সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজ সেই তারকদার গল্প

তারকদার সাথে দেখা হয়েছিলো আমার সেই কবে বালি হল্ট স্টেশনে। চায়ের দোকানে বসেছিলেন তিনি একটা ব্যাগ নিয়ে একমনে কাগজ পড়ছিলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। খুব সম্ভবতঃ অফিস যাচ্ছিলেন মনে হয় তিনি। চেহারাটা আগের থেকে একটু খারাপ হয়েছে তাঁর। মাথার চুলে টাক পড়েছে কিছুটা। একজন আদ্যন্ত কট্টর রাজনৈতিক আদর্শের মানুষ তিনি। কথায় কথায় এই রাজ্যে আর কিছুই হবে না বলেই তাঁর অভিমত ছিল সেই সময়।

 একসময় আর এস এস এর পত্রিকায় আর্টিকেল লিখতেন তিনি সব ভারী ভারী বিষয় নিয়ে কি বেশ পত্রিকার নাম ছিল মনে আসছে না আমার। হ্যাঁ, সব বিপদে যিনি আমায় সাহায্য করেন সেই আশীষ ঘোষ দা বললেন ওটা পাঞ্চজন্য। হাতে ইংরেজী কাগজ নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। মাথায় অনেক জ্ঞান অর্জনের নেশা ছিল তাঁর সারাদিন ধরেই। খুব সম্ভবত জুট টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। আলাপ হয়েছিল সেই সল্টলেকের দিদির সাথে দেখা করতে গিয়ে তাঁর ভাড়া বাড়িতেই। সেই রিষড়াতে নবীন পল্লীতে ভাড়া থাকতেন তাঁরা সেই সময় আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে হবে। 

দিদি আর সেই দাদার আর বৌদির সংসারে তাঁদের মা ছিলেন মাঝখানে একটা ঠিক সেতুর মতই। তারকদার আর দিদির মা আমায় ভালোবাসতেন খুব। আমি গেলেই বাঙাল ভাষায় বলতেন, অভিজিৎ আইসে রে। ওরে বসতে দে সোমা। সেই বৌদির সাথে আলাপ হওয়া বেশ মিশুকে ছিলেন তিনি, তারকদার ছোটো মেয়ে ছিল আজ নিশ্চয়ই বিয়ে হয়ে গেছে তার মেয়ের নামটা মনে পড়ছে না আর। সব মিলেমিশে একসাথে থাকা এক সংসারে। সেই সংসারে কবেই যে ফাটল ধরেছে কে জানে। সেই শ্রীরামপুরে মেজদি, কালাদা আজ আর নেই। 


 যাকগে আজ ভোরবেলায় সেই তারক সাহার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। একদিন তো শ্রীরামপুরে স্টেশনের কাছে টিকিট কাউন্টার এর সামনে দেখা হলো। বললেন কি রে কী খবর সাংবাদিকতা করছিস তুই এখনও। আমি বললাম হ্যাঁ, দাদা। বললেন কি যে সব খবর দেখায় তোদের টিভিতে বুঝিনা আমি এক দম। একটাও ভালো খবর পাওয়া যায় না আজকাল টিভিতে। সব এই হিজিবিজি, আজেবাজে খুন আর মারামারি নিয়ে খবর হয়। আমি আর সেই কথার উত্তর না দিয়ে হেসে চলে যেতাম পাশ কাটিয়ে। আর তিনি আমায় জোর করে ধরে দেশ আর দেশের নানা পরিস্থিতি আর এই রাজ্যের কি অবস্থা সেটা বোঝাতেন তিনি একটু জোর করেই। আমি ভাবতাম কখন ছাড়া পাবো আমি দাদার হাত থেকে। তবু শুনতাম তাঁর কথা।

কিন্তু এত পড়াশোনা করা একজন জ্ঞানী মানুষ কত সহজ সরল ভাবে সাধারণ ভাবে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। এদিক ওদিক তাঁকে বাইরে থেকে দেখে কোনও ভাবেই বোঝার উপায় নেই যে তিনি একজন জুট বিষয় নিয়ে টেকনোলজিস্ট বেশ ভালো সাবজেক্ট তাঁর দখলে। এতো পড়াশোনা তাঁর। আমার কদিন ধরেই মনে হচ্ছিল তাঁর কথা। মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় এই তারক সাহার কথা লিখলে কেমন হয়। আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়। 

খুব সম্ভবত এই রিষড়ার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে তিনি চলে গেলেন হিন্দমোটরে ফ্ল্যাট কিনে। তাঁর মেয়ে তখন স্কুলে পড়ে আর সেই তারকদার বোন সোমা দি মানে তাপসী ভট্টাচার্য চলে গেলেন কলকাতা সল্টলেকের বাসিন্দা হয়ে কলকাতা পুলিশের একদম নির্ভেজাল সৎ পুলিশ অফিসার সুপ্রিয়দার বউ হয়ে। ছেলের বিয়ের সময় একদিন আমায় ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। সে গল্প অন্য একদিন লিখবো। এক মহিলা সাংবাদিক থেকে এক সফল ব্যবসায়ীর গল্প। আজ সেই অনামী বিখ্যাত নয় একজন সাধারণ মানুষ সেই তারকদার কথা। 

কিছু কিছু মানুষ বোধহয় এমন নির্লিপ্ত হয়েই জীবন কাটিয়ে দেন নানা কথা ভেবেই। সেই ডানকুনি লোকাল ট্রেনে উঠেই বলতেন এই সিনিয়র সিটিজেন সিটে বসে পড় তুই তোর মাথার সব চুল সাদা হয়ে গেছে যে অভিজিৎ দিব্যি চলে যাবে কেউ বলবে না তুই সিনিওর সিটিজেন নয়। আমি বলতাম না দাদা আপনি বসুন আমি দাঁড়িয়ে চলে যাবো। একবারও সেই পুরোনো দাদা আর দিদির পরিবারের কথা আসতো না। পুরনো সেই দিনের কথা আসতো না। শুধুই দেশ আর রাজ্যের কথা। জুট ইন্ড্রাস্ট্রিতে কি করা উচিৎ সেই কথা বলতেন তিনি। কিছু খবর করার টিপস দিয়েছিলেন আমায়। এই জুট মিলগুলোর হাল খারাপ কেনো সেটা নিয়েও বলতেন তিনি। আর আমি চুপ করে শুনতাম তাঁর কথা। 

এমন ধরনের মানুষ খুব বিশেষ একটা দেখাই যায়না আজকাল। এই শুধু দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া আর শুধুই নিজের জন্যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা মানুষের মাঝে একটু অন্য এক ধরনের মানুষ। যিনি এখনও ভাবেন এই দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে। কী করে চলবে এমন করে যদি গোটা দেশে রাজনীতিকরণ হয়ে যায়। তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ কি করবে আর কোথায় যাবে তাঁরা। সেই সব নিয়েই বেশি চিন্তা করতেন তিনি। 

সেই সল্টলেকের তাপসী দিদি বলতেন ওর এই চিন্তা করতে করতে আমার দাদার মাথাটা এত বড়ো হয়ে গেছে রে বুঝলি ভাই অভিজিৎ। ওর সাথে কথা বলে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই রে অভিজিৎ। কিন্তু আমি ভাবতাম সত্যিই তো এমন মানুষও আজকাল আছেন তাহলে। কতদিন যে সেই ব্যাগ ঝুলিয়ে ধীরে ধীরে কিছু ভাবতে ভাবতে হেঁটে চলেছেন একা একাই হাওড়া স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্ম দিয়ে দেখতে পাইনি আমি। তখন মনে হতো এইসব নানা কথা শুনে আমার কি লাভ হবে। এখন এই সব নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে আর বয়স বেড়ে মনে হয় সত্যিই তো সেদিন তারকদা যা বলতেন সেটাই যে ঠিক কথা বলতেন তিনি আজ তো দেশটা রাজ্যটা কেমন যেনো থমকে দাঁড়িয়ে আছে না এগিয়ে। 

রাজনীতির ময়দানে উত্থানের পেছনে যাঁরা একদিন দৌড়ে বেড়াতেন সেই তাঁরা তো শুধু আত্মস্বার্থেই ছুটে গেলেন আর রাজনীতি করে গেলেন সারাটা জীবন ভোর। একবারও দেশের সাধারণ মানুষের কথা গরীব মানুষের কথা ভাবলেন না তাঁরা। তাদের কি করে একটু সুরাহা হয় সেই কথা মাথায় চিন্তাও করলেন না তাঁরা কেউই। শুধুই ভোটের জন্যে রাজনীতি আর ধর্ম নীতিকে লালন পালন করে গেলেন তাঁরা বেশ সুন্দর করেই। 

তাহলে সেই কবেই যে তারক দা এইসব কথাই বলতেন আমায় জোর করে রাস্তায় আটকে দাঁড় করিয়ে। সেদিন ভাল করে বুঝতাম না আমি। তাই তাঁর কথা শুনতাম না আজ বুঝি আমি সেদিন তিনি যেটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন আমি সেটা বুঝতেই পারিনি। আজ এতদিন পর দেখলাম সেই চেনা মানুষটা রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে ঠিক কথাই বলতেন তিনি। 

সত্যিই তো শুধুই একটু দু চার টাকার আর্থিক ভাতা পাওয়া, আর ঝাঁ চকচকে বন্দে ভারতের সুন্দর ছবি দেখে আর শুধু ওই পবিত্র অমৃত কুম্ভের সন্ধানে স্নান করে কি আর দেশের মানুষের জীবনকে সঠিক ভাবেই তাঁদের আর্থিক উন্নয়ন করে বদলে দেওয়া যায়। তার জন্য চাই একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। একটা সুনিপুণ ভাবনা আর গভীর চিন্তা আর তার সফল রূপায়ণ করা। সেই কথা কে আর কাকে বলে। সবাই যে বড্ড বেশি ব্যস্ত এই নানা রাজনীতি আর ধর্মনীতিকে রক্ষা করার কাজে।

 যার মাধ্যমে বেশ ভালো করেই নিজেদের ভোটের রাজনীতিকে সুরক্ষিত রাখা যাবে বছর বছর ধরে। ভাগ্যিস তারকদা সেদিন এমন দেশের কথা কিছু বলতেন আমায়। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। বহুদিন দেখা হয়নি আপনার সাথে। এইবার দেখা হলে ভালো করে বুঝতে হবে দেশের এই গভীর সমস্যার কথা। না হলে যে আগামী দিনে এই দেশ, এই রাজ্যে, কিছুতেই ভালো থাকবে না আর। সাথে সাথে ভালো থাকবো না আমরাও দেশের এই সাধারণ মানুষেরাও। রাজনীতি করা মানুষেরা যে দিব্যিই বেঁচে থাকবে। 

আজ সেই তারকদার গল্প - অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ। 
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...