আজ সকালে দেখলাম অনেকেই তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আমিও তাই কিছুটা বুকে বল নিয়ে লিখতে বসলাম তাঁকে নিয়ে। সেই নন্দীগ্রামের অন্ধকার রাস্তায় রাতের কলকাতা টিভির বুলেটিনে লাইভ দিচ্ছেন তিনি একা দাঁড়িয়ে। রাত নটা বা দশটার সময় হয়তো সেই বুলেটিন হচ্ছে। হুগলী জেলার রিপোর্টার হিসেবে সেই সব দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম সত্যিই এলেম আছে বটে তাঁর। বেশ দাপুটে কাজ করা একজন সাংবাদিক। যিনি সেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যে ঢুকে পড়ে একের পর এক ছবি করছেন, খবর করছেন, হাসি মুখে লাইভ দিচ্ছেন, আবার স্টুডিওতে বসে শো করছেন। বিভিন্ন চ্যানেলে কর্মরত রিপোর্টার হিসেবে। ঠিক যেনো বাংলার বরখা দত্ত স্টাইলে।
আমি কোনোও দিন তাঁর সাথে কাজ করিনি কোনো চ্যানেলে। কোনোদিন সুযোগ হয়নি আলাপ করার সৌভাগ্য হয়নি আমার কথা বলারও। শুধু দুর থেকে একজন টিভি মিডিয়ার জেলার কর্মী হিসেবে দেখে মনে হতো সত্যিই অসাধারণ এই মিডিয়ার জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন তিনি বেশ দাপটের সঙ্গেই। কিন্তু বেশি হৈ চৈ হুল্লোড় করে নয়। আজকালকার মত লোককে দেখিয়ে নয়। বাংলা টিভি মিডিয়ার এই দ্রুত বদলে যাওয়ার যুগে সেই নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর পর্বে এমন একজন সাংবাদিক হাসি মুখে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য কাজ করে গেলেন কেমন সহজ ভাবেই। কেমন করে সব কিছুই সামলে গেলেন হাসি মুখে তিনি। আর তারপর আবার এই মিডিয়ার ভীড় আর উত্তেজনার জীবন ছেড়ে কেমন করে অন্য কাজের জগতে ডুবে গেলেন তিনি টুক করে।
আজ তাঁর জন্মদিনের দিন মনে পড়ে গেলো আমার সেই বিখ্যাত সাংবাদিক মহুয়া সাঁতরার কথা। সেই নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর এর কথা। সেই বামেদের রাজত্বের কথা। সেই সব ফেলে আসা নানা দিনের কথা। যে সব দিনগুলো হারিয়ে গেলেও সেই সব দিনের অমলিন স্মৃতি আর কিছু ছবি আজও মনে পড়ে যায় আমার। কোনোও সময় তারা টিভির পর্দায়, কোনো সময় কলকাতা টিভির পর্দায় তাঁকে দেখা যেতো সেই সময়। কোনোও সময় মহাকরণে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেতো তাঁকে খবরের সন্ধানে। আবার তাঁর সেই তসলিমা নাসরিনের সাক্ষাৎকার নেওয়া। সত্যিই অসাধারণ এই মিডিয়ার জীবন থেকে হঠাৎ করেই আবার অন্য কাজে ব্যাপৃত হয়ে যাওয়া। যেটা আমি কিছুতেই পারছি না এতদিন পরেও।
আসলে এই সাংবাদিক জীবন, সেই জীবনের নানা ঘটনাময় অধ্যায়, সেই সব দিনের কাজ এর স্মৃতিকে জড়িয়েই তো বেঁচে থাকার চেষ্টা করা আর কি। তবে সেই সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম পর্বের যুগের খবর সংগ্রহ, মোবাইল এর মাধ্যমে দ্রুত ছবি চলে আসার কোনো উপায় নেই সাংবাদিক এর কাছে আজকাল এর মতো। সব খবরেই স্পটে পৌঁছে তবেই খবরের সুলুক সন্ধান করা। ছবি তোলার পর প্রত্যন্ত সেই জায়গা থেকে ওবি ভ্যানের সাহায্য ছবি পাঠানো তখনও লাইভ ইউ এত বাজারে আসেনি সেই সময়। সে একটা দিন গেছে বটে এই বাংলা সংবাদ মাধ্যমের। সেই আদিকালের যুগ। অনেকেই বলবেন এইসব কথা ভেবে আর কি লাভ হবে।
যে সংবাদ মাধ্যমে আজ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অনেক বেশি প্রকট। যে সংবাদমাধ্যমের মাথায় রাজনীতির লোকদের অনুগ্রহে বসে আছেন নানা বিখ্যাত সব বাংলার সেরা সেরা বিশ্ব বাংলার সাংবাদিক। যাঁরা রাজনীতির লোকদের নির্দেশে চালিত করেন সেই তাঁর নিজের চ্যানেলকে। সেই চ্যানেলে এডিটোরিয়াল পলিসি ঠিক করে এডিটর নয় রাজনীতির কুশীলবরাই যাঁদের হাতে ক্ষমতা থাকে তাঁরাই। কারা কাজ করতে পারবেন আর কারা খবরের মাঠের বাইরে থাকবেন সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয় এই আমলে।
এমন অবস্থা বোধহয় সেই ৩৪ বছরের বাম শাসনে দেখা যায়নি কোনোদিন। অন্ততঃ সাংবাদিকরা কাজ হারাবার ভয়ে খবর করতে ভয় পায়নি কোনো সময় কোনো পরিস্থিতিতেই। সাংবাদিকরা ভয়ে মূখ্যমন্ত্রীকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করেনি সেই সময়। কারণ প্রশ্ন করলে তার চাকরি বিপন্ন হবে কি না সেটা নিয়ে কোনো ভয় পেতে হয়নি সেই লাল সন্ত্রাসের আমলে। আজ সেই নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরে অকুতোভয় হয়ে কাজ করা এক সাংবাদিকের জন্মদিন উপলক্ষে সেই সব ফেলে আসা নানা দিনের কথাই মনে পড়ে গেলো আমার। শুভ জন্মদিন মহুয়া সাঁতরা। ভালো থাকবেন আপনি। আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে সাদা জীবনের কালো কথায় লিখে ফেললাম সেই কথা।
শুভ জন্মদিন মহুয়া সাঁতরা - অভিজিৎ বসু।
চৌঠা মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
কর্মসূত্রে মহুয়া সাঁতরার সঙ্গে অনেকটা সময় তারা নিউজ চ্যানেলে কাটিয়েছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ততার শেষ থাকত না।নিউজ নিয়ে একটা প্যাশন ছিল মহুয়ার।এতদিন পরে ফের বন্ধু অভিজিতের ব্লগে মহুয়ার লেখা পড়ে ভাল লাগল। জন্মদিন ভাল কাটুক।
উত্তরমুছুন