হলুদ চটা পড়া দেওয়ালে হেলান দিয়ে কাত হয়ে আছে, বন্ধ রং চটা জানলা।
জানলার ওপারে অন্ধকার ঘর দোর, লাল ভেজা মেঝে, ভাঙা চোরা সংসার, কালি মাখা রান্নাঘর।
ঘরের মাথায় ঘুন পড়া, ঝুল ধরা সেই ইজিচেয়ার, কুলুঙ্গিতে মা লক্ষীর কড়ি,ধান, আরও কত কি।
জানলার গা বেয়ে নীল অপরাজিতা, টিনের চালে ঘর বেঁধেছে।
সুখের ওই অগোছালো ঘরের ভেতর, একঝাঁক নীল অপরাজিতার, হাসি মাখা লাজুক মুখ।
টিনের চালের খড় খড়ে আওয়াজ, লাউ ডগার লতিয়ে চলা জীবন, বাঁশের মাথায় ঘুন পোকার ডাক।
জানলার মরচে পড়া লোহার রডে, সাদা রং হীন দড়িতে ঝুলছে, বিবর্ণ ফাটা ছেঁড়া পর্দা।
বসন্তের বাতাসে যে বড়ই বেমানান।
জানলার ওপারে রাস্তায় অমল দইওয়ালার, মন কেমন করা দই চাই সুর।
ঘণ্টি বাজিয়ে লাল বুড়ির চুলের ডাক।
দশ পয়সার ঠাণ্ডা আইস্ক্রিমের মিঠে স্বাদ।
আমার ছোটো বেলার শৈশবের বন্ধ সেই জানলায়, আজ নানা রঙের ছোপ ছোপ দাগ।
হাজার কষ্ট করেও বসন্তের বাতাস গায়ে মেখে, সেই ছেঁড়া শৈশবের বন্ধ জানলার দাগ, তুলতে পারছি না আমি কিছুতেই।
বসন্তের বাতাস টোকা দেয় জানলায় বার বার।
মনে হয় দুম করে জানলা খুলে দিয়ে দেখি কে।
কিন্তু না, ভয় হয়, টুকরো টুকরো হারিয়ে যাওয়া জীবনের সেই ছোপ ছোপ দাগ, যদি জানলা দিয়ে উড়ে চলে যায় দূরে, অনেক দূরে, আমি জানলা বন্ধ করে, বসে থাকি।
জানলা - অভিজিৎ বসু।
উনিশে মার্চ, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন