সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গান্ধী পুণ্যাহ

উৎসবের নাম গান্ধীপুণ্যাহ। প্রতি বছর দশ মার্চ এই গান্ধী পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিশ্ব- ভারতীতে। এই উৎসব এমন এক উৎসব যাতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ খুব যে উৎসাহী ছিলেন, এমনটা বলা যাবে না। কিন্তু এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। এই অনুষ্ঠানের একটি সুন্দর ইতিহাস আছে। ১৯১৫ র ৬ই মার্চ গান্ধীজি দ্বিতীয়বার এসে পড়লেন শান্তিনিকেতনে। সেই সময় তাঁর সাথে কবির ঘটলো প্রথম সাক্ষাৎ, এর আগে মহাত্মা গান্ধী আশ্রমে এলেও কবির সাথে তাঁর দেখা হয় নি প্রথমবার। সে কথা পড়ে লিখছি।


সেই সময় গান্ধীজির শিক্ষাদর্শন অনুযায়ী স্বাবলম্বনের আদর্শ অনুশীলনের মাধ্যমে মহাত্মার অনুরোধে সায় দিলেন কবি। এই গান্ধী পুণ্যাহ প্রথার শুরু হল ১৯১৫ র ১০ই মার্চ। যেদিন থেকে পাচক, জলবাহী, ঝাড়ুদার, মেথরের কাজ করতে শুরু করেন আশ্রমের ছাত্র ও শিক্ষকরা সকলেই। নন্দলাল বসু,নেপালচন্দ্র রায়, প্রভাতকুমার,অ্যানড্রুজরা খুব উৎসাহী হলেও, এই সবের প্রতি কবির এক স্নেহমিশ্রিত প্রশ্রয় থাকলেও, খুব যে প্রাণের থেকে এসব গ্রহণ করেছিলেন তিনি এমনটা বলা যায় না। ওই একই সময়কালে রচিত " ফাল্গুনী" নাটকের বিষয় ও প্রতিপাদ্যও একথার সাক্ষ্য দেয়। বস্তুত "ফাল্গুনী" যেন গান্ধীজি প্রবর্তিত ফিনিক্স বিদ্যালয়ের হুকুমতামিলের শিক্ষার বিপরীতে এক মুক্ত, উদার শিক্ষার কথাই বলে। প্রাথমিক উৎসাহের পর এই স্বাবলম্বনের ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা কমতে শুরু করল। ফলে এই প্রথা পরে উঠে যায়।

 গান্ধীজির শিক্ষাদর্শে বর্ণিত অনুশাসনের আদর্শ থেকে নবীন প্রাণের আনন্দে ফিরে যায় শান্তিনিকেতন।তারপর কোপাই বেয়ে অনেক জল বয়ে যায়। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হল বিশ্বভারতী। তখন কেন্দ্রীয় সরকারী আনুকূল্যলাভের প্রতিযোগিতায় গান্ধিপুণ্যাহ আবার ফিরে পেলো তার পুনর্গৌরব। তারপর থেকে সেই পুরোনো কথাকে মনে রেখেই আজও প্রতি বছর ১০ই মার্চ পালিত হয় এই গান্ধীপুণ্যাহ। যেখানে একটি দিনের জন্য স্বাবলম্বন অভ্যাস করেন ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে সকল অধ্যাপকরা সামিল হন এই অনুষ্ঠানে। যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক অন্য বার্তা দেবার চেষ্টা করা হয় ছাত্র ছাত্রীদের মধ্য।

প্রথম বার যখন গুরুদেবের কাছে মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন সেই সময় গুরুদেব ছিলেন না আশ্রমে।তাঁর জন্য গাড়ি রাখা ছিল স্টেশনে। কিন্তু প্রথমবার সস্ত্রীক শান্তিনিকেতনে এসে ছাত্রদের সঙ্গে হেঁটেই শান্তিনিকেতনে পৌঁছন মহাত্মা গাঁধী। ফুল দিয়ে বরণ করা হয় তাঁকে। জানা যায় গুরুদেবের উদ্দেশে মহাত্মাজির টেলিগ্রাম যখন শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছায়, সেই ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ তারিখে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ছিলেন না সেই সময়। টেলিগ্রামটি পড়ে জানা গেল, দু’দিন পরেই অর্থাৎ ১৭ তারিখ মহাত্মা গাঁধী শান্তিনিকেতনে আসছেন সস্ত্রীক। হই চই পড়ে যায় আশ্রমে। সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারিদিকে। ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী মহলে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই। আশ্রমে যথোচিত মর্যাদায় তাঁদের অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আশ্রম প্রাঙ্গণে তোরণ তৈরি হয়। রাস্তা পরিষ্কার করা হয়, অভ্যর্থনার আসন-বেদি তৈরি হয়। বৈদিক রীতি অনুযায়ী আলপনা আঁকা মাটির আসন। আসন বেদির চার কোণে চারটি কলাগাছ, আমের পল্লব ও পদ্মফুল-সহ জলপূর্ণ মাটির ঘট দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়।

নির্দিষ্ট দিনে অধ্যাপক সি এফ অ্যান্ড্রুজ ও অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র মজুমদার বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে যান অতিথিদের স্বাগত জানাতে। অ্যান্ড্রুজ সাহেব মহাত্মা গাঁধীর পরিচিত। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষী সরকারের বিরুদ্ধে যখন গাঁধীজি সংগ্রাম করে চলেছেন, গোপালকৃষ্ণ গোখলের নির্দেশে তখন গাঁধীজিকে সাহায্য করার জন্য অধ্যাপক অ্যান্ড্রুজ ও অধ্যাপক পিয়ার্সন কলকাতা থেকে জাহাজে চেপে ১৯১৪-র ১ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছন এবং কিছু দিন গাঁধীজির সঙ্গে থাকেন সেই সূত্রেই পূর্ব পরিচিত তারা।

বর্ধমান থেকে ট্রেনেই গাঁধীজিকে নিয়ে তাঁরা বোলপুর স্টেশনে পৌঁছন। বোলপুর স্টেশনেও আশ্রমের একদল ছাত্র উপস্থিত ছিল তাঁকে নিয়ে আসার জন্য। অতিথিরা ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মহাত্মার নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে তারা স্টেশন চত্বর মুখরিত করে তোলে। গাঁধীজির জন্য বোলপুর স্টেশনে একটি গাড়ি রাখা ছিল। কিন্তু তিনি গাড়িতে না উঠে, ছাত্রদের সঙ্গে সস্ত্রীক হেঁটেই শান্তিনিকেতন আশ্রমে পৌঁছন।
তোরণের কাছে আসতেই তাঁদের ফুল ও চন্দনের ফোঁটা দিয়ে বরণ করা হয়। সঙ্গীতাচার্য ভীমরাও শাস্ত্রী গান ধরেন, সেতার ও এস্রাজ বাজে সঙ্গে।

 এর পর তোরণ পেরিয়ে তাঁরা যখন আশ্রমগৃহের মুখে, তখন জল ঢেলে তাঁদের পা ধুইয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁদের বসানো হয় সেই মাটির তৈরি আসন-বেদিতে। পঞ্চপ্রদীপ জ্বেলে, আবার ডালা সাজিয়ে তাঁদের বরণ করা হয়। গলায় মালা পরানো হয়, কস্তুরবা গাঁধীর কপালে সিঁদুর পরিয়ে উপহার দেওয়া হয় উভয়ের হাতে। ক্ষিতিমোহন সেন সংস্কৃত শ্লোক পাঠ করেন। মহারাষ্ট্রীয় দুই অধ্যাপক রাজাঙ্গম আয়ার ও দত্তাত্রেয় বালকৃষ্ণ কালেলকর সেগুলি গুজরাতি ভাষায় অনুবাদ করে শোনান। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচালনায় আশ্রম-ছাত্ররা গান শোনায় ও শিল্পী অসিতকুমার হালদার নিজের আঁকা ছবি উপহার দেন মহাত্মাকে।সংবর্ধনার উত্তরে গাঁধীজি দেশীয় রীতি অনুযায়ী এই অভ্যর্থনার জন্য তাঁদের কাছে আনন্দ প্রকাশ করেন। গাঁধীজির প্রথমতম শান্তিনিকেতন দর্শনের এই ছিল আনন্দময় স্মৃতি।

এর কিছু আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলন শেষ হলে, অসুস্থ শরীর নিয়ে মহাত্মা গাঁধী বোম্বাই ফিরে এসেছিলেন ১৯১৫-র ৯ জানুয়ারি। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর গড়া ফিনিক্স বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে সমস্যা হবে ভেবেই রবীন্দ্রনাথের অনুমতিক্রমে অধ্যাপক অ্যান্ড্রুজের সহযোগিতায় তাদের শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমে রেখে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা হয়েছিল।
গাঁধীজি চেয়েছিলেন, পঠনপাঠনের সঙ্গে সঙ্গেই আত্মনির্ভরশীল কর্মী গড়ে তোলা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন বন্ধনহীন আত্মবিকাশের শিক্ষা। গাঁধীজির ইচ্ছা ছিল, শান্তিনিকেতনে কিছু দিন থেকে যাবেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে তবে ফিরবেন। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি খবর আসে,গোপালকৃষ্ণ গোখলে মারা গিয়েছেন। এই মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরই গাঁধীজি সস্ত্রীক পুণে রওনা হয়ে যান।

গাঁধীজি এর পর শান্তিনিকেতনে আসেন ৬ মার্চ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এই তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ। এ যাত্রায় তিনি ১০ মার্চ পর্যন্ত থাকেন এখানে। ফিনিক্স ছাত্রদের স্বাবলম্বন প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়। তিনি বুঝতে পারছিলেন, বেশ কিছু শিক্ষক এর বিরোধী। তাঁর ‘স্বাবলম্বন’ শিক্ষাদর্শের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ শিক্ষাদর্শের পার্থক্য রয়েছে একটা।

এই প্রসঙ্গে গাঁধীজি তাঁর আত্ম-জীবনীতে এক জায়গায় লিখছেন—‘‘আমার স্বভাব অনুযায়ী আমি বিদ্যার্থী ও শিক্ষকদিগের সহিত মিলিয়া গিয়াছিলাম। আমি তাহাদের সহিত আত্মনির্ভরতা সম্বন্ধে আলোচনা করিতে আরম্ভ করিলাম। বেতনভোগী পাচকের পরিবর্তে যদি বিদ্যার্থী-শিক্ষকেরা নিজেরাই রান্না করেন, তবে ভাল হয়। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথকে জানাইলে তিনি বলিলেন, শিক্ষকেরা যদি অনুকূল হন, তবে এ পরীক্ষা তাহার নিজের খুব ভাল লাগিবে। বিদ্যার্থীদিগকে তিনি বলিলেন, ইহাতেই স্বরাজের চাবি রহিয়াছে।’’

রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের অনুমোদন পাইয়া ছাত্ররা (১০ মার্চ ১৯১৫) স্বেচ্ছাব্রতী হইয়া আশ্রমের সকল প্রকার কর্ম করিবার দায় গ্রহণ করিল—রান্না করা, জল তোলা, বাসন মাজা, ঝাড়ু দেওয়া, এমন কি মেথরের কাজ পর্যন্ত করবে তারা। অধ্যাপকদের মধ্যে সন্তোষচন্দ্র মজুমদার, অ্যান্ড্রুজ, পিয়ার্সন, নেপালচন্দ্র রায়, অসিত কুমার হালদার, অক্ষয়চন্দ্র রায়, প্রমদা রঞ্জন ঘোষ ও জীবনী লেখক প্রভৃতি অনেকেই সেদিন সহযোগিতা করিয়াছিলেন। করেন নাই এমন লোকও ছিলেন।

 আর সেই সময় থেকেই ১০ মার্চ দিনটি এখনো ‘গান্ধী পুণ্যাহ দিবস’ বলিয়া শান্তিনিকেতনে পালিত হয় প্রতি বছর। সে দিন প্রাতে পাচক, চাকর, মেথরদের ছুটি দিয়া ছাত্র ও অধ্যাপকেরা সকল প্রকার কাজ আপনাদের মধ্যে ভাগাভাগি করিয়া লইয়া মহোৎসব করেন।’’ সেই থেকেই শুরু হয় এই গান্ধী পুণ্যাহ যা আজও চলে আসছে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বছরের এই দিনটায় সকাল হতেই আজ ছুটির দিনেও সবাই হাজির হয়ে যায় ঝাঁটা হতে, কোদাল হাতে, ঝুড়ি নিয়ে। কবির কথায় আজ মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করার দিন। সত্যিই তো সবাই মিলে মিশে এই ভাবে আশ্রম পরিস্কার এর দায়িত্ব নিজেরা তুলে নেয় এই গান্ধী
 পুণ্যাহের দিনে। যার বীজ রোপণ করে গেছিলেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী।

শেষবারের মতো শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন গাঁধীজি ১৯৪৫ সালের শেষের দিকে। তার আগে আসেন ১৯৪০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। আর ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি শান্তিনিকেতন ছাড়ার আগে রবীন্দ্রনাথ গাঁধীজির হাতে একটি চিঠি তুলে দিয়ে অনুরোধ করেন—তাঁর অবর্তমানে তিনি যেন বিশ্বভারতীর প্রতি দৃষ্টি রাখেন। তার উত্তরে গাঁধীজি জানান, বিশ্বভারতীর স্থায়িত্বের বিষয়ে তিনি যথাসাধ্য করবেন। পরে গাঁধীজি রবীন্দ্রনাথের দেওয়া চিঠিটি আবুল কালাম আজাদকে দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি দৃষ্টি রাখবার অনুরোধ করেন। আজাদ সাহেব শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র সরকারের তত্ত্বাবধানে আনার ব্যবস্থা করেন। তখন অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ও গাঁধীজি দু’জনের কেউই আর বেঁচে নেই। কিন্তু এই গান্ধী আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুণ্যাহ প্রথা আজও চলে আসছে।

গান্ধী পু্ণ্যাহ - অভিজিৎ বসু।
দশ মার্চ, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...