সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থেকো তুমি পৃথা

কেউ কেউ বহুদিনের চেনা মানুষ হঠাৎ করেই কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়। কাছের বন্ধু একটু দূরের হয়ে যায়। কেমন যেনো একটা বর্মের অন্তরালে নিজেকে গুটিয়ে নেওয় যেনো ঠিক শামুকের মতই। কখনও খবরের দুনিয়ায় আবার কখনও গানের জগতে বিচরণ করে সে হাসিমুখে। বাঁচার জন্য আর বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়াই করে সে মুখ বুজে সব সহ্য করে চুপ করে।

 
সত্যিই কতজনের কত কঠিন কঠোর হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। যা আমাদের কাছে গভীর গোপন হয়েই থাকে সবার অগোচরে জীবনের এই দীর্ঘ ছায়ামাখা পথে। আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই পৃথার কথা। সেই পৃথা দাশগুপ্তর কথা। সেই সাংবাদিক পৃথা। সেই গানের সুরে ভেসে যাওয়া পৃথা। যাকে আমি দেখলাম সিএন নিউজ এর চ্যানেলে কাজে গিয়ে। আর আগে দু একবার কথা হয়েছে ওর সাথে আমার। ওর কথা বলেছিল আমায় শুভ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার বিখ্যাত পুলিশ রিপোর্টার। তারপর ধীরে ধীরে ওর সাথে কাজের সুত্রে আলাপ হয় আমার একদিন। 

ওর বাবা, মা, ভাই, বোন নিয়ে লড়াই এর সংসার। সেই সিএন এর কাজ ছেড়ে বা তার আগে হবে হয়তো ঠিক মনে নেই আমার কিছুদিন এবিপি আনন্দে কাজ করা ওর। সেই ভোটের সময় কালিঘাট থেকে ওর লাইভ দেওয়া সুমন দের ভোটের অনুষ্ঠানে ফল প্রকাশের দিন সেই হাওড়ার ঝামেলার জায়গায় ওর পৌঁছে যাওয়া গাড়ী নিয়ে দ্রুত ভয় না পেয়ে। সেই যাদবপুরে গণ্ডগোলের সময় ওর নির্ভয়ে হাসিমুখে এডুকেশন বিটের রাজা আর রানী সাংবাদিককে গোল দিয়ে হাসিমুখে খবর জোগাড় করে আনা দৃপ্ত ভঙ্গিতে। বেশ ভালো লাগতো আমার ওর এই কাজ এর স্টাইলটা দেখে। 

আর তাই সেই গৌহাটির নতুন চ্যানেলে ওকে কাজের জন্য ডেকে নেওয়া। একটু ছটফটে, কিছু বায়নাক্কা আর কাজের সময় মুখ বুজে কাজ করে যাওয়া এক মনে। সেই মাটিতে পরে মার খেয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে নিয়ে ঠিক আছি বলা। আর তার সাথে হঠাৎ করেই গানের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মন দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গান গাওয়া। অনুষ্ঠানের মঞ্চে এদিক ওদিক অনুষ্ঠান করতে যাওয়া। সেই দ্বিমুখী প্রতিভা নিয়ে লড়াই করা এই সাংবাদিক এর কাজ হলো গৌহাটির চ্যানেল এনকে বাংলায়। আমার নিজেরও ভালো লাগলো বেশ ওর কাজ হয়ে যাওয়ায়। 

ধীরে ধীরে কাজের জগতে ডুবে যাওয়া ওর। আর আমি কাজ ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে টোটো চালক বলে। আর তাই দ্রুত গতিতে আমাদের দুজনের যোগাযোগ অনেক কমে গেছে বর্তমানে। মাঝে মাঝেই সীমাবদ্ধ জীবন এর মাঝে এই সব নানা ঘটনা মনে পড়ে যায় আমার। সেই বোলপুরে মা কঙ্কালীতলার কালীমন্দিরে শুটিং এর সময় ওর আসার খবর পাওয়া। সেই রাতে অফিস থেকে ফিরে ওর সাথে খবর নিয়ে কথা বলা। বেশ ভালই ছিল দিনগুলো কিন্তু সেই সময়।

কিন্তু সেই সব দিন কী আর একভাবেই চলে যায়। ভেঙে গেলো সুরের জলসা। ভেঙে গেলো সুরের মূর্ছনা। ভেঙে গেলো সেই এন কে টিভির সুখের হাসিখুশি সংসার। ও একা একা লড়াই করেই টিকে আছে এই মিডিয়ায় হাসি মুখে বেশ। কিছুটা ঠিক পাঁকাল মাছের মতই। তবু কেনো জানিনা মাঝে মাঝেই মনে পরে যায় আমার ওর কথা। এই সাদা জীবনের কালো কথায় ওর কথা মনে পড়ে যায় আমার। বহুজনের কথা লিখলেও ওর কথা লেখা হয়নি আমার এতদিন। 

আজ এতদিন পর মনে হলো লিখে ফেলি সেই হারিয়ে যাওয়া পৃথার কথা। যে পৃথা নিজেই লড়াই করে টিকে আছে এই খবরের দুনিয়ায়। যে পৃথা লড়াই করে টিকে আছে এই গানের দুনিয়ায়। কোনোও সময় হাসিমুখে আবার কোনোও সময় কষ্ট সহ্য করে। আমার মত পালিয়ে যায় নি সে মাঠ ছেড়ে। এটার জন্য ওকে স্যালুট জানাই আমি। 

মাতব্বর সাংবাদিকদের সাথে লড়াই করে, মাতব্বর সাংবাদিকদের সাথে কিছুটা হলেও এডজাস্ট করে টিকে আছে ও এটাই যে অনেক বড়ো ব্যাপার জীবনে। টিকে থাকা আর সংসারকে ভালবেসে টিকিয়ে রাখা। যেটা আমি পারলাম না কিছুতেই এই জীবনে। সংসার বাঁচাতে কষ্ট করে চাকরি ছেড়ে চলে না গিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন পৃথার। ব্যালেন্সের খেলায় নিজেকে বাঁচিয়ে দড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে গানের সুরে ভেসে যাওয়া। ভালো থেকো তুমি পৃথা। 

ভালো থেকো তুমি পৃথা - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ মার্চ দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...