আজ রূপুর জন্মদিন। আজ সেই মেজদির ছোট্টো রূপু দেখতে দেখতে কত বড়ো হয়ে গেছে। যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুরফুরা শরীফে এসে আকবর আলী খোন্দকার এর নাম বললেন। সেই হুগলী জেলার নেতা আকবরদার কথা বলেন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন আগে আকবর এর সাথে কতবার যে এখানে এসেছেন তিনি, সেই স্মৃতি রোমন্থন করে ফিরে যান তিনি পুরোনো দিনে সেই আন্দোলন এর দিনে।
আর ঠিক তারপর দিন আজ আকবরদার ছেলের জন্মদিন। রূপু ওর ডাক নাম। ভালো নাম আহ্ণিক খোন্দকার আকবর আলী খোন্দকার এর ছেলে। সেই রূপু আর রোজকে নিয়েই মেজদির সংসার। সেই আকবর দা চলে যাওয়ার পর থেকে কঠিন আর কঠোর সংগ্রামের জীবন মেজদির ঘরে আর বাইরে। ছেলে মেয়ে পরিবারকে নিয়ে একহাতে সব সামলে নিয়ে লড়াই করে বেঁচে থাকা।
সেই ছোট্টো রূপুর আমার মনে আছে সেই শেওড়াফুলির ভাড়া বাড়িতে দোতলায় একটা খাটে শুয়ে শুয়ে ওর হাত পা নাড়া। খাট থেকে পড়ে যাবার ভয়ে বালিশ দিয়ে আটকে রাখা ওকে । ওর বাবা তখন ভোটের কাজে ব্যস্ত। শরীর খারাপ নিয়েও এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো আকবরদার সেই অসুস্থ অবস্থায়। এম পি ভোট বলে কথা। আর মেজদি মানে বর্তমানের চন্ডীতলার বিধায়ক স্বাতী খোন্দকার তখন ভাত আর পেঁপে সেদ্ধ আর উচ্ছে সেদ্ধ করে খেতে দিচ্ছেন আকবরদাকে। ছেলে কাঁদছে খাটে শুয়ে।
সেই সকাল বেলায় ভাড়া বাড়িতে এম পির কাছে হাজির আমি আর মিন্টে। কোনো নিরাপত্তা নেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে অন্দরমহলে চলে যাওয়া। আমাদের দেখেই আকবরদার বলা অভিজিৎ আর মিন্টে এসেছে ওদের কিছু খেতে দাও আগে। ফ্রিজ থেকে মেজদির এতো মিষ্টি বের করে দেওয়া আমাদের দুজনকে। আমি বললাম,না না সকালে এতো মিষ্টি খাবো না আমরা। তুমি আমাদের ইন্টারভিউ দাও আগে। একদম হাত বাড়ালেই নেতা। হাত বাড়ালেই বন্ধুর মতই।
একদম ঠিক আজকের মতো ঝাঁ চকচকে জীবন নয় এমপি হয়েও। কেমন সাধারন হয়েই বেঁচে থাকা সবার মাঝে। দূরে সরে থাকা নয়, একটা গণ্ডি বা ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে নয়। আজ সেই আকবরদার ছেলের জন্ম দিনে সেই কথাই মনে পড়ে গেলো আমার এতদিন পরেও। যেমন ফুরফুরা শরীফ সফরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হঠাৎ করেই আকবরদার কথা মনে পড়লো। যার পরের দিন সেই মমতার বড় প্রিয় সেই বহু আন্দোলনে সঙ্গী আকবর এর, সেই সবার বড়ভাই এর ছেলের জন্মদিন আজ। সেই ছোট্টো রূপুর জন্মদিন আজ।
যে দিনটা এলেই মেজদির মনে পড়ে যায় সেই পুরোনো ফেলে আসা দিনের কথা। সেই তার স্বামীর কথা, সেই রক্তাক্ত রাজনীতির দিনগুলোর কথা। সেই তাঁর হঠাৎ করেই সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর একা হাতে সব সামলে রোজ আর রূপুকে বড়ো করার কথা। আর আজ সেই ছেলের জন্মদিনে তাকে দেখে বুকটা ভরে যায় মায়ের। মনে পড়ে যায় তাঁর ভালবাসার মানুষটার কথা। আজ যে সেই মানুষটা অনেক দূরে চলে গেছেন তাদের তিনজনকে ছেড়ে।
মনে মনে তাঁর কাছে বলে, তুমি ছেলেকে আজ দুর থেকেই আশীর্বাদ করো। ও যেনো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে ঠিক তোমার মতোই। ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে নয়। মানুষের পাশে থাকতে পারে যেনো সব সময়। জন্মদিনে এর থেকে বেশী আর কি চাইবো আমি। মাকে জড়িয়ে ধরে সেই ছোট্টো রূপু। পাশে এসে দাঁড়ায় রোজ। মেজদি আবেগে আপ্লুত হয়ে ভেসে যায়। আর কানে বাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কথা, আমি আকবর এর সাথে অনেকবার এই ফুরফুরায় এসেছি। মেজদি ছেলে আর মেয়েকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে। শুভ জন্মদিন রূপু।
শুভ জন্মদিন রূপু - অভিজিৎ বসু।
আঠারো মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন