সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজ সেই সবুজদার কথা

সবুজদার সাথে আমার বহুদিন আড্ডা মারা হয়নি। এই নীল সাদা প্রকৃতির কোলে সবুজদার সাথে আমার বহুদিন দেখা হয়নি। সেই কলকাতার ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় কিম্বা সোনাঝুড়ির ফাঁকা রাস্তায় হাঁটা হয়নি বহুদিন। জানা হয়নি সেই তাঁর সাধের প্রিয় একটুকরো নিজের হকের জমি ফিরে পেতে এখনো তিনি লড়াই করছেন কি আদালতের দরজায় ঘুরে ঘুরে। সেই নিজের জমির জন্য লড়াই। সেই তাঁর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি। সেই তাঁর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তাঁর হন্তদন্ত হয়ে অফিস আসা। সেই দাদা আপনি চিন্তা করবেন না আমি লিখে দিচ্ছি এই প্যাকেজটা। একদম নিশ্চিন্তে থাকুন আপনি ঠিক সময়ে হয়ে যাবে দাদা।


সবুজদার সাথে আমার দেখা হয়েছিল সেই ঘেরাটোপে বন্দী জীবন এর একটি স্বার্থপর দৈত্যের সেই খবরের বাগানে। যে বাগানে আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেমন হুট করে ঢুকে পড়েছিলাম একদিন আমার চাকরি জীবনে। জানতাম না এই সুন্দর বাগানে এক স্বার্থপর দৈত্য বাস করে। সে যাকগে বাদ দিন সেই সব কথা। আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই সাদা কালো ফ্রেমে নানা ছবির কোলাজে ধরার চেষ্টা করা সেই সবুজদার কথা। এই বাংলা সিনেমার জগতের মত বাংলা মিডিয়ায় যে কতজন এর সাথে আলাপ হলো, দেখা হলো তার আর শেষ নেই এই জীবনে।

সবুজদাকেও পেলাম আমি বিরাটির সেই সিএন নিউজ চ্যানেলের অফিসে। অল্প কদিনের আলাপ আমাদের দুজনের। ভালো করে জানাই হয়নি তাঁর সমন্ধে আমার খুব বেশি স্মৃতিও নেই তাই আমাদের দুজনের এই ছোটো কর্মজীবনে। তবুও কেনো জনিনা আজ হঠাৎ করেই সবুজদার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই মোটা ফ্রেমের চশমা। সেই হাফ শার্ট পড়ে আর কাঁধে সাইড ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিস আসা তাঁর। মুখের হাসিটা ঝুলছে ঠিক বাঁকা চাঁদের মত। সেই রাতের বেলায় দৌড়ে দশটা বেজে গেছে বাস না পেয়ে উবের ভাড়া করে বাড়ী ফেরা তাঁর। পরদিন অফিস এসে বলতেন কি কষ্ট করে তাঁকে বাড়ী ফিরতে হলো সেই নানা দুর্ভোগের কথা। 

সেই বিরাটি অফিসে কতজন এর সংসার। বুম্বার সংসার, সেই বাবলাদার সংসার। বিখ্যাত সাংবাদিক সৈকত এর সংসার, সেই পার্থদার সংসার। সেই তনিমার সংসার। আরও কতজন যে ছিল সেই সংসারে। ও হ্যাঁ, ইনপুট এর এডিটর সেই ভাস্করের সুখের সংসার। সেই চ্যানেলের দুই এইচ আর এর সংসার। আর সেই ডেস্ক এর পার্থদার সংসার। কিন্তু এই সবের থেকে কেমন আলগোছে দূরে থাকতেন আমাদের সেই সবুজদা। সেই সিএন এর ভীড় অফিস। সেই ক্যান্টিন। সেই বিকেল বেলায় চা খেতে বাইরে যাওয়া। সেই নিউজ রুমে আশীষ ঘোষদার প্রবেশ করা কি রে কি খবর বলে। সেই হঠাৎ করেই একদিন বর্তমানের বিখ্যাত সাংবাদিক নিমাই দের প্রবেশ করা।

সেই বিখ্যাত সাংবাদিক প্রসূন গুপ্তর সাথে সান্ধ্য আড্ডায় যোগ দেওয়া আমার। বেশ ভালই ছিল কিন্তু সেই বিরাটির অফিস এর সময়কাল। আমি ভেবে ছিলাম কেটে যাবে এই ভাবেই দিনগুলো বেশ সবার সাথেই হেসে খেলে ২৪ ঘন্টার চাকরী ছেড়ে এসে। কিন্তু না কপালে সেই দিন ভালো দিন আর বেশিদিন কাটলো না আমার। আজও মনে পড়ে সেই সত্যেন, হরিহর, শাশ্বতী দি,অরূপ, কৃষ্ণদা, প্রভাত, ডিকে, সেই তারকেশ্বর থেকে ডিউটি করতে আসা অ্যাসাইন মেন্টের সেই নামটা ভুলে গেলাম যে যাকে আমি গৌহাটি পাঠালাম এন কে বাংলায়। সেই সায়নী, প্রদীপ্ত, সুদীপা , রীনা, আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। 


আজ বহুদিন পরে মনে পড়ে গেলো সেই সব কথা। সেই একদিন হঠাৎ করেই আমার কাজ চলে যাওয়ার খবর পাওয়া এক সন্ধ্যায়। এইচ আর এর আমায় ডেকে বলে দেওয়া কাল থেকে আর আসতে হবে না আমায়। মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়া। সেই ভীড় সংসারে কেমন একা হয়ে যাওয়া ধীরে ধীরে। যোগাযোগ কমে গেলো সবার সাথেই আমার। আগে কিছু কিছু লোকের সাথে ফোনে কথা বলা হতো। সেই সবুজদার সাথে কতদিন কথা হয়েছে খবর পেলেই কাজের খবর দেবেন তিনি। এককথা সত্যেন এর সাথেও হয়েছে। না আর কোনোও খবর আসেনি আর। কাজে ফেরার কোনোও খবর আর আসেনি আমার।

 সেই নিউজ রুমে প্রবেশের খবর। সেই খবরের উত্তেজনায় চিৎকার এর খবর। সেই রক্ত গরম করা শরীর গরম করা খবর। যে খবরকে আমি আজও বড্ড ভালবাসি যে। যে খবর আজও আমার রক্তে মিশে আছে ঠিক সুগারের মতই। আজ সবুজদার কথা লিখতে বসে আমার মনে পড়ে গেলো এইসব নানা আজেবাজে কিছু বাজে কথা। সবুজদা আশাকরি কিছু ভুল বুঝবেন না আপনি। আজ বহুদিন পর কেমন যেন আবার খবরে প্রবেশ করতে মন চাইছে আমার। খবরের ভীড়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে আবার। সেই দৌড়ে দৌড়ে কাজ করতে ইচ্ছা হচ্ছে আমার। কে জানে রাত বাড়লে হয়তো এমন হয়। বসন্তের গুটি পোকা হয়তো আমায় কামড়ায় মাঝে মাঝেই। আপনি ভালো থাকবেন সবুজ দা। 

আজ সেই সবুজদার কথা - অভিজিৎ বসু।
সাতাশে মার্চ, দু হাজার পঁচিশ। 
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...