সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভেঙে গেলো দাদা বোনের জুটি-

কিছু কিছু জুটি বোধহয় হঠাৎ করেই এই ভাবেই ভেঙে যায়। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে। কাউকে কিছু সময় না দিয়ে। কোনো সিগন্যাল না দিয়ে। দাদা আর বোনের সুন্দর সেই চেনা জুটি। আজ বোনের সেই জুটি ভাঙার কথা লেখা পড়ে মনে হলো আমারও তো দু চার লাইন লিখতে ইচ্ছা হয় বড়ো। জুটি ভাঙার খবর পেয়ে কিছুই লিখতে পারিনি আমি এতদিন ধরে, লিখতে কলম সরেনি আমার , কি লিখবো আমি বলুন তো। 


সেই প্রতিদিনের অফিসে অল্প কিছুদিন জেলায় কাজ করার সময় একটু দুর থেকেই দেখা হওয়া আমার। দাদা আর বোনকে। বোনের দাপটে কিছুটা গুটিয়ে থাকা। তবে শুনেছিলাম সেই ২৪ ঘণ্টায় কাজের সময় অ্যাসাইনমেন্টের শুভ্রজিৎ আইচ একদিন বলেছিল আমায় তোমার কথা একদিন শঙ্করদা জিজ্ঞাসা করছিলেন আমাদের পাটুলির আড্ডায়। তুমি কি করছো সেই কথা। বললেন অভিজিৎ বসু বেশ ভালো রিপোর্টার কিন্তু ও বহু পুরোনো ছেলে। আমি শুনে কিছুটা থতমত খেলাম। সেকি আমার সাথে তাঁর একসাথে কাজের খুব বেশি স্মৃতি নেই তবু তিনি মনে রেখেছেন এতদিন পরেও আমায়। বেশ প্রখর স্মৃতি তাঁর এই বয়সেও।

সেই একদিন হাওড়া স্টেশনে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে ট্রেন ধরার সময় দুজনকে দেখতে পাওয়া। না কিছুটা ্দ্বিধা আর সঙ্কোচ নিয়ে কথা বলতে না পারা এগিয়ে গিয়ে আমার,কারণ হয়তো সেই সাহস সঞ্চয় করতে না পারা। সেই বোলপুরে ওদের দুজনের ঘোরার ছবি দেখেও ফেসবুকে তার উত্তর দেওয়া। কিন্তু সামনা সামনি কথা না বলা। সেই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো দুজনে মিলে হাসিমুখে। কখনও পাহাড়, নদী, সমুদ্র, জঙ্গল এমন নানা সুন্দর জায়গায়। মাঝে মাঝেই চেনা কোপাই এর ধার ধরে ঘুরে বেড়ানো। আজ বোনের একটা পোস্ট দেখে এইসব কথা মনে পড়ে গেলো আমার আজ জুটি ভাঙার এতদিন পরেও। 

সেই প্রতিদিনের অফিস, ডেস্ক, ছাদের ক্যান্টিন, সেই ক্যান্টিনে বিকেলে গরম গরম লুচি খাওয়া, সেই সামনের চায়ের দোকান, রাস্তা পার হয়ে সাদা বাড়ীর হাতছানি। সেই কৃষ্ণ কুমার দাস, কিংশুক প্রামাণিক, সেই সবার বাপি দা মানে সুতীর্থ চক্রবর্তী, সেই তরুণ কান্তি দাস, আরও কতজন যে চেনা মুখ ছিল সেই সময়। সেই মলয়, বুদ্ধ, গৌতম ব্রম্ভ, সেই ক্ষিতীশ, অনির্বাণ, সেই নব্যেন্দু, পুলিশ রিপোর্টার সুপ্রিয় কতজন এর নাম মনেই পড়ছে না আর আজ।

 সেই দিনগুলোয় তো ছিলেন আমাদের সবার শঙ্কর দা, সবার সাথেই হাসিমুখে নিজের ভাবনা নিয়েই ঘুরে বেড়াতেন তিনি এদিক থেকে ওদিক। শুধু পড়াশোনা করে আর জ্ঞান অর্জন করে বিভিন্ন ভাষা নিয়ে চর্চা করতেন তিনি। কাগজে লিখে দিন কাটাতেন তিনি। আর মাঝে মাঝেই বেরিয়ে পড়তেন দুজনে মিলে। ঘুরতে আরম্ভ করতেন তিনি ভাবটা এমন এটাই তো আসল বিন্দাস জীবন তাঁর। 


আজ জুটি ভেঙে গেলো। আমাদের সবাইকে ছেড়ে শঙ্করদা চলে গেলেন তিনি কেমন টুক করে। চলে যাবার আগে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি তিনি চলে যাবেন। বুঝতেই পারেন নি তাঁর থেকে বয়সে অনেক ছোট হলেও সেই তাঁর আদরের প্রিয় বোন। যিনি দাদাকে দেখেই বায়না করেছিলেন তিনিও সাংবাদিক হবেন একদিন। দাদার জবাব ছিলো এই পেশায় অনিশ্চয়তা অনেক তাই অন্য কাজ করা ভালো। কিন্তু দাদার সব কথা মেনে নিলেও সেই কথা মানতে চাননি তিনি সেই বোন শতরূপা। সাংবাদিক হলেন তিনি।দাদার আপত্তি থাকলেও বোন শতরূপা এখন সাংবাদিকতা করেন।

জুটি ভেঙে গেলে কিছুদিন হৈ চৈ হুল্লোড় হয় তারপর সব কেমন থিতিয়ে যায়। বড্ড কঠিন সত্য কথা বলেছেন আপনি দিদি এটা একদম ঠিক কথা। সেই দুজনের হাসি মুখে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো, ছবি তোলা, সেই ছবি স্মৃতির পাতায় প্রকাশিত হয়ে আমাদের সবার ভালো লাগা। সেই সব কিছুই কেমন যেন বন্ধ হয়ে গেলো হঠাৎ করেই একদিন জুটি ভেঙে। যে জুটি এমন অসময়ে ভাঙার কথাও ছিল না। তবু কী আর বলবো আমি। শুধু এটাই বলবো একা একাই ভালো থাকবেন আপনি। পুরোনো দিনের স্মৃতিকে বুকে আগলে জড়িয়ে। দিদি ভালো থাকবেন আপনি। আর কী বলে আপনাকে স্বান্তনা দেবো আমি জানিনা। 

ভেঙে গেলো দাদা বোনের জুটি- অভিজিৎ বসু।
নয় ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...