সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির রুনা খামারু

সেই পান্ডুয়ার রুনা খামারু।সেই হায়দরাবাদ এর ডেস্ক এর রুনা খামারু। হঠাৎ করেই একদিন মহাকরণে প্রেস কর্নারে এসে হাজির। রোগা পাতলা একটি মেয়ে রুনা। সে সাংবাদিক হতে চায় আর দেখতে চায় সে কিভাবে কেমন করে সাংবাদিকতা হয়। আর তাই তার সোজা সেই আনন্দবাজারের বিখ্যাত সাংবাদিক শ্যামলদার হাত ধরে লাজুক নম্র স্বভাবের মেয়ে রুনা এসে হাজির মহাকরণের ভীড় উপচে পড়া প্রেস কর্নারে। হুগলীর মেয়ে রুনা। একদম সাদামাটা চেহারা। খুব তেল চকচকে, আর ঝাঁ চকচকে ওকে দেখতে নয় একদমই। কিন্তু ওর খবরের খিদে আর ওর খবর লেখার সাহস বেশ ভালই। লেখার কাজটা ভালোই পারে শুধু পারেনা বসদের একটু মন জুগিয়ে হেসে চলতে। আর তাতেই সন্তুষ্ট হয়না বসরা। 


সেই হায়দরাবাদ এর ভাগ্যলতার রাস্তায় আমার পানিশমেন্ট ট্রান্সফার এর সময় ২০১৩ সালে আমার বাড়ির নিচের একটি মুদিখানার দোকানে ওকে দেখলাম এক সন্ধ্যায় কিছু জিনিস কিনছে ও অফিস থেকে ফিরে। আলাপ হলো ওর সাথে কথা হলো বাংলায় এটা তো বাড়তি পাওনা। তখনও ওর বিয়ে হয়নি সুদীপ্তর সাথে। একজনকে তো পেলাম আমার নিজের জেলার লোক। তার আগে থেকেই ও আমায় চিনত কলকাতায়। তরুন মুখোপাধ্যায়কেও চিনত ও সেই সময়। 

ওর মুখেই শুনতাম হায়দরাবাদ এর ইটিভির অফিসে চাকরির সময়ের ওর করুণ নানা অভিজ্ঞতার কথা। যেসব কথা আজ সাদা জীবনের কালো কথায় লেখা যাবে না হয়তো কোনোদিন। কিন্তু একটা চাকরি বাঁচাতে আর সংসার বাঁচাতে ওকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে এই কম বয়সে সেই সময়ে। রুনা আর সুদীপ্তর জুটি বেশ ভালই দুজনের। হৈ হুল্লোড় করা জীবন নয় ওদের। একদম সাদামাটা একটা জীবন। যে জীবনে সুখ এর থেকে দুঃখই বেশি জড়িয়ে আছে ওদেরকে ঘিরে রেখেছে। তবু কেমন দিব্যি ওরা দুজন হাসিমুখেই লড়াই করে গেছে। আজও লড়াই করেই টিকে আছে আর বেঁচে আছে। 

সেই নয়ডা জি নিউজ এর অফিসে ওর কাজ করা। দিল্লিতে থাকা অবস্থায় আমার মেয়ের কলেজে ভর্তি হলে নানা ভাবেই সাহায্য করার কথাও বলে রুনা সেই সময় বলে দাদা তুমি চিন্তা করোনা একদম বোনকে ঠিক দেখে নেবো আমি। এটাই বা কে আর কোথায় বিদেশ বিভুঁইয়ে বলে কাউকে আজকাল। যে যার জীবন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। যাই হোক সেই রুনার কথাই মনে পড়ে গেলো আজ দুপুরে আমার। কিছুদিন আগেও তো কথা হলো সেই মিয়াজাকি আম গাছ নিয়ে। ওর গ্রামের পাণ্ডুয়ার বাড়ীতে বসিয়েছে ওর বাবা। সেই বিখ্যাত দামী আম গাছে ফল এসেছে কিন্তু পাহারা দেবে কে সেই আম একটি চুরি হলেই যে অনেক ক্ষতি। সত্যিই সেই নিয়েই কথা হলো কিছুদিন আগেই ওর সাথে আমার। 

সুদীপ্তর সেই খেলা নিয়ে নানা ধরনের পোর্টাল এর লাইভ করা দেখে মনে হয় সত্যিই বেশ ভালই চালিয়ে যাচ্ছে কোনোও রকমে ও আজও। হায়দ্রাবাদ এর ওদের জীবনটা ভালই ছিল একসময় একটা নিশ্চিত জীবন ছিল। কিন্তু কেনো যে পারলো না ওরা ওখানে থাকতে কে জেনে। হয়তো আমার মতোই পারেনি ওরাও সব মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে। ওর মার অসুস্থ হয়ে পড়া। মাকে ডাক্তার দেখানো। পাণ্ডুয়া আসা আবার কলকাতায় শশুরবাড়ি ফিরে যাওয়া। এইভাবেই তো হাসিমুখে দিন চালিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি কেমন চুপচাপ করেই কাউকে কিছু না বলেই।

 আসলে ঠিক ভালো কাজ জানলেও কি আর সঠিক কাজের জায়গা মেলে কারুর যদি না সে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয় এই কাজের পরিবেশের মধ্যে। যদি না সে সঠিক ভাবে নিজেকে বেচতে না পারে এই সিস্টেমের কাছে। সুদীপ্ত আর রুনা বোধহয় ঠিক তেমনি ওরা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে কিন্তু কোনোও ভাবেই এই তথাকথিত শিক্ষিত সমাজে নিজেদেরকে বেচতে পারে নি। তবু কেমন বেশ ভালই আছে হাসি মুখেই আছে রুনা। ভালো থেকো তুমি। হয়তো অনেকবার বলেছে ও দাদা কোনো খবর হলে দিও দিতে পারিনি আমি ওকে। তবু আজ কেনো জানিনা মনে পড়ে গেলো সেই রুনার কথা। 

ইটিভির রুনা খামারু - অভিজিৎ বসু।
ছয় ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...