সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্ষেত্র সা মেলা, হারিয়ে যাওয়া জীবন ও স্টিমার

আমার বয়স প্রায় পঞ্চান্ন বছর। আর পাঁচ বছর পরে ষাট বছর বয়স হবে আমার। দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে গেলাম আমি আর কী। এই বুড়ো বয়সেও আমার মনে পড়ে যায় সেই ছোটো বেলার এই শ্রীরামপুরের ক্ষেত্র সার মেলার কথা। আর আজ যে মেলার কথা লিখতে বসেছি আমি সেই মেলার বয়স হলো প্রায় ১২৯ বছর। কার হাত ধরে প্রথম এই মেলা দর্শনে আমি গিয়েছিলাম সেটা আজ আর মনেই নেই আমার। যাঁর হাত ধরে গিয়েছিলাম তিনিও হয়তো আর বেঁচে নেই আজ এই পৃথিবীতে। তবুও শ্রীরামপুর স্টেশনের কাছে সেই ক্ষেত্রমোহন সা স্ট্রিটে অবস্থিত প্রাচীন মেলাবাড়ি আজও কেমন করে যেন দাঁড়িয়ে আছে ভেঙে পড়া জমিদারবাড়ির ঐতিহ্যের ধারক বাহক হয়ে এই বদলে যাওয়া প্রোমোটারের গ্রাসে চলে যাওয়া শহরে। কোনো ভাবে মাথা উঁচু করে প্রোমোটারের হাতছানি এড়িয়ে অনেক কষ্ট করে সে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একা একদম একাই।

প্রায় আট বিঘা জমি, একটি পুকুর এবং একটি শিব মন্দির; একে কেন্দ্র করেই চলে এই ক্ষেত্রমোহন সা এর  শতাব্দী প্রাচীন বিখ্যাত এই হুগলী জেলার এই পুরোনো মেলা। যে মেলাকে আমরা ছোটো থেকেই ক্ষেত্র সার মেলা বলেই জানি এতদিন ধরে। শিবরাত্রির দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় এই মেলার উদ্বোধন। ভেঙে পড়া এই মেলার ইতিহাসকে বুকে আঁকড়ে মেলা বাড়ির এই পাশেই রয়েছে ক্ষেত্রমোহন সা-এর বহু বছরের পুরনো এই বসত বাড়িটি। যেখানে এখনও এই পরিবারের বংশধররা বাস করেন। যাঁরা এই মেলা করে আসছেন আজও। এই পরিবারের সদস্য গৌতম সার দাদা উত্তম সা এই মেলায় যুক্ত আছেন আজও এতদিন পরেও।, 

এই বাড়ীর ক্ষেত্রমোহন সা এই মেলার স্রষ্টা ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর পরিরারের লোকজনের দাবি, পূর্বপুরুষ ক্ষেত্রমোহন সা গোদাবরীতে স্নান করতে গিয়ে একটি শিবলিঙ্গ পেয়েছিলেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৮৯৭ সালে সেটি তিনি শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছরেই তিনি মেলা শুরু করেছিলেন বলে ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়। মেলার নাম হয় ‘শ্রী শ্রী শিবশঙ্কর জীউ কৃষি কলা শিল্প প্রদর্শনী ও মেলা’। তবে স্থানীয় লোকজনের কাছে এই মেলা পরিচিত ‘ক্ষেত্র সা’ বা ‘ক্ষেত্রমোহন সা-এর মেলা’ হিসেবেই। আগে এটিকে ‘সঙতলার মেলা’ও বলা হত। এই নামটি কেনো এলো তার কোনোও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। 

