সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্যামেরার সেই বাপন সাউ

ক্যামেরা যার হাতে কথা বলে। ছবির নেশায় যে বুঁদ হয়ে থাকে। হাতে ক্যামেরা নিয়ে আর কাঁধে স্ট্রান্ড নিয়ে তাঁর বীরের মতই হেঁটে চলা। সেই নিউজরুম বা স্টুডিওতে নিজের ছন্দে এগিয়ে চলা। নদীর ধারে, রাস্তার পাশে, রেল লাইনের ধারে নানা ভাবে নিজেকে বিজ্ঞাপিত করা। 


সেই বাপন সাউ এর সাথে বহুদিন যোগাযোগ নেই আমার। দেখা হয়নি কথা হয়নি অনেকদিন আমাদের। সেই ২৪ ঘণ্টার ভরা সংসার এর প্রাণবন্ত তাজা আরাবুলের মতই তাজা ছেলে বাপন। অফিস এর বসদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ওর। যে কোনোও বড়ো অ্যাসাইনমেন্টের সুযোগ এলেই বাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় যাকে। 

সেই বাপন আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়। সেই যার কাছে কলকাতার সব স্টক ছবির অফুরন্ত ভান্ডার। নতুন চ্যানেল এলেই যার খোঁজ পড়ে সেই ছবির জন্য। সেই সেক্টর ফাইভের রাস্তায় ওর আর ওর বস দেবুদার হেঁটে চলে যাওয়া। সেই রাস্তায় একদিন দেখা হয়ে যাওয়া। সেই শীতের দুপুরে কেমন ঘুরে বেড়ানো ওদের আর আমাদের। নির্দিষ্ট গন্তব্যে, নির্দিষ্ট কাজ করে মাসের শেষে বেতন মেলার আশ্বাস পাওয়া।

 বেশ ভালই লাগত কিন্তু সেই জীবনটা। ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিস, সেই মিডিয়াসিটির নতুন অফিস, সেই ক্যামেরা বিভাগের নানা বিখ্যাত চিত্র সাংবাদিকদের মধ্য বাপন এর উপস্থিতি জ্বল জ্বল করতো সবসময়। হাসিখুশি সুন্দর একটা ছেলে। বেশ বিন্দাস জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ওর। সেই লাল পার্টির আমলের নেতাদের কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া নিজে নিজেই। তৃণমূল এর আমলে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া। 

সোশ্যাল মিডিয়া তে বেশ স্বচ্ছন্দ হয়ে কাজ করা। আসলে বেশ ভালো লাগে আমার ওকে। সেই ফোন করলেই দাদা কি খবর গো তোমার। সেই বাপন আজ আর ২৪ ঘণ্টা চ্যানেলে নেই মনে হয় ঠিক জানি না আমি। সেই এক বিখ্যাত দাদার ভরসায় কাজ ছেড়ে দেওয়া আবার ফিরে আসা সেই চ্যানেলে কিছুদিন পর হাসিমুখে। আসলে জীবনের এই ওঠা আর নামা। খবরের দুনিয়ায় এই ওঠা আর নামা বেশ ভালই লাগে। এই ক্ষমতার উচ্চ শিখরে থাকা আর পরক্ষণেই আবার একদম মাটিতে পড়ে যাওয়া। বাপনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। নিশ্চয়ই ও একদম আমার মত কাজের মধ্য নেই এমন নয় বোধহয়। ও কাজ করে মাঠে ঘাটে ছুটে যায়। হাসি মুখে কাজ করে।আমার মত গবেট টোটো চালক হয়ে যায় নি নিশ্চয়ই।

তবু সেই বাপন, কানাই, চঞ্চল, পার্থ, মিন্টু আরও কতজন এর সেই চেনা গা ঘেঁষাঘেঁষির হাসিখুশি সংসার। একসাথে কাজ করা। এক টিফিন ভাগ করে খাওয়া। তারপর হঠাৎ করেই সেই সংসারে ফাটল হয়ে যাওয়া।সেই কত না সুখের স্মৃতি রোমন্থন করে বেঁচে থাকা। আজ হঠাৎ করেই সেই বসন্তের দুপুরে বাপন এর কথা মনে পড়ে গেলো আমার। ভালো থেকো তুমি দাদা। টোটো চালকের লেখা পড়ে দেখো। আমার প্রনাম নিও তুমি। 

ক্যামেরার বাপন সাউ - অভিজিৎ বসু।
আঠাশ মার্চ দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...