সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বদলে গেলো লাল পার্টির সিপিএমের 'ডিপি'


 
লাল পার্টির সিপিএম। সেই লাল রঙের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত একটি কতদিনের পুরনো কঠিন গঠনতন্ত্রের গণতন্ত্র আর সমাজতন্ত্রের মিশেলের দল। ঠিক যেনো ফুটবল মাঠে জিকো আর প্লাতিনির মিশেল। সেই মুষ্টিবদ্ধ হাত আর সেই 'লাল ঝান্ডা করে পুকার ইনকিলাব জিন্দাবাদ' এর সেই বিখ্যাত স্লোগান। সিপিএম মানেই তো সেই লাল পার্টির দল। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, নগরে, বন্দরে সেই লাল এর মায়ায় লুটায়ে পড়েছে কতজন যে তার কোনোও হিসেব নেই আজ। টোকো মাথায় কৃষক, পাথর খাদানের শ্রমিক, হাতুড়ি আর কাস্তে চালানো সেই কবির লেখা বিখ্যাত লাইন,

  'ওরা চিরকাল

টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল,

ওরা মাঠে মাঠে

বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে।

ওরা কাজ করে

নগরে প্রান্তরে'।

সেই লাল পার্টির সিপিএমের যে দল, সেই দলের ফেসবুক পেজের ডিপি থেকে উধাও লাল রং। এখনও যদিও সিপিএমকে অনেকেই ‘লাল পার্টি’ বলেই অভিহিত করেন। কিন্তু রাজ্য সিপিএমের ফেসবুক পেজের ‘ডিপি’ থেকে সেই লাল রংটাই উবে গেল যে হঠাৎ করেই। আর তাতেই গেল গেল রব উঠলো সমাজ মাধ্যম জুড়ে চারিদিকে। যার বদলে জায়গা করে নিল নীল-সাদা শরতের আকাশের প্রেক্ষাপটে হলুদ রঙের কাস্তে-হাতুড়ি। যদিও শরৎ এখন বহুদূরে। এখন যে চারিদিকে বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। বসন্তের বাতাস গায়ে মেখে লাল পলাশের রক্ত ঝরা হাসি উপচে পড়ছে।

 আর তার মাঝেই এই রং বদল। যে রং আবার তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ পছন্দের রং। রং বদলের এই গৈরিকি খেলায় বেশ কিছুদিন ধরেই আক্রান্ত লাল পার্টির রক্তাল্পতায় ভোগা এই শীর্ণ সিপিএম। যে সিপিএম একদিন মানুষকে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতো, যে সিপিএম শোষণহীন সমাজ এর স্বপ্ন দেখাতো। যে সিপিএম এর অন্ধ সমর্থকরা একটা রুটি ভাগ করে খেয়ে আর বিড়ি খেয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে দল এর জন্য লড়াই করার শিক্ষা দিত। যে সিপিএমের একদিন জ্যোতি বসু ছিলেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন, যে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ছিলেন, যে সিপিএমের এম এম লরেন্স ছিলেন সেই বিখ্যাত নেতা, আবার সেই সিপিএমের বিনয় কোঙার, অশোক ভট্টাচার্য্য, অমিয় পাত্র, সুশান্ত ঘোষ, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, আর বিখ্যাত বিটি রনদিভ এঁরাও তো ছিলেন। 

আর আজ সেই সিপিএমের ফেসবুকের ডিপি থেকে লাল উধাও। শুধু তাই নয় ফেসবুকের ডিপির প্রায় একই সঙ্গে ফেসবুক পেজের কভার ছবিও বদল করা হয়েছে। তাতে অবশ্য লালের ছোঁয়া আছে একটু অন্য রকম ভাবে। তবে খুবই সামান্য সেই লাল। ‘ডিপি’ এবং কভার ছবি দু’টি ক্ষেত্রেই মুখ্য হয়ে উঠেছে নীল-সাদা। তবে কভার ফোটোতে ২০ এপ্রিলের ব্রিগেড কর্মসূচির উল্লেখ রয়েছে। 

এখন যদিও রাজ্য সরকারের যে কোনও কর্মসূচিতেই নীল-সাদার আধিক্য দেখা যায়। শুধু সরকার নয়। তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিতেও হোর্ডিং, কাপড়, আর সেই শামিয়ানাতেও রং থাকে নীল-সাদাই। যে নীল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব পছন্দের রং। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত ৭৫ দিন ধরে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারে যে সেবাশ্রয় কর্মসূচি করেছেন, তারও থিম রং ছিল নীল-সাদাই। এটাই তো তৃণমূলের ব্রিগেড এর সেই মা মাটি মানুষের সরকার এর খুব প্রিয় রং। 

সিপিএমের ফেসবুক পেজের ডিপি এর আগে লালহীন ছিল প্রায় সাত বছর আগে। সে বার একটি কাঠের আসবাবের উপর রেখে সত্যি কাস্তে এবং হাতুড়ির ত্যারছা ছবি ডিপি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে অন্য কোনও রং ছিল না। পরিবর্তিত ছবির মন্তব্যের জায়গাতেও অনেক সিপিএম সমর্থক প্রশ্ন তুলেছেন, লাল কোথায় গেল? কেউ কেউ আবার কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘মহাশূন্যে কাস্তে-হাতুড়ি’। কিন্তু এইবার এই ফেসবুক পেজের হৃৎপিণ্ডের লাল রং বদলে যাওয়ায় কেমন যেনো একটা গভীর গোপন চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়েছে সমাজ মাধ্যমে। যে সমাজ নিয়ে লাল পার্টির সিপিএমের মাথা ব্যাথা থাকলেও সমাজ মাধ্যম নিয়ে তেমন কোনো মাথা ব্যাথা ছিলো না তাঁদের কোনোও দিনই। 

তারা তো লালে লাল রাজ্যে জুড়ে, দেশ জুড়ে শুধুই লালে লাল। কিন্তু সেই লাল যে এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। আর সেই ফিকে লাল এর বাসর ঘরের ছোট্টো ছিদ্র দিয়ে পোঁছে গেছে সন্তর্পনে অন্য রং। যে রং নীল রঙের খুব কাছের রং। যে রঙ রাজ্যের শাসক দলের নেত্রীর বড়ো প্রিয় রঙ। সত্যিই অসাধারণ এই রং বদলের খেলা। আর এই রং বদল নিয়ে মুখ লুকিয়ে মুচকি হাসি হাসছে তৃণমূল। সত্যিই রং বদলের ঝড়ে আক্রান্ত সেই লাল পার্টির একসময়ে মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসা সিপিএমও। তারাও আজ কেমন যেনো বেসামাল এই সমাজ মাধ্যমেও। সত্যিই অসাধারণ এই রং বদল। 

 বদলে গেল লাল পার্টির সিপিএমের ‘ডিপি'
- অভিজিৎ বসু।
তেইশ মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক পেজ সিপিএম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...