সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিউড়ির পরিতোষ

সেই কবেকার আলফা বাংলার পরিতোষ। সেই ক্যামেরা নিয়ে বীরভূম জেলায় বিভিন্ন খবর করে ঘুরে বেড়ানো পরিতোষ। সেই ইটিভির সংসারে পলাশ আর পরিতোষ এর অভিন্ন মিষ্টি মধুর জুটি। সেই অরুন দা আর পরিতোষ এর মিষ্টি মধুর টক ঝাল গল্প। সেই শীতের দুপুরে ওদের খবর না থাকলে বেরিয়ে পরা এদিক আর ওদিক। পিকনিক করতে কোনো সময় তিলপাড়া চলে যাওয়া মোটর সাইকেল নিয়ে কখনও আবার রাজনগর এর ঢালু পথ ধরে দূরে অনেক দূরে চলে যাওয়া।

 যদিও সে ইটিভির কাজ করেনি কোনওদিন কোনোও সময়। তবু জুটি একটা ছিল সম্পর্কের, যে সম্পর্ক আজও রয়ে গেছে ওদের দুজনের হাসিমুখেই। সেই সিউড়ি শহরের পরিতোষ। সেই অনেকের আবার পরীদা। সেই গ্রামের বাড়ী আর শহরের বাড়ী নিয়ে ওর দিব্যি থাকা। সেই কোনো দরকার হলে কিছু জানার হলে ওকে ফোন করে কথা বলে তথ্য নেওয়া যায় যার থেকে অবলীলায় হাসিমুখে সেই পরিতোষ। যে অন্তত মনে করে না যে টোটো চালকের সাথে কথা বলে কি লাভ আর। ‌মালটা একদম ফালতু হয়ে গেছে আজ এই বাংলা মিডিয়ায় একদম বাতিলের দলে চলে গেছে যে লোকটা। 

সেই পরিতোষ এর সাথেই দেখা হলো আমার বহুদিন পর। সিউড়ি সদর শহরে আড্ডা হলো, গল্প হলো, চা খাওয়া হলো আর পুরোনো দিনের কথা বলা হলো রাস্তার ধারে মাটিতে বসে। জেলার নানা খবর নিয়ে আলোচনা হলো কথা হলো। জেলার নানা বিখ্যাত সাংবাদিকদের নিয়ে কথা হলো। সংবাদে থাকার জন্য এমন অবস্থা আর কি আমাদের। খবরের দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ানো কেমন হাসিমুখে এই খবরে না থেকেও। খবর নিয়েই আলোচনা করে বেঁচে থাকা। বেশ ভালই লাগলো আর কি আমার। আর তাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে লিখে ফেলতে ইচ্ছা হলো সেই পরিতোষ এর কথা।

আসলে এই দ্রুত বদলে যাওয়া সংবাদ মাধ্যমে আমি, পরিতোষ এর মত বেশ কিছু মানুষরা আজ আদিম যুগের মানুষ হয়ে গেছি ঠিকই। তবু তো এই আদিম যুগের মানুষরা কিছুটা হলেও লোভ আর লালসা সামলে এই খবরকে ব্যবসায় পরিণত না করে বেঁচে আছি কোনোভাবে, কোনোও রকমে হাসি মুখে দিন গুজরান করে। কারুর কাছে হাত না পেতে আর নেতাদের কারুর কাছে হাত না কচলে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে খবর করে বেঁচে থাকা। এটা বেশ ভালো লাগে আমার আজকাল। 

খবর করা মানেই ক্ষমতার বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে ঘুরপাক খাওয়া। আর সেই যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে নিজেকে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্তে আনন্দের জোয়ারে, সুখের আবেশে ভেসে যাওয়া। আর নেতাদের কাছে প্রশংসার যোগ্য দাবীদার হয়ে একে অপরকে টপকে এগিয়ে যাওয়া হাসিমুখে। বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু এটাও। আর এই সব থেকে কিছুটা দূরে সরে থেকে আমাদের বেঁচে থাকা একদম বাতিল হয়ে। 

সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিটিং এর খবর করতে গিয়ে সিপিএমের বোমাবাজির আক্রমণে পড়া নেত্রীর। আর সেদিনের সেই ডাকাবুকো কেষ্ট মন্ডল এর নেত্রীকে বাঁচিয়ে দেওয়া। যার পুরস্কার আজও পাচ্ছেন তিনি এতদিন পরেও। আর সেই খবর করতে আর ছবি করতে যাওয়া বুক ফুলিয়ে সেই সিপিএম বাড়ির ছেলের। সে জানে তার কিছু হলে তার বাবা দেখে নেবে সবটাই। বরাবর কিছুটা হলেও ডাকাবুকো এই সব ঘটনার কাজ করতে বুক কাঁপেনি তার একদম কোনওদিন কোনও সময় খবরের নেশায় দিন গুজরান করা। 


সেই পরিতোষকে পেলাম বহুদিন পর। সেই ইটিভির বিদ্যুৎদার বিষয়ে কথা হলো। যাঁকে একদিন আমি ফোনে কথা বলেছিলাম মনে হলো হয়তো ভুলে গেছেন তিনি আমায় এখন সেই বীরভূমের ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক বিদুৎ রায়। একটু ব্যস্ত আছেন বলেছিলেন সেই সময় আমায়। পড়ে আর কথা হয়নি তাঁর সাথে কোনোদিন। সেই বিখ্যাত সাংবাদিক গোপাল এর কথা হলো যিনি আজ আমাদের মধ্যে না থেকেও নানা ভাবেই রয়ে গেছেন এই বীরভূম জেলায় আজও নানা জায়গায় তাঁর স্মৃতি বিদ্যমান। 

আসলে কি জানেন তো আমার মনে হয় এই বাংলা মিডিয়ায় আজ অনেক অভিযোজন হয়েছে। এই অভিযোজিত সংবাদ মাধ্যমে নানা বদল ঘটে গেছে ধীরে ধীরে আমাদের অজান্তেই। লাল দুর্গের বীরভূমে কড়া নজরে আর কড়া পাহারায় কাজ করতে হয়েছে সাংবাদিকদের একসময়। যা আজও করতে হয় সবাইকেই এই মা মাটি আর মানুষের আমলেও। যে সময় ঘুরে বেড়িয়ে স্পটে পৌঁছে নানা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে কাজ করতে হয়েছে তাঁদের সকলকেই।

 কিন্তু সেই সময় সাংবাদিকদের এমন একে অপরকে টপকে এগিয়ে, ভেসে যাওয়া ছিল না অর্থের স্রোতে আর নেতাদের কাছে বিকিয়ে যাওয়া ছিল না এমন ভাবে। যা আজ রাজ্য জুড়ে হৈ হৈ করে চলছে এই এক নিয়ম। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নিয়ে খবর করে এগিয়ে চলা আর হাসিমুখে বেঁচে বর্তে থাকা। একটু আপোষ করে একটু আধটু নরমে গরমে রাখা একে অপরকে একটু সমঝোতা করে। বেশ ভালো অভিযোজন ব্যবস্থার মাধ্যমে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের এই অভিযোজিত হয়ে যাওয়া ধীরে ধীরে। আর তাই আজ আপনাদের কাছে পরীর কথা লিখে ফেললাম আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে। ভালো থেকো তুমি পরীতোষ। আর বদলে না গিয়ে এক থেকো তুমি।

সিউড়ির পরিতোষ - অভিজিৎ বসু।
উনিশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...