সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাঘী পূর্ণিমার দিন

মাঘী পূর্ণিমার দিন সত্য নারায়ন পূজো করলাম বোলপুরের বাড়িতে। শান্তি স্বস্তি কামনায় সত্য নারায়ন পূজো। মা চলে যাবার পর এক বছর কোনো পূজো করা যায়নি। এক বছরের কাল অশৌচ কেটে যাবার পরে বোলপুরের বাড়িতে পূজো করলাম। 

ছোটো বেলায় শ্রীরামপুরের মামাবাড়িতে এই পূর্ণিমার দিন সত্য নারায়ন পূজোর প্রসাদ আসতো গুরু বাড়ী থেকে। যে গুরু বাড়ী রাজা রামমোহন রায় এর মামার বাড়ি। সেই প্রসাদ বিতরণ করা হতো লাইন দিয়ে গুরু বাড়িতে। ছোটো বেলায় সেই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রসাদ নিতাম আমার আজ ও মনে পড়ে। গুরু বাড়িতে দোল পূর্ণিমার দিন আর মাঘী পূর্ণিমার দিন ভীড় জমত অনেক। দুর দুর থেকে লোকরা আসতো এই প্রসাদ নিতে। সেই সত্য নারায়ন এর প্রসাদ এর স্বাদ আজও ছোটো বেলার স্মৃতির মতই উজ্জ্বল আমার কাছে।

 প্রতি শনিবার বারের ঠাকুরের পূজো দিয়ে প্রসাদ নিয়ে আসত নেরুর পিসিমা। এঁদো পুকুরের বাড়ির সামনের কানু মামাদের, ভিজে মামাদের রকে সেই প্রসাদ বিলি করা হতো। শনিবার তাই সন্ধ্যা থেকেই পড়তে বসে মনটা কেমন কেমন করতো।কখন ডাক পড়বে কই গো সব। দৌড়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়তাম আমি। আমার দিদু বেশি করে প্রসাদ দিত আমায়। মুখে দিয়ে দিত লাল বাতাসা। সেই সব পুরোনো দিনের স্মৃতি ছবির মত আজও অমলিন হয়ে আছে। 

 মা বেঁচে থাকতে অনেক বার কথা হয়েছে সত্য নারায়ন দেওয়া নিয়ে।পূর্ণিমার দিন উপোস করতেন মা। প্রতি পূর্ণিমার দিন মার উপোস থাকতো। শরীর খারাপ হওয়ার আগে অবধি মা উপোস করতেন পূর্ণিমার দিন। বলতাম কি হবে উপোস করে। কি দরকার সারাদিন ভাত না খাবার, বয়স হয়েছে তুমি আর উপোস করো না কিন্তু মা কোনো দিন তার নিয়মের ব্যাতিক্রম করেন নি। নিয়ম মেনে নিষ্ঠা নিয়ে সব কিছু পালন করে গেছেন সারা জীবন।

 আজ সেই মাঘী পূর্ণিমার দিন পূজো হলো কিন্তু মা নেই সাথে এটাই দুঃখ আফসোস আমার। জীবনের সব কিছু হিসেব নিকেশ করে কি আর হয়। যা ভাবা যায় সেটা হয় না। জীবন চলে তার নিজের চেনা নিয়মে, চেনা ছন্দে। সেটাকে মেনেই চলতে হয়, মানিয়ে চলতে হয়। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার আর এক নাম জীবন। সেটাকে অভ্যাস করে চলতে জানতে হয়। না হলে পিছিয়ে পরতে হয়। জীবনের চেনা ট্র্যাক থেকে ছিটকে যেতে হয়। কেউ অ্যাডজাস্ট করে ট্রাকে টিকে যায়। আবার কেউ ছিটকে পড়ে ট্র্যাক থেকে। 

