সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গান্ধী পুণ্যাহ

উৎসবের নাম গান্ধীপুণ্যাহ। প্রতি বছর দশ মার্চ এই গান্ধী পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিশ্ব- ভারতীতে। এই উৎসব এমন এক উৎসব যাতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ খুব যে উৎসাহী ছিলেন, এমনটা বলা যাবে না। কিন্তু এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। এই অনুষ্ঠানের একটি সুন্দর ইতিহাস আছে। ১৯১৫ র ৬ই মার্চ গান্ধীজি দ্বিতীয়বার এসে পড়লেন শান্তিনিকেতনে। সেই সময় তাঁর সাথে কবির ঘটলো প্রথম সাক্ষাৎ, এর আগে মহাত্মা গান্ধী আশ্রমে এলেও কবির সাথে তাঁর দেখা হয় নি প্রথমবার। সে কথা পড়ে লিখছি।


সেই সময় গান্ধীজির শিক্ষাদর্শন অনুযায়ী স্বাবলম্বনের আদর্শ অনুশীলনের মাধ্যমে মহাত্মার অনুরোধে সায় দিলেন কবি। এই গান্ধী পুণ্যাহ প্রথার শুরু হল ১৯১৫ র ১০ই মার্চ। যেদিন থেকে পাচক, জলবাহী, ঝাড়ুদার, মেথরের কাজ করতে শুরু করেন আশ্রমের ছাত্র ও শিক্ষকরা সকলেই। নন্দলাল বসু,নেপালচন্দ্র রায়, প্রভাতকুমার,অ্যানড্রুজরা খুব উৎসাহী হলেও, এই সবের প্রতি কবির এক স্নেহমিশ্রিত প্রশ্রয় থাকলেও, খুব যে প্রাণের থেকে এসব গ্রহণ করেছিলেন তিনি এমনটা বলা যায় না। ওই একই সময়কালে রচিত " ফাল্গুনী" নাটকের বিষয় ও প্রতিপাদ্যও একথার সাক্ষ্য দেয়। বস্তুত "ফাল্গুনী" যেন গান্ধীজি প্রবর্তিত ফিনিক্স বিদ্যালয়ের হুকুমতামিলের শিক্ষার বিপরীতে এক মুক্ত, উদার শিক্ষার কথাই বলে। প্রাথমিক উৎসাহের পর এই স্বাবলম্বনের ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা কমতে শুরু করল। ফলে এই প্রথা পরে উঠে যায়।

 গান্ধীজির শিক্ষাদর্শে বর্ণিত অনুশাসনের আদর্শ থেকে নবীন প্রাণের আনন্দে ফিরে যায় শান্তিনিকেতন।তারপর কোপাই বেয়ে অনেক জল বয়ে যায়। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হল বিশ্বভারতী। তখন কেন্দ্রীয় সরকারী আনুকূল্যলাভের প্রতিযোগিতায় গান্ধিপুণ্যাহ আবার ফিরে পেলো তার পুনর্গৌরব। তারপর থেকে সেই পুরোনো কথাকে মনে রেখেই আজও প্রতি বছর ১০ই মার্চ পালিত হয় এই গান্ধীপুণ্যাহ। যেখানে একটি দিনের জন্য স্বাবলম্বন অভ্যাস করেন ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে সকল অধ্যাপকরা সামিল হন এই অনুষ্ঠানে। যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক অন্য বার্তা দেবার চেষ্টা করা হয় ছাত্র ছাত্রীদের মধ্য।

প্রথম বার যখন গুরুদেবের কাছে মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন সেই সময় গুরুদেব ছিলেন না আশ্রমে।তাঁর জন্য গাড়ি রাখা ছিল স্টেশনে। কিন্তু প্রথমবার সস্ত্রীক শান্তিনিকেতনে এসে ছাত্রদের সঙ্গে হেঁটেই শান্তিনিকেতনে পৌঁছন মহাত্মা গাঁধী। ফুল দিয়ে বরণ করা হয় তাঁকে। জানা যায় গুরুদেবের উদ্দেশে মহাত্মাজির টেলিগ্রাম যখন শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছায়, সেই ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ তারিখে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ছিলেন না সেই সময়। টেলিগ্রামটি পড়ে জানা গেল, দু’দিন পরেই অর্থাৎ ১৭ তারিখ মহাত্মা গাঁধী শান্তিনিকেতনে আসছেন সস্ত্রীক। হই চই পড়ে যায় আশ্রমে। সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারিদিকে। ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী মহলে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই। আশ্রমে যথোচিত মর্যাদায় তাঁদের অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আশ্রম প্রাঙ্গণে তোরণ তৈরি হয়। রাস্তা পরিষ্কার করা হয়, অভ্যর্থনার আসন-বেদি তৈরি হয়। বৈদিক রীতি অনুযায়ী আলপনা আঁকা মাটির আসন। আসন বেদির চার কোণে চারটি কলাগাছ, আমের পল্লব ও পদ্মফুল-সহ জলপূর্ণ মাটির ঘট দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়।

