এই শ্রীকান্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত চরিত্র শ্রীকান্ত নয়। এই শ্রীকান্ত হলো বীরভূমের ইকড়া গ্রামের শ্রীকান্ত চ্যাটার্জী। সেই যখন বোলপুর থেকে সিউড়ি যাবার পথে গড়গড়িয়া বাস স্টপেজ আসে তখন ওকে ফোন করে ফেলি আমি সব সময়। আর ও হাজার ব্যস্ততা আর কাজের মাঝে ফোন ধরে বলে দাদা বলুন কোথায় যাচ্ছেন, চলে আসুন দাদা আমাদের বাড়ী। কোথায় চললেন দাদা আপনি।
এই শ্রীকান্ত চাষ করে, এই শ্রীকান্ত পূজো করে, এই শ্রীকান্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের বাড়ী জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে, এই শ্রীকান্ত আবার পাড়ার ক্লাবে সবাই মিলে হাসিমুখে নাটক করে। এই শ্রীকান্ত যে কোনও মানুষের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর এই শ্রীকান্ত আমায় বলেছে বুড়ো বয়সে আমায় গ্রামে ফাঁকা নিরিবিলিতে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেবে। যেটা কেউ বলতেই পারে না খুব সহজে। রক্তের সম্পর্ক হলেও নয় সেখানে ও তো আমার কোনও সম্পর্কের বন্ধনে বাঁধা নয়। এমন নানা কাজে কর্মে হাসিমুখে কাজ করে ও। যদিও আমি গ্রামে থাকতে হয়তো পারবো না তবুও ও বলে তো আমায় এটাই অনেক বড়ো ব্যাপার।
আসলে কিছু কিছু মানুষের সাথে মিশতে কথা বলতে গল্প করতে আমার খারাপ লাগে না আর অস্বস্তি হয়না একদমই। আবার কিছু কিছু চেনা মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে আর ভালই লাগে না আমার আজকাল যেনো। যাঁদের ছাড়া একদিন চলতো না ধীরে ধীরে তাঁরা সব কেমন যেন দূরে, অনেক দূরে চলে যাচ্ছে, মিশে যাচ্ছে তারা সব নক্ষত্র লোকে হারিয়ে যাচ্ছে। সে যাকগে আজ আমার ভোরবেলায় সাদা জীবনের কালো কথায় সেই আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে খুব বিখ্যাত নয় অখ্যাত এক গ্রামের ছেলে শ্রীকান্ত এর কথা।
সেই ওদের মাটির বাড়ী, সেই ওদের বাড়ীর উঠোন, সেই উঠোনের তুলসী মঞ্চ, সেই ধানের মড়াই, আলুর ক্ষেত, সবজি ক্ষেত, আর সেই মাটির গন্ধ মাখা গ্রাম অমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এর ইকড়া গ্রাম। একটু এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, রাত বিরেতে কেউ অসুস্থ হলে সিউড়ি সদরে দৌড়ে যাওয়া। আর সেই বিখ্যাত পুরোনো ঠাকুরের মন্দির। যে মন্দির শতাব্দী প্রাচীন। আসলে কি জানেন আজকাল এই ভীড় উপচে পড়া জায়গা ছেড়ে এই গ্রামকে বড়ো ভালো লাগে আমার। আর তাই ওকে মাঝে মাঝেই এমনি বলি আমি গ্রামে থাকবো ভাই। ও হেসে বলে একদম চিন্তা করবেন না দাদা।
সেই ওর এই কথা শুনে কেমন যেন মনটা ভরে যায় আমার। মনে হয় এই ধীরে ধীরে আমার বন্ধু কমে যাওয়া জীবনে আদৌ কি কেউ ছিলো বন্ধু কোন সময় কে জানে ওর এই নানা কথা আমায় কেমন যেনো নতুন করে মানুষকে খুঁজে বেড়াতে ইচ্ছা হয় আবার। যে মানুষকে দেখেই কেমন বিবমিষা জাগে সেই মানুষের মাঝেই যে শ্রীকান্ত কেমন হাসিমুখে কাজ করে যায় গ্রামে ঘুরে ঘুরে। মানুষের কাছে বাড়ী বাড়ী জল পৌঁছে দেবার কাজ। আর সময়ে অসময়ে ফোনে কথা বলে। যেটা আজকাল কেউ বলতেই চায়না এই দ্রুত ছুটে বেড়ানো জীবনে।
ওর বাবা, মা, দাদা বৌদি আর ভাইঝিকে নিয়ে বেশ ভালোবাসার স্পর্শ মাখা একটা পরিবার। ওকে বলেছি একদিন যেতে হবে ওদের বাড়ী। সেই মাটির দাওয়ায় বসে গল্প করতে হবে একদিন দুজন মিলে। ওদের গ্রামে ঘুরে বেড়াতে হবে একদিন। এই বসন্তের সময় গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে চলে বেড়াতে হবে একবার। সেই ওর বাড়ীর পাশে অভিজিৎ এর বাড়ী। ওর বিয়েতে গেলাম আমরা বোলপুর থেকে। সেই গ্রামের সবার বিয়েতে ভোজ খেতে আসা। কত আনন্দ হৈ চৈ হুল্লোড় হলো সেই দিন।
সত্যিই বেশ ভালো লাগে এই হঠাৎ করে আলাপ হয়ে যাওয়া গ্রামের মিষ্টি ছেলে শ্রীকান্তকে পেয়ে। মনে হয় কতদিনের চেনা টুকরো মুখ। আর সেটা না হলেই বা ক্ষতি কী। চেনা অচেনার ভীড়ে মিশে গেছে অনেকেই এই জীবনের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায়। যেখানে চেনা মুখ হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আর অচেনা মুখ কেমন করে যেনো জড়িয়ে ধরে আছে আমায় । সত্যিই জীবন বড়ই মায়াময় আর অদ্ভুত। এই জীবনের পথে হাঁটতে নেমে মনে পড়ে গেলো আমার সেই শ্রীকান্ত কথা। ভালো থেকো তুমি।
ইকড়া গ্রামের শ্রীকান্ত - অভিজিৎ বসু।
কুড়ি ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
খুব সুন্দর লেগেছে
উত্তরমুছুন