 পুরনো মন্দির ও নাটমন্দির মেলাবাড়ির অন্যতম ঐতিহ্য। মেলাবাড়ির ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দির। এখানে প্রধান আরাধ্য দেবতা শিব। তাছাড়াও রয়েছে কষ্টিপাথরের কালী, অষ্টধাতুর সূর্যদেব, পাথরের অন্নপূর্ণা, রাধাকৃষ্ণ, গণেশ, রাম-লক্ষ্মণ-সীতা, হনুমান এমনকি মহাবীরের মূর্তিও, শ্রীকৃষ্ণের নানা রূপ সাজানো আছে দেওয়াল জুড়ে যা দেখে মন ভরে যায়। মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে সুদৃশ্য পোড়ামাটির বিভিন্ন কাজ। সাম্প্রতিক আমফান ঝড়ে মন্দিরের যথেচ্ছ ক্ষতি হয়, ধ্বসে পড়ে মন্দিরের কড়ি-বরগার একাংশ। একদম লন্ড ভণ্ড অবস্হা হয় ঝড়ে এই বাড়ীর। মূল দরজা সেগুন কাঠের। দরজায় এখনও টিকে ধাতুর কারুকাজ করা আছে। তবে এই নাটমন্দির এর দেওয়ালে যেভাবে বিভিন্ন মূর্তি দিয়ে সাজানো রয়েছে সেটা ভগ্ন অবস্থা হলেও সেই সব দেখে কেমন যেনো থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। শুধুই ইতিহাসকে বুকে আগলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা। যে ইতিহাস ফ্রেড্রিকনগরের আনাচে কানাচেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আজও। 

শিল্প ও কৃষির সমন্বয়ে এই মেলার জন্ম হয়। শিবরাত্রির দিন থেকেই শুরু হয়ে এই মেলা চলে দোল পর্যন্ত, টানা এক মাস ধরে। সকাল-বিকেল দু’বেলাই পসরা সাজান দোকানিরা এই মেলার চারিদিকে। আগে এই মেলায় পুতুল নাচ হত এই বিশাল নাট মন্দিরে। সেই নাচ দেখতে ভীড় জমে যেতো এই শ্রীরামপুরের মেলায় কত লোক দেখা যেতো সেই সময়। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল দিয়ে রামায়ণ ও মহাভারতের দৃশ্যাবলীরও প্রদর্শন করা হত এই মেলায়। বর্তমানে সেসব একদম বিলুপ্ত প্রায় বলা যায়। আজ সেই রামও নেই আর রামের সাজানো সংসারও আর নেই। কয়েকটি মাটির পুতুল ছাড়া কিছুই নেই তেমন সেই সব পুতুলগুলিও এখন ভগ্নপ্রায় যা আর সাজানো হয়না এই মেলায়। যা দেখতে আমরা ছোটবেলায় হুমড়ি খেয়ে ভীড় জমাতাম এই মেলায় দাদু,আর মামাদের হাত ধরে এই নাটমন্দির। 

তবে এখনও এই মেলায় চলে কৃষিজ ফসলের প্রদর্শনী এবং আঞ্চলিক শিল্পীদের চিত্রশিল্পের প্রদর্শনী। আগে এক সময় হস্তশিল্প ও কুটীর শিল্পের প্রদর্শনীও হত এই মেলায়। বর্তমানে অনুষ্ঠানটি বজায় থাকলেও সমস্ত ব্যাপারটিই অনেকটা স্তিমিত, কোন মতে টিকে আছে মাত্র। কমেছে কৃষিজ ফসলের প্রদর্শনীও আগের থেকে অনেক। আর তাই ধর্মশালা, চিকিৎসক, অবৈতনিক বিদ্যালয় সবই ছিল এক সময়ে এই জায়গায় আজ সেসব কিছুই আর নাই। পরাধীন ভারতে হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতা থেকেও প্রচুর মানুষ আসতেন এই শতাব্দী প্রাচীন ক্ষেত্র সার বিখ্যাত মেলা দেখতে। অনেকে নাকি হাতি-ঘোড়া-উট নিয়েও আসতেন নাকি এই মেলা পরিদর্শনে এমন কথার শোনা যায় ইতিহাস ঘেঁটে। আজ সবটাই অতীত।

