কিছু কিছু জনের সাথে আমার কাজের অভিজ্ঞতা নেই। একসাথে কোনোদিন পথ চলা নেই। তবু কেন জানিনা তাদের কথা মনে পড়ে যায় আমার। এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই সব চেনা মানুষের কথা লিখতে ইচ্ছা হয় আমার। সেই নিউজ টাইম এর দেবকের কথা। সেই হুগলীর উত্তরপাড়ার দেবকের কথা।
সেই ওর মেয়েকে নিয়ে ও যেতো চন্দননগরের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে কতদিন কত বছর আগে। দেখা হতো মাঝে মাঝে ওর সাথে আমার। মৃদু হাসি বিনিময় ছাড়া কথা হয়নি তেমন কোনোদিন খুব একটা। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলা দুজনের। কিন্তু আজ লিখতে বসে মনে হলো কবেই যে সেই দূরত্ব ভেঙে গেছে আমাদের দুজনের। কিভাবে কে জানে।
সেই স্কুল শেষ করে ওর মেয়ের দিল্লী চলে যাওয়া। ওর সেই ফেসবুকের পোস্ট দেখে মনে পড়ে যায় সেই স্কুলের পুরোনো দিনের স্মৃতি কথা। ছোটো বেলা কাটিয়ে আমাদের মেয়েদের সব বড়ো হয়ে যাওয়া ধীরে ধীরে। আমার মেয়েও যে ছোটো থেকে বড়ো হলো এক সাথেই। দুরে থাকা সম্পর্ক, দূরে সরে থাকা সম্পর্ক একদিন হঠাৎ করেই কাছে এলো।
সেই সেক্টর ফাইভ এর নতুন এক গৌহাটির চ্যানেল তৈরি হওয়া অফিস। সেই নতুন অফিস এর কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। বাংলার সেরা বিখ্যাত সাংবাদিক এর কাছে আমরা গুটিকয় অকিঞ্চিৎকর বেকার যুবক ভীড় করেছি একটু কাজের আশায়। সেই সামনে থেকে ওর সাথে আমার কথা বলা। আসলে তার আগে কথা বলার সুযোগ আসেনি কোনোদিন দুজনের। একটা গুরুগম্ভীর ভাব নিয়েই দূরত্ব বজায় রেখেই চলা ওর।
কিন্তু যাই হোক এই তৃণমূল কংগ্রেস এর এই নবরূপ গঠনের আগে দেবক এর নানা ব্রেকিং খবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর যোগাযোগ বেশ ভালই ছিল একটা সময়। আজ যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদেরকে টেক্কা দিতে পারত ও হয়তো নিজের সম্পর্কের জোরেই। যাকগে টিভির দৌলতে সেই সময়ে সেই চ্যানেল এর দৌলতে নানা রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথেই ওর ভালো সুসম্পর্ক। সেই দেবকের কথা আজ মনে পড়ে গেলো আমার।
সেই ওর একদিন হঠাৎ করেই ফোন করা আরে অভিজিৎ তুমি এনকে টিভির কাজটা ছাড়লে কেনো। সব তুমি করলে কিন্তু ছেড়ে দিলে। হ্যাঁ, শুনে মনে হলো সত্যিই তো কেনো ছাড়লাম। আমার নিজের পাগলামো ভঙ্গিতে বললাম ওই আর কি ছেড়ে দিলাম। কাজ করলাম না আমি ওদের সাথে। কারুর পা ধরে বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না আমার। কিন্তু বলেছিল তো সে সেই কথা। যাদের সাথে বছর বছর কাজ করলাম এক অফিসে কই তাঁরা তো কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি সেই কথা কোনোদিন। কিন্তু দেবক জিজ্ঞাসা করলো। সে বলল না তোমার মেয়ের জন্য করতে পারতে কাজটা। সত্যিই তো কিন্তু না সেটা আর করতে পারিনি আমি।
আজ রাতদুপুরে সেই দেবকের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই ওর পোডিয়াম এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছবি। সেই নানা ঘটনার আর আন্দোলনের সাক্ষী থাকা। সেই ওর মেয়ের উজ্জ্বল মুখের হাসি। সেই নিউজ টাইম এর টিমের সেই বসন্তের দিনে রঙিন হওয়া ছবি। যে ছবির মাঝে লুকিয়ে আছে কত রং বেরঙ এর উজ্জ্বল স্মৃতি। যে স্মৃতি আজ অনেকটাই ধূসর হয়ে গেছে। সেই অঙ্কুর, পার্থ, মৃণাল আরও কতজন আরও কত চেনা মুখের সারি ধীরে ধীরে কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে তারা আমার কাছ থেকে। সত্যিই বলছি সেই সময়টা আমি খুব মিস করি আমি আজকাল। আর তাই আজ হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো সেই সব কথা।
সেই গমগম করা অফিস। সেই খবরের ময়দানে ঘুরে বেড়ানো কত সব নামী অনামী লোকজন। সেই রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের সাথে সাংবাদিকদের মিষ্টি মধুর সুন্দর হাসির সম্পর্ক। সেই এই পক্ষের আর ওই পক্ষের সীমারেখা বা কাঁটা তারের বেড়া থাকলেও কেমন একটা ভালো পরিবেশে কাজ করা। আজ যেনো ধীরে ধীরে এই বাংলার সুজলা সুফলা মাটি কেমন বদলে গেলো ধীরে ধীরে। এর লোক ওর লোক তৈরি হলো এই সংবাদ মাধ্যমে। সনাতনী আর সংখ্যালঘুদের মতই।
খবরের নানা বিষয়সমূহ নিয়ে কাটাছেঁড়া করা সাংবাদিকদের গায়েও সেঁটে দেওয়া হলো আমরা আর ওরার নীল সাদা আর গেরুয়া জার্সি। সত্যিই বলছি আমি সেই পুরোনো বাম আমলে এতটা প্রকট হয়নি আমরা আর ওরার দ্বন্দ্ব। সাংবাদিকদের একে অপরকে ঠেলে ফেলে দিয়ে রাজনীতির নেতাদের কাছে যাবার হুড়োহুড়ি। আজ তাহলে তো এই অবস্থা হতো না এই বাংলা মিডিয়ার। হয়তো আর কোনোদিন আমাদের একসাথে কাজ করা হবে না আর এই জীবনে দুজনের। বলেছিল ওর পোর্টালে কাজ করতে যদি কিছু করা যায় কাউকে ধরে করে বেঁচে থাকা যায় একটু। সেটা আর আমার পক্ষে করা হয়নি। যে কাজে আমি একদম অপটু বরাবর। সেটা ওকে জানিয়েছিলাম আমি।
তবুও আজ সেই কোনোদিন একসাথে কাজ না করা দুর থেকে দেখা সেই সাংবাদিক দেবকের কথা লিখে ফেললাম আজ আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে। ভালো থেকো তুমি। এইভাবে আলগোছে দূরে থেকে অনুভব করো বাংলা মিডিয়াতে আমরা আর ওরার এই অসম যুদ্ধ। যে যুদ্ধে আমরা নেমে পড়িনি। যা দেখে মনে হবে এই বেশ ভালো আছি আমরা ওই অসম যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে। এইভাবেই না হয় আমরা কাটিয়ে দি আমাদের বাকি জীবন।
নিউজ টাইমের দেবকের গল্প - অভিজিৎ বসু।
আঠাশ মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন