আজ সাদা জীবনের কালো কথায় সেই রুজুদার কথা। আজ সেই আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের সাদা কালো অক্ষরে লেখা সেই রুজুদার কথা। আজ সেই হুগলীর শ্রীরামপুরের জেলা সিপিএমের পার্টি অফিসে এক তলায় হাসিমুখে অফিস এর সব কাজ সামলে এক গ্লাস লাল চা নিয়ে হাসিমুখে বসে থাকা রুজুদার কথা। আমরা জেলা সিপিএমের কোনোও জেলা নেতার সাথে দেখা করতে গেলেই হাসিমুখে বলতেন দাঁড়াও অভিজিৎ, আমি ফোন করে জেনে নিচ্ছি মিটিং শেষ হলো কি না, একটু বসো তুমি অপেক্ষা করো। যতই সরকার বিরোধী ইটিভি বাংলা চ্যানেল হই আমরা কোনওদিন খারাপ ব্যবহার করেননি তিনি।
এই বলেই সেই সাদা কালো ঘোরানো ফোনে ফোন করতেন তিনি একতলা থেকে ওপর তলায়। কোনোদিন সেই বিখ্যাত জেলার সিটু নেতা সুনীল সরকারকে, আবার কোনওদিন সেই অনিল বসু, রূপচাঁদ পাল বা অন্য কেউ আমার স্যার সেই জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায় চৌধুরীকে খবর দিতেন তিনি। আর কালে ভদ্রে যদি কোনোদিন বিমান বসু সিপিএমের জেলা পার্টি অফিস সেখানে আসেন তাহলে রুজু দা আমাদের খবর দিয়ে বলে দেন আজ ওপরে তোমাদের সব সাংবাদিকদের ডাক পড়বে একটু পরেই চলে এসো তোমরা, বিনোদ দা কিন্তু বলে দিয়েছেন আমায় তোমাদের বলার জন্য। সেই হুগলী জেলার প্রবীণ জেলা সম্পাদক বিনোদ দাস। আর সেই ভুলে গেলাম রুজুদার ছেলের নাম সেই ফটোগ্রাফার যে আমাদের সাথে ঘুরত নানা জায়গায়। কি বেশ নাম ছিল ওর ভুলে গেছি এতদিন পরে আমি।
আসলে এই রুজুদাকে বেশ কিছু দিন আগেই দেখলাম রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন তিনি একটু ঝুঁকে একা একা। এই শ্রীরামপুরের ভীড় রাস্তায় টোটো চালকের ধাক্কা বাঁচিয়ে সেই রুজু দা কোনরকমে রোগা ভেঙে পড়া চেহারা নিয়ে হেঁটে চলেছেন তিনি। গলায় সেই গলাবন্ধ পড়ে ঝুঁকে ঝুঁকে হেঁটে চলেছেন তিনি। ঘাড় গুঁজে হাঁটছেন তিনি ধীরে ধীরে একদম মাটির দিকে তাকিয়ে। ঠিক ক্ষয়িষ্ণু সিপিএমের পার্টির মতোই ধীরে সুস্থে হাঁটছেন তিনি ক্ষমতা হারিয়ে।
দল যখন আগ্নেয়গিরির মতই জেগে উঠে রাজ্যের বাম আমলের একমাত্র শাসক দল হিসেবে কাজ করছে গোটা রাজ্য জুড়ে দোর্দণ্ড দাপটের সাথে। সিপিএমের দুর্ভেদ্য লালদুর্গ যখন কেউই ভাঙতে সক্ষম নয় এই রাজ্যে হাজার আন্দোলন করে আর শত চেষ্টা করেও। সেই আমলেও এই রুজু দা একভাবেই সেই একটা লম্বা ঢোলা পাঞ্জাবি আর আধময়লা পাজামা পড়ে খুব সম্ভবত নস্যি নেওয়ার নেশা ছিল তাঁর একটু আর লাল চা খাবার নেশায় মেতে পার্টি অফিসে বসেই তিনি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি হাসিমুখেই। সেই একভাবেই সারাটা জীবন দলের পার্টি অফিসে কাজ করে হোল টাইমার হয়ে কাটিয়ে দিলেন তিনি এই একভাবেই।