এক সময় দরিদ্রদের পাত পেড়ে খাওয়ানো হত এই মেলা উপলক্ষে কয়েক হাজার মানুষ খেতে আসতো এই মেলার মাঠে। সময়ের সাথে সাথে কমেছে মেলার জৌলুস। মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে রাস্তার ধারে অনেকটা জায়গা জুড়ে দোকান বসত। নয় নয় করে শ’তিনেক অস্থায়ী দোকান হত। বর্তমানে মেলার পরিধি ছোট হয়েছে, কমেছে দোকানের সংখ্যা অনেক বেশি। তবুও গৃহস্থালীর নানান জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা, বিভিন্ন খাবার-দাবার, জিলিপি, বাদামভাজা, কাঠি ভাজা নিয়ে আর সেই জলের ওপর দিয়ে ছুটে চলা টিনের স্টিমার এর আওয়াজ করে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে আজও দিব্যি বেঁচে আছে এই ১২৯ বছরের মেলাটি স্বমহিমায় নিজের মতো করেই।

ক্ষেত্রমোহন ও তাঁদের বংশধরদের আহ্বানে এই মেলাবাড়িতে নানা সময় এসেছেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর ও বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বও। মেলা প্রাঙ্গণের প্রবেশপথে একসময় নহবত বসত প্রধান গেটে। সেই জায়গাটিতে আজ বট, অশত্থ আর আগাছায় ভর্তি হয়ে গেছে।এই বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে এই মেলার প্রচলন করেছিলেন ক্ষেত্রমোহন সা এক সময়। কালের স্রোতে সব কিছু ফিকে হয়ে গেলেও জীর্ণ মেলাবাড়ি আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে মাথা তুলে এই দ্রুত ভীড়ের শহরে। 

সেই ভীড়ে ঠাসা শহরে এলোমেলো উজ্জ্বল আলো আর ভীড়ের মাঝে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে এগিয়ে চললাম আমি সেই বিখ্যাত ক্ষেত্র সা মেলার দিকে। যে মেলায় প্রতিবার বুটা আর আমি আসি ঘুরতে সেই ওর ছোটো বয়স থেকেই সেই কবে থেকেই। সেই মেলায় আমি একা একাই ঘুরে বেড়ালাম আজ। সেই ভেঙে পড়া দরজা, মাথার ওপর খোলা আকাশ, দেওয়াল বেয়ে বট গাছের ডাল আর ঝোপঝাড় এর মাঝে লুকিয়ে থাকা একশো ঊনত্রিশ বছরের ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরলাম আমি একা একদম একা।

 খুঁজে বেড়ালাম আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে।‌ সেই ছোটো বেলার জলের ওপর ঘুরে বেড়ানো স্টিমারকে। অনেক কষ্টে তাকে খুঁজে পেলাম পুকুর ধারে বসেছে একজন মানুষ সেই আমার প্রিয় ছোটবেলার চেনা খেলনা নিয়ে। সেই জলের ওপর ঘুরে যাওয়া স্টিমার কিনতে মার কাছে বায়না করছে ছোটো ছোটো ছেলেরা ভীড় করে দাঁড়িয়ে। আমি কেমন করে যেনো আটকে গেলাম ওদের সামনে। গোল হয়ে আওয়াজ করতে করতে ঘুরছে স্টিমার। আনন্দে হাততালি দিচ্ছে ছোটো শিশুরা সেটা দেখে। সবাই কেমন ত্রিশ টাকা দিয়ে সেই আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে কিনতে চাইছে, আবদার করছে তারা। কেউ কিনতে পারছে কেউ পারছে না।

 আর আমি একমনে নিরীক্ষণ করতে থাকলাম সেই স্টিমার এর যাত্রাপথ। যে যাত্রাপথে জলের মাঝে হারিয়ে গেছে আমার জীবনের পাঁচ পাঁচটা দশক কেমন করে যে জানে। আমার জীবনের হারিয়ে যাওয়া হাসি আর কান্নার এই দীঘল জীবন। আমার শৈশব, আমার কৈশোর, আমার যৌবন হারিয়ে গেছে কবেই। জলের মাঝে ঘুরছে স্টিমার। জলের মাঝে ঘুরছে আমার হারিয়ে যাওয়া জীবন। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি সেদিকে এক দৃষ্টিতে। 

ক্ষেত্র সা মেলা, হারিয়ে যাওয়া জীবন ও স্টিমার - অভিজিৎ বসু।
তেসরা মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...