শিবুদাই একমাত্র ভরসা। আপনার জীবনের হাজার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন পাড়ার শিবুদা। আপনার হতাশার জীবন। আপনার সন্দেহের জীবন। আপনার মোবাইল ফোনের আসক্তির জীবন। বউ এর কাছে গাল খাওয়ার জীবন, প্রেমিকার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার চমকপ্রদ সুন্দর মসৃণ তেল চকচকে জীবন, শুধুই দৌড়ে বেড়ানো আর ছুটে বেড়ানোর জীবন। যে জীবনে শুধুই পিছিয়ে যাওয়া নয় একদম সঠিক ভাবে সঠিক পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া আর কি।
আর সেই সব কিছুর পরেও যদি কাজ না হয় , হতাশা না কাটে, সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে অর্থ মূল্য ফেরত দেওয়ার সদর্পে ঘোষণা। রাস্তায় পুরোনো দেওয়ালে, ট্রেনের কামরায়,বন্ধ সিনেমার টিকিট কাউন্টারের গায়ে, রেলের টিকিট কাটার সেই ছোট্টো ঘুলঘুলির মাঝে কেমন ঝুলে থাকে এই সব কিছুই বাঁকা চাঁদের নরম আলো গায়ে মেখে চুপটি করে কিছুটা একা একাই।
চোখে পড়ে যায় আমার আপনার সবার। আর ঠিক তখনই বুকের মাঝে চেপে বসে হতাশার খানাখন্দে ভরা সংসার আর তার ক্যাঁচড় কোঁচড় মৃদু আওয়াজ। চোখের সামনে ঝুলে থাকা বিজ্ঞাপন দেখে মনে মনে শিবুদাকে খুঁজি আমি আকুল হয়ে। যে আমার জীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে এক নিমেষে হাসতে হাসতেই। যে বলতে পারে কুছ পরোয়া নেই আমি আছি তো চিন্তা কি আর।
এমন লোকের দেখা মেলা ভার আজকাল। তবু তো এই বিজ্ঞাপনের দৌলতে শিবুদার নাম জানতে পারলাম আমি। সাদা কালো ছবিতে দেখলাম যে এই হলেন শিবুদা যিনি ভক্তবাঞ্ছা কল্পতরু। যিনি হাসিমুখে সব সমস্যার সমাধান করেন এক নিমেষে। সত্যিই অসাধারণ এই বিজ্ঞাপন যা দেখে আমি চমকিত হলাম, পুলকিত হলাম আর আনন্দে মুখরিত হলাম। একে, ওকে, তাকে ডেকে আর হেঁকে বললাম যে আর চিন্তা নেই কোনোও আমার।
সত্যিই তো চিন্তা নেই আমার, তাড়া নেই আমার, দৌড় নেই আমার, প্রতীক্ষা নেই আমার, ঘরে ফেরার জন্য কারুর অপেক্ষা নেই আমার,শুধু ওই তিতাস নামের টলটলে কালো দীঘির জল ভরা দৃষ্টিতে ভেসে যেতে ইচ্ছা হয় আমার এই বুড়ো বয়সেও মাঘ আর ফাল্গুনের শুভেচ্ছা মাখা মাসের এই নিঃস্তব্ধ শব্দহীন দুপুরে। তিতাসের তিতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমি ওকে বলতে চাই যে দেখো তুমি আমায় ভালো না বাসলেও আমি যে তোমায় বড়ই ভালবাসি আজও। এই ভালোবাসার কথা বলতে আমার লজ্জা নেই কোনোও, নেই কোনোও লুকোচুরিও। আর তিতাস তার দু চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেনের মতোই হাসিমুখে আলতো নিজের ঠোঁট কামড়ে বলে, ধ্যাৎ।
আমি কেমন যেন বিবশ হয়ে যাই। দুর থেকে পাতা ঝরার শব্দ শুনতে পাই আমি ফিসফিস করে। দূরে যেনো শীতের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে বসন্তের হলুদ ছোপ ছোপ সেই উজ্জ্বল ডোরা কাটা প্রজাপতি গুনগুন করে আপনমনে। লাল পলাশের পদাবলীর ভালোবাসার গান দুর থেকে ভেসে আসে আমার কানে। কোথায় হতাশা, কোথায় যন্ত্রণা, কোথায় বুকের মাঝে জ্বালা সব যে গলে জল হয়ে যায়। এই ভালোবাসার মাসে, এই ভালোবাসার হারিয়ে যাওয়া পথে, প্রান্তরে, নির্জনে, চরাচরে শুধুই ভালোবাসার দীঘল ভরা চাওনির হাতছানি। যাকে আমি আজও উপেক্ষা করতে পারিনা এই এত বছর পরেও, এতদিন পরেও। আমি শুধুই এই ভালোবাসার মাসে আর প্রেমের দিবসে তিতাসের অপেক্ষায় থাকি।
হতাশার জীবন ও তিতাসের গল্প - অভিজিৎ বসু।
নয় ফেব্রুয়ারী, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন