আজ বিশ্ব কবিতা দিবস। যে কবিতা জীবনের নানা ছন্দে বেঁচে থাকে। যে কবিতা ভালোবাসায়, প্রেমে, বিরহে বেঁচে থাকে আমাদের জীবনে। যে কবিতা আষ্টেপৃষ্টে সেই বাঁকা রেল লাইনের মতো এগিয়ে চলে। যে কবিতা আমাদের কঠিন কঠোর জীবনে লতার মতো লতিয়ে বেড়ে ওঠে নিজে নিজেই। আপন ছন্দে আপন খেয়ালে।
আজ সেই বিশ্ব কবিতা দিবস। কবিতার জন্য গোটা একটা দিন। কবিতাকে দু হাতে আগলে রাখার দিন। কবিতাকে বুকের মাঝে সলতে পাকিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দিন। যে কবিতা পড়ে সেই কবিকে দেখার জন্য আকুল হয়ে ওঠা। যে মরার মত বাঁচা কবিতা দেখে সেই লেখককে খুঁজে বের করা কলেজের শান বাঁধানো লাল ফুলের পাপড়ি ঝড়া রাস্তায়। সেই আত্মাদের ভীড়ে গা ঢাকা দিতে ইচ্ছা করে। সেই কবিতাকে সম্বল করেই জীবনের বন্ধুত্বের এতো গুলো বছর কাটিয়ে দেওয়া কেমন করে কে জানে।
জীবনের বন্ধুত্বের শুরুর সেই দিন থেকে গঙ্গার ঘোলা জলে হাত পা নেড়ে সাঁতরে কাটিয়ে দেওয়া এদিক থেকে ওদিক। সত্যিই অসাধারণ এই কবিতায় ভরা বন্ধুত্ব আর সেই দুই বন্ধুর নিটোল জীবনের ছন্দময় গল্প। যেখানে কোনোও তাড়া নেই, ফাটল নেই, অবিশ্বাস নেই, চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, শুধুই সেই মরার মত বাঁচা আছে। যে মরার মত বাঁচার মধ্য বেঁচে আছে শীর্ণ নদীর মতই আমাদের সুখ দুঃখ, হাসি আর কান্নার সেই আদি অকৃত্রিম বন্ধুত্ব।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ মার্চ তারিখটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা, প্রকাশনা ও শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। ইউনেস্কোর অধিবেশনে এই দিবস ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিল, "এই দিবস বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কবিতা আন্দোলনগুলিকে নতুন করে স্বীকৃতি ও গতি দান করবে।"কবিতা মানুষের জীবন এবং তার পরিবেশের সাথে একাত্ম ভাবে জড়িত। কবিতা পাঠ এবং কবিতা দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়েই কবিতার মহত্ব প্রকাশিত হয়।
আগে অক্টোবর মাসে বিশ্ব কবিতা দিবস পালন করা হত। প্রথম দিকে কখনও কখনও ৫ অক্টোবর এই উৎসব পালিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রোমান মহাকাব্য রচয়িতা ও সম্রাট অগস্টাসের রাজকবি ভার্জিলের জন্মদিন স্মরণে ১৫ অক্টোবর এই দিবস পালনের প্রথা শুরু হয়। অনেক দেশে আজ, এবং অক্টোবর মাসের কোনো দিন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের বিকল্প হিসেবে অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসের কোনো দিন কবিতা দিবস পালনেরও প্রথা বিদ্যমান।
২০২৫ সালের বিশ্ব কবিতা দিবসের থিম হলো, " শান্তি ও অন্তর্ভুক্তির সেতু হিসেবে কবিতা ", সম্প্রীতি ও সামাজিক সংহতি বৃদ্ধিতে কবিতার রূপান্তরকারী শক্তির উপর জোর দেয়। প্রায়শই পার্থক্যের দ্বারা বিভক্ত বিশ্বে, কবিতা এক ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করে, ভাগ করা আবেগ এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষকে একত্রিত করে। আর তাই আজ বিশ্ব কবিতা দিবসে..... মনে পড়ে যায়।
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও? তারি রথ নিত্যই উধাও জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন—
শেষের কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
বনলতা সেন, জীবনানন্দ দাস।
“অবনী বাড়ি আছো
অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’”
অবনী বাড়ি আছো,শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
বাস স্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল
স্বপ্নে বহুক্ষণ
দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে–দিকচিহ্নহীন–
বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরে
তোমাকে দেখছি কাল স্বপ্নে, নীরা, ওষধি স্বপ্নের
নীল দুঃসময়ে
হঠাৎ নীরার জন্য, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
মর্মমূলে বিঁধে আছে পঞ্চমুখী তীর, তার নাম ভালোবাসা। কেটেছে গোক্ষুরে যেন, নীল হয়ে গিয়েছে শরীর, তার নাম ভালোবাসা।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা।
বকুল শাখা পারুল শাখা
তাকাও কেন আমার দিকে?
মিথ্যে জীবন কাটলো আমার
ছাই লিখে আর ভস্ম লিখে –
কী ক’রে আজ আবীর দেবো
তোমাদের ওই বান্ধবীকে !
শান্তিনিকেতন দোল, জয় গোস্বামী।
মানুষ যদি বিদ্রোহ করতে ভুলে যায় তখন তাকে মনে করিয়ে দেওয়া কি পাপ?..নবারুণ ভট্টাচার্য
এমন নানা শব্দ, নানা লাইন আমাদের মননে গেঁথে আছে। এই বিশ্ব কবিতা দিবসে সেই ঝোড়ো লাইন এর হাওয়ায় আমি বেসামাল।
বিশ্ব কবিতা দিবস - অভিজিৎ বসু।
একুশে মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন