সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বর্ধমানের ১০৮ শিব মন্দির দর্শন


বয়স বাড়লে মনে হয় দেবদ্বিজে ভক্তি বাড়ে মানুষের। যত শেষের দিন এগিয়ে আসছে শেষের সেই দিন ভয়ঙ্কর বলেই মনে হচ্ছে আমার। তাই আমার কেমন যেনো মন্দির, মসজিদ, গীর্জায় যাওয়ার ঝোঁক বাড়ছে দিনকে দিন। আর তাই আগে তো কতবার এই রাস্তায় গেছি গাড়ি নিয়ে। কলকাতার পথে বোলপুর হয়ে। আবার বোলপুর থেকে শ্রীরামপুরে গেছি আমি। সেই বর্ধমানের একশো আট শিব মন্দিরের পাশ দিয়ে। কিন্তু দাঁড়াবার সৌভাগ্য হয়নি আমার। আজ বোলপুর থেকে জামালপুরে যাওয়ার ফিরতি পথে বিকেল বেলায় দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি গাড়ী থামিয়ে। সেই একশো আট শিব মন্দিরের সামনে। ঢুকে পড়লাম মাত্র দু টাকার টিকিট কেটে। গাড়ি পার্কিং এর জন্য মাত্র পঁচিশ টাকা নিলো। বেশ খালি পায়ে হেঁটে বেড়ালাম আমরা দুজনে মিলে একসাথে সৃষ্টির মালিক, স্থিতির মালিক সেই শিবের দরবারে একটু শান্তির আশায়। 


হিন্দুদের প্রধান দেবতা রূপে যিনি পূজিত হন তিনি হলেন ভগবান শিব। এই আদিদেবতার আর্বিভাব সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয় প্রাক বৈদিক যুগকে । বর্তমানে শিব যে রূপে পূজিত হন সেই রূপটি মূলত প্রাক-বৈদিক যুগ এবং বৈদিক যুগের শিব মূর্তির মিশ্র সংস্করণ। সৃষ্টির এই দেবতাকে কেন্দ্র করে নানান বিশ্বাস প্রচলিত আছে। যেমন ত্রিমূর্তি অর্থাৎ ভগবান ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু ভগবান শিবেরই আলাদা আলাদা রূপ। কিংবা শিব তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস করেন কৈলাশ পর্বতে; ইত্যাদি নানান ধরণের জনমত শুনতে পাওয়া যায় । এই আদিদেবতা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নানান রূপে পূজিত হন। ভারত ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গেও এই দেবতার আরাধনা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের এমনই শিব মন্দির দর্শনের জন্য পৌঁছে যেতে পারেন বর্ধমানের ১০৮ শিব মন্দির । এই মন্দিরটি প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা আছে প্রতিদিন ।

বর্ধমানের নবাবহাটে অবস্থিত এই ১০৮ শিব মন্দিরটির একটি প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। কথিত আছে, নবাবহাট একসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মন্বন্তরের কারণে জনশূন্য হয়ে পড়ে। ঠিক এই সময়েই ইংরেজদের সঙ্গে বর্ধমানের বিধবা রানী বিষ্ণুকুমারীর (যিনি রাজা তিলোকচাঁদের পত্নী ছিলেন) গোলযোগের সৃষ্টি হয়। তবে রানী ভক্তিমতী থাকায় একসময় বর্ধমান সমস্ত দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায়। একদা রানী স্বপ্নে মন্দির নির্মাণের জন্য দৈব আদেশ পান। এই স্বপ্ন অনুসারেই ১৭৮৮ সালে এই মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। স্বপ্নাদেশ অনুসারে রানীকে ১০৮ টি শিব মন্দির স্থাপনের কথা বলা হয়। একটি জপমালায় যেমনভাবে ১০৮ টি বীজ একত্রে মিলে একটি জপমালা নির্মিত হয়, ঠিক সেই আদলেই ১০৮ শিব মন্দির গঠিত হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্দির ছোট কুঁড়ে ঘরের আকৃতিতে এবং সমান আকারে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরের ভেতরে স্থাপিত আছেন ভগবান শিব নানা রূপে, নানা নামে।

মন্দির প্রাঙ্গনে বিশালাকার জলাশয় মন্দিরে অবস্থিত একটি বিশালাকার জলাশয় সম্পূর্ণ মন্দিরকে দুইটি অংশে বিভক্ত করেছে। চারিদিকে ছোট বড় গাছের সমারোহ এবং পবিত্রতার সমন্বয়ে সজ্জিত এই মন্দিরে প্রবেশ করলে মনে হয় এখানে সাক্ষাৎ ভগবান শিবের অগাধ বিচরণ রয়েছে। সাপ্তাহিক পূজা ছাড়াও এখানে সংক্রান্তির পূজা এবং শিবরাত্রিও মহাসাড়ম্বরে পালিত হয়।

পুরাণে শিবরাত্রিকে কেন্দ্র করে বহু গল্পগাথা উপলব্ধ আছে। কিন্তু প্রধান কাহিনি হল, সমুদ্র মন্থণের সময় বিষ পান; সেই সময় সাধারণ মানুষ থেকে ভগবানগণ সকলেই জগতের বিনাশ এর ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন। আর তাই জগৎকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এবং সাহায্যের প্রার্থনায় ছুটে যান ভগবান শিবের কাছে। ভগবান শিব সমস্ত বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। বিষ ধারণ করার ঘটনা থেকেই শিব ‘নীলকণ্ঠ’ নামেও পরিচিত হন। কিছু ভক্তদের মত অনুসারে এই ধারণাকে কেন্দ্র করেই শিবরাত্রি পালন করা হয় ।

শিবরাত্রি ব্রতে আরও একটি কাহিনি প্রচলিত আছে । একদা এক গরীব বৃদ্ধ কাঠ সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে যান, কিন্তু এতবড়ো জঙ্গল থেকে বাইরে আসার পথ হারিয়ে ফেলেন। ধীরে ধীরে সন্ধে নামে, অন্যদিকে বন্য পশুদের ভয়ে বৃদ্ধ দিশেহারা হয়ে একটি গাছে আশ্রয় নেন। দিনের বেলায় যে গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ করছিলেন সেই গাছকেই তিনি রাতের আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন। কিছুক্ষণ পর নিদ্রামগ্ন হয়ে গিয়ে তিনি গাছ থেকে পড়ে যান। অতঃপর, এই গভীর অরণ্যে নিজের প্রাণ রক্ষার তাগিদে তিনি সিদ্ধান্ত নেন তাঁকে জেগে থাকতে হবে। আর তাই তিনি স্থির করেন গাছের এক একটা পাতা ছিঁড়তে ছিঁড়তে তিনি শিবমন্ত্র জপ করবেন। একসময় তিনি উপলব্ধি করলেন যে তিনি শিব লিঙ্গের উপর অজান্তেই হাজারটি বেল পাতা দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে ভগবান শিব তুষ্ট হয়ে গরীব বৃদ্ধকে আশীর্বাদ স্বরূপ অনেক উপহার দেন। কালক্রমে, এই শিবরাত্রিতে ভক্তগণ সারারাত জেগে পূজার্চনা করেই ভগবানকে তুষ্ট করেন।

ভারতের দু'টিমাত্র ১০৮ শিব মন্দির, রয়েছে বাংলারই এক জেলায় কালনায় ও বর্ধমানে। ১০৮ শিব মন্দির কালনার ভক্তি, আবেগ ও ভালবাসার মূর্ত প্রতীক। ভারতে মাত্র দু'টি ১০৮ শিব মন্দির আছে। একটি বর্ধমানে ও একটি কালনায়। দু'টি মন্দির-ই তৈরি হয় বর্ধমানের তেজচন্দ্র মহারাজের মা বিষণকুমারীর ইচ্ছায়।১৭৮৮ সালে মা তেজচন্দ্রের মাতা বিষাণকুমারী বর্ধমানের নবাবহাটে ১০৮ শিব মন্দির নির্মাণ করান। মূলত মন্দিরটি নবকৈলাশ মন্দির নামে খ্যাত। বর্ধমানের মন্দিরটি আয়তক্ষেত্রাকার বিশিষ্ট, কিন্তু কালনার ১০৮ মন্দিরটি বৃত্তাকার। দু'টি বৃত্তের মধ্যে ১০৮টি শিবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। প্রথম বৃত্তটিতে ৭৪টি মূর্তি অধিষ্ঠান করছে। দ্বিতীয় বৃত্তটিতে ৩৪টি মূর্তি রয়েছে। প্রথম বৃত্তটির প্রতিটি মুর্তি একটি কৃষ্ণবর্ণ ও একটি শ্বেতবর্ণ, কিন্তু ভেতরের বৃত্তটিতে সব লিঙ্গগুলোই শ্বেতবর্ণ। এই মন্দিরের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষনীয়। মন্দিরের শিবলিঙ্গগুলো ঘড়ির কাঁটার মতো সাজানো এবং মন্দিরের যে কোনও স্থান থেকে একসঙ্গে পাঁচটি শিব দর্শন করা যায়। আপনি হাজার চেষ্টাতেও একসঙ্গে এর বেশি দর্শন করতে পারবেন না। ভেতরের বৃত্তের শিবগুলি অপেক্ষাকৃত ছোট।

দ্বিতীয় বৃত্তের মাঝখানে একটি বিরাট ইদারা আছে। এই ইদারাটি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য শোনা যায়। কেউ কেউ বলেন মন্দির নির্মাণ করার সময় এখানে এক বিরাট কম্পাস গর্ত করে বসিয়ে বৃত্তের সঠিক পরিমাপ করা হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন উৎসব-অনুষ্ঠানে ও পুজো-পার্বণে জলের প্রয়োজনের জন্য মহারাজ এই ইদারা তৈরি করেন। কেউ বা বলেন এটি মহাশূন্য, পরম শিবের প্রতীক, নিরাকার ব্রহ্ম।

প্রত্যেকটি শিবলিঙ্গের মন্দিরের প্রবেশদ্বারের ওপর, শিবলিঙ্গের নামকরণ লিপিবদ্ধ করা আছে। ১০৮ শিব মন্দিরের বাইরে, রাস্তা যেখানে তিনমাথা হয়েছে, সেইখানে আরও একটি শিব মন্দির আছে। এই মন্দিরের দরজার শিলালিপিতে ১০৯ সংখ্যাটি লেখা আছে। এর মধ্যে যে লিঙ্গটি রয়েছে, তা কৃষ্ণবর্ণের। এই শিবলিঙ্গটি 'জলেশ্বর' নামে খ্যাত। এই মন্দিরটির ধাঁচে আরও একটি পঞ্চরত্ন মন্দির আছে। এটি 'রত্নেশ্বর' নামে খ্যাত। সেই অনুসারে মোট ১১০টি মন্দির আছে।

অনুমান করা যায়, সেই সময় মহারাজ তেজচন্দ্র সাধক কমলাকান্তের সংস্পর্শে আসেন এবং বীজমন্ত্র গ্রহন করেন। ১০৮সংখ্যাটি একটি সিদ্ধ বীজমন্ত্রের প্রতীক। বর্ধমানের ইতিহাসবিদ যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী বলেছেন যে, বীজমন্ত্রের জপমালায় যেমন ১০৮টি রুদ্রাক্ষের সঙ্গে কয়েকটি বড় রুদ্রাক্ষ গাঁথা থাকে। শিবলিঙ্গগুলো হলো চৈতন্য ও জ্ঞানের প্রতীক। আর তাই মন্দিরের মাথায় লেখা আছে দেখা যায় শিবের এক একটি রূপের নাম। যেমন আশুতোষ, তীব্রতবা, জ্যোতি কুলধন, সোমনাথ, বদ্রী, শ্রী রুদ্র মূর্তি, বিশ্বকর্তা, উগ্র এমন নানা নাম ছোটো ছোটো মন্দিরের গায়ে দেখা যায়। যে সব নাম গুলি দেবাদিদেব মহাদেবের এক একটি নাম। সেই নামেই তিনি পরিচিত। এই মন্দিরের গঠন শৈলী খুব সুন্দর। আর এই মন্দিরের ভিতরের পরিবেশটি বেশ ভালো। যা প্রদক্ষিণ করতে করতে মনটা ভরে ওঠে এক অনির্বচনীয় আনন্দে।

 মাঝে মাঝে মন্দিরের মাঝখানে পুকুরের ধারে বসে থাকতেও ভালো লাগে বেশ। আর তাই এই নবাবহাটের পূর্ব বর্ধমানের এই ১০৮ শিব মন্দির ঘুরে বেড়িয়ে বোলপুরের পথ ধরলাম। সুয্যি মামা তখন অস্তাচলে। পথের মাঝে গুসকরার আগে খোয়াই নাম এর খাবার এর জায়গায় দাঁড়ালাম ভাত খেলাম। বেশ সুন্দর ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বেশ ভালই কাটল এই শিব মন্দির দর্শন পর্ব। 

বর্ধমানের ১০৮ শিব মন্দির দর্শন- অভিজিৎ বসু।
নয় ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...