নির্দিষ্ট দিনে অধ্যাপক সি এফ অ্যান্ড্রুজ ও অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র মজুমদার বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে যান অতিথিদের স্বাগত জানাতে। অ্যান্ড্রুজ সাহেব মহাত্মা গাঁধীর পরিচিত। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষী সরকারের বিরুদ্ধে যখন গাঁধীজি সংগ্রাম করে চলেছেন, গোপালকৃষ্ণ গোখলের নির্দেশে তখন গাঁধীজিকে সাহায্য করার জন্য অধ্যাপক অ্যান্ড্রুজ ও অধ্যাপক পিয়ার্সন কলকাতা থেকে জাহাজে চেপে ১৯১৪-র ১ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছন এবং কিছু দিন গাঁধীজির সঙ্গে থাকেন সেই সূত্রেই পূর্ব পরিচিত তারা।

বর্ধমান থেকে ট্রেনেই গাঁধীজিকে নিয়ে তাঁরা বোলপুর স্টেশনে পৌঁছন। বোলপুর স্টেশনেও আশ্রমের একদল ছাত্র উপস্থিত ছিল তাঁকে নিয়ে আসার জন্য। অতিথিরা ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মহাত্মার নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে তারা স্টেশন চত্বর মুখরিত করে তোলে। গাঁধীজির জন্য বোলপুর স্টেশনে একটি গাড়ি রাখা ছিল। কিন্তু তিনি গাড়িতে না উঠে, ছাত্রদের সঙ্গে সস্ত্রীক হেঁটেই শান্তিনিকেতন আশ্রমে পৌঁছন।
তোরণের কাছে আসতেই তাঁদের ফুল ও চন্দনের ফোঁটা দিয়ে বরণ করা হয়। সঙ্গীতাচার্য ভীমরাও শাস্ত্রী গান ধরেন, সেতার ও এস্রাজ বাজে সঙ্গে।

 এর পর তোরণ পেরিয়ে তাঁরা যখন আশ্রমগৃহের মুখে, তখন জল ঢেলে তাঁদের পা ধুইয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁদের বসানো হয় সেই মাটির তৈরি আসন-বেদিতে। পঞ্চপ্রদীপ জ্বেলে, আবার ডালা সাজিয়ে তাঁদের বরণ করা হয়। গলায় মালা পরানো হয়, কস্তুরবা গাঁধীর কপালে সিঁদুর পরিয়ে উপহার দেওয়া হয় উভয়ের হাতে। ক্ষিতিমোহন সেন সংস্কৃত শ্লোক পাঠ করেন। মহারাষ্ট্রীয় দুই অধ্যাপক রাজাঙ্গম আয়ার ও দত্তাত্রেয় বালকৃষ্ণ কালেলকর সেগুলি গুজরাতি ভাষায় অনুবাদ করে শোনান। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচালনায় আশ্রম-ছাত্ররা গান শোনায় ও শিল্পী অসিতকুমার হালদার নিজের আঁকা ছবি উপহার দেন মহাত্মাকে।সংবর্ধনার উত্তরে গাঁধীজি দেশীয় রীতি অনুযায়ী এই অভ্যর্থনার জন্য তাঁদের কাছে আনন্দ প্রকাশ করেন। গাঁধীজির প্রথমতম শান্তিনিকেতন দর্শনের এই ছিল আনন্দময় স্মৃতি।

এর কিছু আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলন শেষ হলে, অসুস্থ শরীর নিয়ে মহাত্মা গাঁধী বোম্বাই ফিরে এসেছিলেন ১৯১৫-র ৯ জানুয়ারি। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর গড়া ফিনিক্স বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে সমস্যা হবে ভেবেই রবীন্দ্রনাথের অনুমতিক্রমে অধ্যাপক অ্যান্ড্রুজের সহযোগিতায় তাদের শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমে রেখে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা হয়েছিল।
গাঁধীজি চেয়েছিলেন, পঠনপাঠনের সঙ্গে সঙ্গেই আত্মনির্ভরশীল কর্মী গড়ে তোলা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন বন্ধনহীন আত্মবিকাশের শিক্ষা। গাঁধীজির ইচ্ছা ছিল, শান্তিনিকেতনে কিছু দিন থেকে যাবেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে তবে ফিরবেন। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি খবর আসে,গোপালকৃষ্ণ গোখলে মারা গিয়েছেন। এই মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরই গাঁধীজি সস্ত্রীক পুণে রওনা হয়ে যান।

গাঁধীজি এর পর শান্তিনিকেতনে আসেন ৬ মার্চ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এই তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ। এ যাত্রায় তিনি ১০ মার্চ পর্যন্ত থাকেন এখানে। ফিনিক্স ছাত্রদের স্বাবলম্বন প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়। তিনি বুঝতে পারছিলেন, বেশ কিছু শিক্ষক এর বিরোধী। তাঁর ‘স্বাবলম্বন’ শিক্ষাদর্শের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ শিক্ষাদর্শের পার্থক্য রয়েছে একটা।

এই প্রসঙ্গে গাঁধীজি তাঁর আত্ম-জীবনীতে এক জায়গায় লিখছেন—‘‘আমার স্বভাব অনুযায়ী আমি বিদ্যার্থী ও শিক্ষকদিগের সহিত মিলিয়া গিয়াছিলাম। আমি তাহাদের সহিত আত্মনির্ভরতা সম্বন্ধে আলোচনা করিতে আরম্ভ করিলাম। বেতনভোগী পাচকের পরিবর্তে যদি বিদ্যার্থী-শিক্ষকেরা নিজেরাই রান্না করেন, তবে ভাল হয়। এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথকে জানাইলে তিনি বলিলেন, শিক্ষকেরা যদি অনুকূল হন, তবে এ পরীক্ষা তাহার নিজের খুব ভাল লাগিবে। বিদ্যার্থীদিগকে তিনি বলিলেন, ইহাতেই স্বরাজের চাবি রহিয়াছে।’’

রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের অনুমোদন পাইয়া ছাত্ররা (১০ মার্চ ১৯১৫) স্বেচ্ছাব্রতী হইয়া আশ্রমের সকল প্রকার কর্ম করিবার দায় গ্রহণ করিল—রান্না করা, জল তোলা, বাসন মাজা, ঝাড়ু দেওয়া, এমন কি মেথরের কাজ পর্যন্ত করবে তারা। অধ্যাপকদের মধ্যে সন্তোষচন্দ্র মজুমদার, অ্যান্ড্রুজ, পিয়ার্সন, নেপালচন্দ্র রায়, অসিত কুমার হালদার, অক্ষয়চন্দ্র রায়, প্রমদা রঞ্জন ঘোষ ও জীবনী লেখক প্রভৃতি অনেকেই সেদিন সহযোগিতা করিয়াছিলেন। করেন নাই এমন লোকও ছিলেন।

 আর সেই সময় থেকেই ১০ মার্চ দিনটি এখনো ‘গান্ধী পুণ্যাহ দিবস’ বলিয়া শান্তিনিকেতনে পালিত হয় প্রতি বছর। সে দিন প্রাতে পাচক, চাকর, মেথরদের ছুটি দিয়া ছাত্র ও অধ্যাপকেরা সকল প্রকার কাজ আপনাদের মধ্যে ভাগাভাগি করিয়া লইয়া মহোৎসব করেন।’’ সেই থেকেই শুরু হয় এই গান্ধী পুণ্যাহ যা আজও চলে আসছে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বছরের এই দিনটায় সকাল হতেই আজ ছুটির দিনেও সবাই হাজির হয়ে যায় ঝাঁটা হতে, কোদাল হাতে, ঝুড়ি নিয়ে। কবির কথায় আজ মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করার দিন। সত্যিই তো সবাই মিলে মিশে এই ভাবে আশ্রম পরিস্কার এর দায়িত্ব নিজেরা তুলে নেয় এই গান্ধী
 পুণ্যাহের দিনে। যার বীজ রোপণ করে গেছিলেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী।

শেষবারের মতো শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন গাঁধীজি ১৯৪৫ সালের শেষের দিকে। তার আগে আসেন ১৯৪০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। আর ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি শান্তিনিকেতন ছাড়ার আগে রবীন্দ্রনাথ গাঁধীজির হাতে একটি চিঠি তুলে দিয়ে অনুরোধ করেন—তাঁর অবর্তমানে তিনি যেন বিশ্বভারতীর প্রতি দৃষ্টি রাখেন। তার উত্তরে গাঁধীজি জানান, বিশ্বভারতীর স্থায়িত্বের বিষয়ে তিনি যথাসাধ্য করবেন। পরে গাঁধীজি রবীন্দ্রনাথের দেওয়া চিঠিটি আবুল কালাম আজাদকে দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি দৃষ্টি রাখবার অনুরোধ করেন। আজাদ সাহেব শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র সরকারের তত্ত্বাবধানে আনার ব্যবস্থা করেন। তখন অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ও গাঁধীজি দু’জনের কেউই আর বেঁচে নেই। কিন্তু এই গান্ধী আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুণ্যাহ প্রথা আজও চলে আসছে।

গান্ধী পু্ণ্যাহ - অভিজিৎ বসু।
দশ মার্চ, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...