দু দল মানুষ বেঁচে থাকে নিজের মতো করে একে অপরে। কেউ পূর্ণিমার চাঁদের নরম আলো গায়ে মেখে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে কষ্ট করে। কেউ আবার পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় নিজের জীবনকে গর্ব করে উপভোগ করে প্রতিভাত হয়ে বেঁচে থাকে বুক ফুলিয়ে। যে যেভাবে পারে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে। কেউ শিরদাঁড়া বেঁচে দেয়। কেউ সেটা না বেঁচে সোজা সাদা সিধে জীবন যাপন করে। কিছু মানুষ ভালোবেসে তাদের সাহায্য করে। এটাই হলো আসল সাদা জীবনের সোজা সাপটা কথা। যে কথায় জটিলতা নেই। আছে সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন। মঙ্গল হোক সবার। ভালো হোক সবার। জয় বাবা সত্য নারায়ন। জয় শ্রী হরির জয়।

মাঘী পূর্ণিমা হলো হিন্দু বৌদ্ধ উৎসব ও একটি পূর্ণিমা তিথি। মাঘী পূর্ণিমা বা মাঘ পূর্ণিমা হলো মঘানক্ষত্রাযুক্ত মাঘ মাসে পূর্ণিমা তিথি ও হিন্দু ও বৌদ্ধদের একটি ধর্মীয় উৎসব। এই দিনে চন্দ্র, গুরু এবং শনি তিনটি গ্রহই অশ্লেষা নক্ষত্রে তাদের নিজস্ব রাশিতে উপস্থিত থাকে।এদিন গৌতম বুদ্ধ তাঁর পরিনির্বাণের কথা ঘোষণা করেন। এছাড়া কথিত আছে যে, এই তিথিতে দেবতারা মর্ত্যলোকে ভ্রমণ করতে আসেন। এই তিথিতে কোনো তীর্থ বা গঙ্গা স্নান ও দান করলে ভগবান প্রসন্ন হন। ওই সময়ে কুম্ভমেলা প্রতি বারো বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় এবং মাঘ মেলাটি বার্ষিক ভিত্তিতে তিনটি নদীর সঙ্গমস্থলে বা ত্রিবেণী সঙ্গমের চারপাশে উত্তর ভারতের এলাহাবাদ বা প্রয়াগের মতো শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও গঙ্গাস্নান করা হয়ে থাকে। 

মাঘী পূর্ণিমা বা অন্য নাম মাঘ পূর্ণিমা পালনকারী হিন্দু ও বৌদ্ধ উদযাপন বুদ্ধ ও বিষ্ণু পূজা, তীর্থ স্নান
গৌতম বুদ্ধ পঁয়তাল্লিশ বর্ষাবাস অর্থাৎ অন্তিম বর্ষায় রাজগৃহের বেনুবনে অধিষ্ঠান করেন। সে সময় তিনি ভীষণ রোগে আক্রান্ত হন। পরে প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর ধ্যানবলে রোগমুক্ত হন। ভগবান বুদ্ধ বেনুবনে বর্ষাব্রত শেষ করে দেশ পরিভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে তিনি ক্রমে বৈশালীর চাপালচৈত্যে উপস্থিত হন। তখন তার বয়স পূর্ণ হয় আশি বছরে। এ সময় তিনি চাপালচৈত্যে ধ্যানস্থ হয়ে ভাবলেন তার পরিনির্বাণের সময় সন্নিকটে। পরে তিনি ভাবলেন এখনও তার শিষ্য-প্রশিষ্য, ভিক্ষু-ভিক্ষুণী এবং উপাসক-উপাসিকাগণ সুন্দর জীবনযাপনের যোগ্যতা অর্জন করেনি। এ অবস্থায় তিনি কি পরিনির্বাণ লাভ করতে পারেন? তখন তিনি সেবক আনন্দকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে আনন্দ, এই বৈশালী অত্যন্ত মনোরম স্থান। এখানকার উদ্যান, চৈত্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।’ ভগবান ইচ্ছা করলে ঋদ্ধিবলে কল্পকাল অবস্থান করতে পারেন। কিন্তু কাল সর্বগ্রাসী। জীবন অনিত্য, সংস্কার অনিত্য। জন্ম হলেই মৃত্যু অনিবার্য। এই বিশ্বে যে যতই শক্তি ও ক্ষমতাশালী হোক না কেন এবং যে যতই বিত্ত-বৈভব ও সম্পদ-ঐশ্বর্যের অধিকারী হোক না কেন, কেউ মৃত্যু থেকে মুক্ত হন। ধ্যানী-জ্ঞানী, মুনি-ঋষী- মৃত্যু সবাইকে স্পর্শ করে। সবাই মৃত্যুর অধীন। এই মহান সত্যটি বুদ্ধজীবনেও অনিবার্য।

ভগবান বুদ্ধ আনন্দকে আবার সম্বোধন করে বললেন, হে আনন্দ, অচিরেই তথাগত পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হবেন। এখন থেকে তিন মাস পর বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতেই আমি পরিনির্বাপিত হবো। সুতরাং আজ মাঘী পূর্ণিমায় ভগবান বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের দিন ঘোষণাই ছিল মুখ্য বিষয়। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের ঘোষণা শুনে তার শিষ্য-প্রশিষ্যগণ সবাই ব্যথিত হন, কান্না করেন। তখন বুদ্ধ তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘অনিচ্চা বত সঙখারা, উপ্পাদা বয ধম্মিনো, উপ্পাজিত্বা- নিরুজ্জন্তি ততো উপ সম সুখো।’ অর্থাৎ উৎপত্তি ও বিলয় জগতের নিয়ম। উৎপত্তি হয়ে নিরুদ্ধ হওয়া জাগতিক ধর্ম। এই মহাসত্যটি জীবন ও জগতের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে পুরাকালে কান্তিকা নগরীতে ধনেশ্বর নামে একজন গরীব ব্রাহ্মণ বাস করতেন। ব্রাহ্মণের কোনও সন্তান ছিলনা। ব্রাহ্মণের দিন কাটছিল খুবই দুঃখে। ভিক্ষা করে কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছিল। এমনই একদিন ভিক্ষায় বের হলেন ব্রাহ্মন, সেসময় নগরীর বাইরে কোনও এক জনৈক ধনীর বাড়িতে তিনি ঢুকলেন ভিক্ষা করতে। কিন্তু সেখান থেকে ব্রাহ্মনকে খালি হাতেই ফিরতে হল কারণ নিঃসন্তান ব্রাহ্মনকে ভিক্ষা দিতে চাননি বাড়ির মালিক। ব্রাহ্মন ঘরে ফিরে কাঁদতে লাগল আর তার স্ত্রীকে সবটা খুলে বলল। সব শুনে স্ত্রী রূপবতী উপায় খুঁজতে লাগল। তখনই জনৈক একজন এসে বলল তোমরা মা কালীর পুজো কর এবং চন্দ্রিকা দেবীর আরাধনা কর, এতে তোমরা সন্তান লাভ করতে পারবে। তাই শুনে ব্রাহ্মন নাকি মাঘী পূর্নিমার এই পুজো করে এবং ব্রাহ্মন দম্পতির সন্তান লাভ হয়।

এই দিনে সংঘদান, বিষ্ণু ও বুদ্ধপূজা এবং বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হয়। অনেক জায়গায় মাঘী পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে নানা রকমের উৎসব ও মেলা বসে। ভক্তদের বিশ্বাস এইদিন দেবতারা স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন। এই দিন নদী স্নানকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এছাড়া মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে গঙ্গাজলে পূণ্য স্নানের পর অনেকেই দান-ধ্যান করে থাকেন। কেউ কেউ তর্পন করে থাকেন। ওই দিন কেউ বিভিন্ন খাবার, কেউ পোশাক, ঘি, কম্বল, গুড়, তিল ইত্যাদি বিতরণ করে থাকে। "মাঘী পূর্ণিমা হিন্দু সম্প্রদায়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন মাঘী পূর্ণিমার দিন।

মাঘী পূর্ণিমার দিন - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার চব্বিশ।
ছবি নিজের ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...