আর সেই সময় আমার পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিপিএমের পার্টি অফিসের কাছেই সেই মা মাটি আর মানুষের ঘাস ফুলের দলের এক হাফ নেতার চামচা আর বেলচাদের যা ঝাঁ চকচকে জীবন সেটা নিজের দেখেই কেমন যেন মনে হয় আমার আজকাল সেই রুজুদার কথা মনে পড়ে যায় খুব। ভাগ্যিস এই লাল বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে সবুজ ঘাসের মাঠে জোড়া ফুল মাথা উঁচু করে একটু স্বপ্ন দেখেছিল সেইদিন। সেই স্বপ্ন তো আজ প্রায় আইফেল টাওয়ারের সামনে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। যে হাসি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বেশ ভালোই টের পান এই রুজু দা আজকাল এই বৃদ্ধ বয়সেও। কী করবেন টের পেয়েও কেমন যেনো একটা গভীর নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে সবকিছু দেখে ফেলেন তিনি কিন্তু মুখে কিছুই বলেন না আর।
রুজু দা তো তাঁর সেই ছবি তোলা আর ঘুরে বেড়ানো ছেলের জন্যে সাকুল্যে একটা ছোট গ্রুপ ডির সরকারী চাকরী জুটিয়ে নিতে পারতেন, এত দাপুটে সিপিএমের যে কোনোও নেতাদের কাছে হাত কচলে তাঁকে ধরে নিয়ে। কিন্তু না সেটা বোধহয় তিনি আর মুখ ফুটে কাউকেই বলতে পারেন নি এই দীর্ঘ জীবনে। হয়তো একটু আত্মসম্মানে বেঁধেছিল তাঁর। কি করে নিজের ছেলের জন্য এই একটা কাজ চাইবেন যাতে তাঁর পরিবারটা বাঁচে এই তারা হাতুড়ি আর কাস্তের দলের নেতাদের কাছে। কিন্তু বলতে পারেননি তিনি সেই কথা। আর আজ মাত্র পনেরো বছর রাজত্ব করেই এই মা মাটির সংসারের সব পাড়ার ছেলেপুলেদের কী আয় আর উপচে পড়া উপার্জন। যা দেখে মনে পড়ে যায় অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি। সত্যিই অসাধারণ কিন্তু এটা বেশ আজকাল তাঁর ভালই লাগে।
আজ এই রাতের বেলায় আমার সেই রুজুদার কথা মনে পড়ে গেলো হঠাৎ করেই। সত্যিই কিছু কিছু মানুষ সারাটা জীবন ধরেই এই আত্মসম্মানকে বুকে আগলে রেখে আর নিজের আদর্শকে বুকে জড়িয়ে ধরেই বেঁচে থাকেন চুপ করে চরম দারিদ্র্য আর কষ্টকে সহ্য করে হাসিমুখে একটু লাল চা খেয়েই। আর আবার কেউ কেউ সব কিছুকে ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে শুধুই টাকা কামায় আর টাকা কামায়, তাঁরা জেলে যায়, গ্রেফতার হয় আবার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হাসি মুখে টাকা কামাতে নেমে পড়ে তাঁরা রাজনীতির পৈতা তাদের গলায় পরা আছে বলে।
সত্যিই অসাধারণ এই রাজনীতির ময়দানের কুশী লবরা কিন্তু এক একজন এক রকম জীবন দর্শন নিয়ে বেঁচে আছেন। একদিকে আমাদের রুজু দা আর অন্যদিকে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাফ নেতার বা ফুল নেতার সেই দামী ফুলপ্যান্ট পড়া, দামী নরম জুতো আর হাতে ভারী সোনার বালা পড়া চামচা আর বেলচারা সাথে তাদের দাদার আর দিদিরা। কথায় বলে তুমিও মানুষ আমিও মানুষ ফারাক শুধু শিরদাঁড়ায়। ভালো থাকবেন আপনি রুজুদা। ওই গলবন্ধ পড়ে ঝুঁকে পড়া শরীর নিয়ে আপনি এইভাবেই সোজা হয়ে ঋজু হয়ে বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে। আজকাল এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার। ভালো থাকবেন আপনি দাদা।
আমাদের রুজু দা - অভিজিৎ বসু।
বাইশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন