 


আসলে কড়িধ্যার এই মন্দির এর ছবিটা দেখে। কত পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে ইচ্ছা হলো আমার। সাদা জীবনের একদম ধব ধবে সাদা কথা।কালো কথার লেশ মাত্র নেই যেখানে। এমন একজন গৃহী সাধুর কথা, আমার দাদার কথা। যার গোটা জীবনটাই একটা ভালবাসার মোড়কে মোড়া। সাধারণ ভাবে জীবন কাটিয়েও যিনি অসাধারণ হয়ে বেঁচে আছেন তিনি আমার কাছে আজও। আমার প্রাণের প্রিয়, সেই ভালবাসার দাদা।

যিনি আমায় কলকাতার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কাজ খুঁজে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে খাবার দিতেন, আশ্রয় দিতেন, ভালোবাসা দিতেন, ভরসা দিতেন। হাঁফিয়ে গেলে বলতেন বাপি তুমি ঘুরে ঘুরে দেখো, লেখো, এটাই তো সাংবাদিক জীবনের প্রথম কাজ হলো মানুষকে দেখা আর ঘোরা। সেই ঘোরার নেশা লেগে গেলো আমার। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায় জীবনকে দেখো জীবনই হলো বড়ো শিক্ষক। ঘোরার নেশা ধরিয়ে দিলেন সন্তু দা আমার। 

 তাই বোধ হয় যেদিন দেওঘরে বড়দাদা যেদিন সবার সামনে বললেন তুই সাংবাদিকতা পড়। সালটা 1989 আজ থেকে কত দিন আগের সেই দেওঘরের এলো রোদ ঝলমলে সকাল। সেই সকালটা আজও মনে পড়ে আমার। তোকে আমি পড়াবো, তুই পড়। খুব ভালো লেগে গেছিলো সেদিন আমার। আসলে সেই পূজনীয় অশোকদার কথাটা জানতে পেরেছিলেন সন্তুদা। তাই তাঁর সাথে যোগাযোগ হলে তিনিও আমায় উৎসাহ দেন রিপোর্টার হবার জন্য। সেই পথ চলা শুরু আমার শোভাবাজার এর সাতষট্টি নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করা গুটি গুটি পায়ে।

আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগের কথা। সবে কলেজ থেকে পাশ করে বেড়িয়েছি আমি। মফস্বলের ছেলে আমি। কলকাতা শহর ভালো করে চেনা হয়ে ওঠেনি আমার। শোভাবাজার এর সাতষট্টি নম্বর যতীন্দ্র মোহন এভিনিউয়ের পাঁচ তলা একটা বড়ো বাড়ী। যে বাড়ীর নাম ছিল ষোড়শী ভবন। সেই বাড়িতেই থাকতেন সন্তু দা। শ্রী শ্রী ঠাকুরের নাতি। শ্রী শ্রী বড়দার ন ছেলে সন্তুদা। কি শান্ত, ধীর, স্থির একটা ভালবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখা একজন দাদা। যাকে সব বলা যায়। যাকে খুব গভীর গোপন ব্যাথার কথা বলা যায় নিঃশব্দে। যাকে অনুসরণ করা যায় পরম নিশ্চিন্তে, যাকে নির্ভয়ে সুখ দুঃখের কথা বলা যায়। যার কাছে অবারিত দ্বার সবার জন্য। যার সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন আমায় আকৃষ্ট করে সেই ছোটো বেলায়।

 কলকাতার রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে হাজির হয়েছিলাম একদিন সেই শোভাবাজার এর লাল মন্দিরের সামনের
বাড়িতে। সন্তুদার কাছে। একদম সাদা সিধে পোশাক পরা সৌম্য কান্তি এক সুন্দর মানুষ। একটি গেঞ্জি আর পাজামা পড়ে বসে আছেন তিনি। মুখে স্মিত হাসি। দু চোখের গভীর দৃষ্টি যেনো সব কিছু দেখতে পারেন তেমন ভাব। প্রথম দর্শনেই কেমন যেনো একটা ভালো লাগা জন্মে গেলো আমার। অনেক দূরের বাধ বাধ সম্পর্কও ধীরে ধীরে ঘরের সম্পর্ক হয়ে গেলো কি করে কে জানে। তারপর থেকে রিষড়ার লোক গেলেই তিনি সন্তু দা খবর নিতেন বাপির কি খবর। ওরা ভালো আছে তো। 

ধীরে ধীরে বাপি থেকে বের হয়ে আমাদের সম্পর্কও খুব কাছের হয়ে গেলো। সত্যিই অসাধারন অনুভূতি আমার। দাদার সাথেই এমন এক দিন শোভাবাজার বাড়ী থেকে গাড়ি করে বেড়িয়ে পড়লাম। ছুটে চললো আমাদের গাড়ি। সে এক আলাদা মজা, আলাদা অনুভুতি। দেওঘরের পথে। দাদার সাথে যাত্রা আমার। ঠিক সাংবাদিক না হয়েও তাঁর সাথে সফর করা। যাত্রা পথের ধুলায় মিশে যাওয়া লাল মাটির পথে ধুলো উড়িয়ে। হালকা আবছা মনে আছে ঠিক সন্ধ্যার আগে আকাশের নিচে লাল মাটির শুকনো মাঠে বসে সান্ধ্য প্রার্থনা করা। দুজনে একসাথে ঘুরে বেড়ানো পাতা ঝরা রাস্তায়।

মাথার ওপর গোটা একটা বিশাল আকাশ। দূরে আকাশ এর কোণে চুপ করে জ্বলছে তারা। সন্ধ্যার মেঘমালা সরিয়ে হালকা আলো জ্বলে উঠছে। দূরে রাস্তায় গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে। গাছ পালা ঘেরা রাস্তার পাশে আমি আর দাদা বসে প্রাথর্না করে হেঁটে বেড়াচ্ছি। বীরভূমের কিছু দূরে রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়া। অন্য গাড়ি এসে অন্যদের নিয়ে যাওয়া মন্দিরে। পড়ে রাতে আমাদের পৌঁছে যাওয়া মন্দিরে। দাদা আর আমি। কত যে ভালো লাগা জড়িয়ে ছিল সেই সময়।

আজ মনে পরে সেই সিউড়ির কড়িধ্যার মন্দিরে উঠেছিলাম আমরা, দাদার সাথে সেদিন রাতে। যার ছবি দেখে আজ চিন্তেই পারছি না আমি একদম। সেই মন্দিরের অনিল দা আজও আছেন মন্দিরে। সেদিন তিনি পরম যত্নে,আতিথেয়তায় আমাদের গরম ডাল, ভাত, দই, মিষ্টি, আর তরকারি খাইয়েছিলেন রাতে। 

আমার আজও মনে আছে সেই রাতে দাদা খাবার সময় আমার খবর নিয়ে ছিলেন। বাপি ঠিক করে খেয়েছে তো। এটাই হলেন আমার হারিয়ে যাওয়া ঠাকুর বাড়ির সন্তুদা। ঠাকুর বাড়ির সেই সন্তু দা যিনি বুঝতেন আমার লজ্জার কথা। তাই বোধ হয় সেদিন জানতে চেয়েছিলেন তিনি নিজেই একান্তে খাবার সময়। 

এই অনুসন্ধিৎসু মন আর সেবা দিয়ে তিনি সবার মন জয় করেছিলেন। আমার মত একজন অকিঞ্চিৎকর মানুষকে ভালোবাসলেন তিনি গভীর ভাবে। যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল না তাঁর কোনো সময়। কিন্তু আমি যে তাঁর কাছের মানুষ সেটা বুঝতে পারতো অন্য সবাই। তাই কোন্নগর মন্দিরে আসা, ভজনের ছবি তোলা দাদার। রিষড়ার মন্দিরে আসা। কলকাতায় শোভাবাজার বাড়ীতে সারারাত জেগে তাঁকে রিষড়ায় নিয়ে আসা গাড়ি করে। কত সুন্দর স্মৃতিকে মোড়কে জড়িয়ে ধরে রেখেছি আমি।

আজ রাতে মনে পড়ে গেলো সেই ছোটো রন্টু বাবুর কথা। সে আজ কতো বড়ো হয়ে গেছে বোধ হয়, বৌদির সেই স্নেহ মাখা হাসি, সেই নন্দ দা, হয়তো আজ আর বেঁচে নেই তিনি। সেই ভাউজির রান্না, সেই কাঠের পিঁড়িতে বসে একপেট খিদে নিয়ে খেতে বসা সেই বাড়ির রান্না ঘরে লাইন দিয়ে। সেই পাখি নিয়ে দেওঘরে যাওয়া। শ্রী শ্রী বড়দার কাছে আমায় ঘরে নিয়ে যাওয়া। খাঁচার পাখি দেখে তাঁর খুশি হয়ে হাসা। চিড়িয়াখানার পাখি দেওয়া এসবের স্মৃতি, ভালোলাগা, আর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে আজও আমার মনের গহন অরণ্যে। 

তাই এই সিউড়ির কড়িধ্যার মন্দিরের ছবি দেখে আমার মনে হলো, আজ আর সাদা জীবনের কালো কথা লেখা নয়। সাদা জীবনের এই সাদা ধব ধবে এমন একজন মানুষের কথা লিখি আমি। যার জন্যে আজও আমি শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলতে পারি। যার জন্য আজ আমায় লোকে সাংবাদিক বলে জানে, চেনে। যার জন্য নিজেকে কারুর কাছে বিকিয়ে দিতে পারিনি আমি। আজও এই পঁয়ত্রিশ বছরের সাংবাদিক জীবনে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছি আমি তাঁর আশীর্বাদে।

 সন্তু দা আমায় এই শিক্ষাই তিনি দিয়েছিলেন, কিছু উপদেশ না দিয়েই। এটা মেনে নিয়ে চলো, এমন কোনো কথা না বলেই। কোনো আদেশ না করেই। শুধু নিজে সারা জীবন এইভাবেই ঠাকুরকে ভরসা করে কাটিয়ে দিলেন তিনি। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে। শুধু মানুষজনকে ভালোবেসে। এটাই আমার প্রিয় সন্তু দাদা। আপনি ভালো থাকবেন দাদা। কড়িধ্যার মন্দিরের ছবি দেখে আমার মনে পড়ে গেলো পুরোনো অনেক কথা। তাই আপনাকে স্মরণ করলাম। আমার প্রনাম নেবেন দাদা।

কড়িধ্যার মন্দিরে - অভিজিৎ বসু।
সাত ফেব্রুয়ারী দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...