আজ লক্ষ্মীবার। আজ ফল প্রকাশের দিন। আমার পরীক্ষার ফল প্রকাশ নয়। টোটো চালকের আর জীবনে কি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলুন এই বুড়ো বয়সে। সব পরীক্ষা পার করে, সবার সব হুমকি হজম করে, সাদা খাতা জমা দিয়ে আমার টোটো চালিয়ে বিন্দাস ঘুরে বেড়ানো, এলোমেলো, এলেবেলে জীবন নিয়ে আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে হেঁটে বেড়ানো।
তাই বৃহস্পতিবার সকাল হলেই যে দুরু দুরু বুকে টিআরপি এলো কি না দেখতে চেয়ে এদিক ওদিক ঘুর ঘুর করতাম আমি অফিস এর বসদের কাছে সেই সব কাঁচের ঘরের চারপাশে। সেই সব দিন কবেই শেষ হয়েছে আমার জীবনে। অস্তমিত সেই সব দিন নিয়ে কোনোও আফশোষ নেই আমার। দুঃখ নেই। বিলাপ নেই। যন্ত্রণা নেই। অনুশোচনা নেই। হা হুতাশ নেই। কিছুই নেই আর।
প্রতি সপ্তাহের মতই সকাল সকাল টিআরপি পেলাম আমি এইদিন ও। যে আমায় টোটো চালক হলেও মনে রেখে ভালোবেসেই এই টিআরপি দেয় প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার। মনে করে না কি লাভ হবে এই ফালতু লোক কে টিআরপি দিয়ে। সে তো আর মিডিয়ার কেউ নয়। বাতিলের দলে সে এখন। আর যাই হোক অন্য দিনের মতোই একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেওয়া কি রেজাল্ট হলো সেটা।
সেই ২০১১ সাল থেকেই তো এই বাংলায় হাজার ঝড় ঝাপটা সামলে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়ে, কখনো পক্ষে আবার কোনো সময় বিপক্ষে থেকে গত ১৪ বছর ধরেই তো এক নম্বর চ্যানেলের তকমা পড়ে বসে আছে সে এই বাংলার সেরা চ্যানেল এগিয়ে থাকে আর এগিয়ে রাখে। সেই রামচন্দ্রের বনবাস এর সময় এর মত। ভাবা যায় একটা চ্যানেল ১৪ বছর ধরে রোদে পুড়ে, জলে ভিজে এক নম্বর হয়ে বসে আছে সবাইকে হাসিমুখে শুভেচ্ছা জানিয়ে। কেউ টপকে যাবার চেষ্টা করেও পারেনি সেটা।
এক এক সময় মনে হয় এই রাজাকে বোধ হয় আর সিংহাসনচ্যুত করা যাবে না কোনোদিন কোনো সময় কিছুতেই। কিন্তু সেই রাজার আসন টলে গেলো আজ। কিস্তিমাত হলো অনেক কষ্ট করে অবশেষে। হাসি ফুটলো বিশ্ব বাংলার সেরা সেরা সাংবাদিকদের মুখে। উচ্ছাস দেখিয়ে যারা কোনও দিন টোটো চালককে ভুলেও টেক্সট করেন না তারাও লিখে ফেললেন আমরা আজ এক নম্বর। কেউ লিখলেন জন্মদিনের দিন বড়ো খবর পেয়ে ভালো লাগছে আমার। সমাজ মাধ্যমের দেওয়াল জুড়ে শুধুই কিস্তিমাত আর কিস্তিমাত আর কিস্তিমাত।
টোটো চালকের একটু সন্দেহ হলো। কিসের কিস্তিমাত
হলো। সত্যিই কি রাজার আসন ১৪ বছর পর টলে গেলো। তাহলে কি সত্যিই রাজা তোর কাপড় কোথায় বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হবে এইবার গোটা রাজ্য জুড়ে। ভেঙে পড়বে তিলতিল করে তৈরি করা ১৪ বছরের শক্ত ইমারত। শুধু ওই ল্যান্ডিং পেজের আওতায় থেকে। যে ডেন আর হ্যাথওয়েট ল্যান্ডিং পেজের মালিক নাকি স্বয়ং মুকেশ আম্বানি। যিনি দেশের প্রায় সবকিছুই অবলীলায় কিনে নিতে পারেন শুধুই টাকার জোরে। আর তাই টিভি খুললেই গ্রামে, গঞ্জে ,শহরে, মফস্বলে সর্বত্র দেখা যাবে শুধুই কিস্তিমাত চ্যানেলের খবর। যা দেখাতে এক পয়সাও খরচ করতে হবে না তাদের।
তাহলে এই কিস্তিমাত কিসের জোরে। খবরের বিষয় সমূহের জোরে, খবরের কন্টেন্ট এর জোরে নাকি অন্য কিছুর জোরে। টোটো চালকের চিন্তা সেটা নিয়েই। যে চ্যানেলকে ১৪ বছর ধরে কেউ হারাতে সক্ষম হলো না। সেই বিখ্যাত হাসি মুখের সাংবাদিক এর দ্রুত এগিয়ে চলা চ্যানেল এর না বলা কথা, সেই বিখ্যাত খবর যেখানে থেমে থাকে না, সেই রাতদিন সাতদিন এর মত সবাইকে পিছনে ফেলে আজ শুধুই আমার বাংলায় কিস্তিমাত এর দিন। যে কিস্তিমাত নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে গেছে এই বিশ্ব বাংলায় গ্রামে,শহরে সব জায়গায় সত্যিই অসাধারণ এই কর্পোরেট কিস্তিমাত।
কর্পোরেট কিস্তিমাত - অভিজিৎ বসু।
ছয় ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন