সাত সকালেই কেনো জানিনা আমার জয়ার কথা মনে পড়ে গেলো আজ। সেই সাংবাদিক জয়া। সেই হাসি খুশি দৌড়ে বেড়ানো ছুটে বেড়ানো রিপোর্টার জয়া। সেই কবেকার চুল তার অন্ধকার বিদিশার নিশা জয়া। সেই মহুয়া খবরের জয়া। সেই কলকাতার মেট্রো ভবনে দৌড়ে দৌড়ে বাইট নিতে যাওয়া জয়া। সেই দলীয় এক পার্টির পতাকা হাতে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া জয়া। সেই কখনও হাসি মুখে রাস্তায় অন্দোলন করতে নেমে পড়া জয়া। কখনও কোলকাতায় আবার কখনও সেই দুবাইতে বা বিদেশে চলে যাওয়া ঝাঁ চকচকে এক জীবনের জয়া। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় আজ সেই জয়ার কথা।
কেন জানিনা দিন ফুরিয়ে আসছে জীবনের। যে দিন একদিন শুরু করেছিলাম কত আনন্দ উপভোগ করে হৈ চৈ হুল্লোড় করে আজ সেই দিন তো শেষের পথেই প্রায়। আর তাই বোধহয় পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার। সেই সব ফেলে আসা দিন। সেই ফেলে আসা সময়। সেই ফেলে আসা স্মৃতি। সেই ফেলে আসা ৫৫ বি মির্জা গালিব স্ট্রীট এর অফিস। সেই ফেলে আসা ইটিভির পাশের গলিতে মহুয়া বাংলার সিটি অফিস। সেই অফিসেই চাকরি করত জয়া। বোধহয় ওর সাথে দেখা হয়েছিল খবরের ফিল্ডে গিয়েই। আলাপ হয়েছিল আমার সাথে ওর। আর তারপর থেকে তো বন্ধুত্ব টিকে আছে না বললেও চেনা আছে বলা যায় আর কি।
সেই দৌড়ে ছুটে বেরিয়ে মেট্রো নিয়ে ওর খবর করা। মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক এর কাছে গিয়ে বসে থাকা বাইট এর জন্য। যে কোনোও ইনসিডেন্ট এর খবরে ঝাঁপিয়ে পড়া ওর। বেশ ভালই লাগত আমার। একজন মহিলা সংবাদিক। বেশ দাপুটে কাজ করা একজন সাংবাদিক। সেই মহুয়া বাংলা টিভির নানা বিখ্যাত সব সাংবাদিকদের মাঝে উজ্জ্বল রঙের উপস্থিতি ওর। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ রঙের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত সে।
সেই জয়াকে মনে পড়ে গেলো আজ আমার। ধীরে ধীরে উঠে গেলো সেই ইটিভির অফিস। উঠে গেলো মহুয়া বাংলার সেই সিটি অফিস। বদলে গেলো আমার জীবন। হায়দরাবাদ থেকে ফিরে এসে প্রতিদিন কাগজে যোগদান করা আমার। সেই হায়দরাবাদে এক দুপুরে কত ফোনে ওর সাথে কথা হতো একদিন আমার। সেই কত গল্প আর কত পুরোনো দিনের স্মৃতি আজ মনে পড়ে যায় আমার এই ভোরবেলায়। সেই মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে এই দূরে চলে আসার কথা শুনে কত ভরসা দিয়ে কথা বলে আমায় সাহস দিত সে লড়াই করার। ওর ছেলের দিল্লী পড়তে চলে যাওয়া। ওর বিদেশে বরের কাছে চলে যাওয়া। ওর উজ্জ্বল রঙিন জীবন দেখে বেশ ভালই লাগত আমার। যে জীবন বেশ হাই ফাই জীবন ওর।
আর তার মাঝেই ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাওয়া আমাদের দুজনের যোগাযোগ। সেই সাংবাদিক থেকে ওর নানা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া। সেই শাসক দলের বিরূদ্ধে নানা ধরনের আন্দোলনে ওর ঝাঁপিয়ে পড়া। সেই যে রাস্তায় ও ঘুরে বেরিয়ে খবর খুঁজে বেড়াতো একসময় সেই রাস্তায় গেরুয়া ঝান্ডা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ওর। মা মাটির সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। সত্যিই অসাধারণ এই বদলে যাওয়া ওর। সেই ওর ছেলের বিয়ে হয়ে যাওয়া। মা আর ছেলের সেই চিরন্তন ছবি দেখে মনটা ভরে যায় আমার। যে ছবির কোনোও তুলনাই হয়না যে।
আজ সাত সকালে কেনো জানিনা সেই হারিয়ে যাওয়া জয়ার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। ভালো থেকো তুমি। ঘর সংসার সামলে সাংবাদিক জীবন ছেড়ে এই নতুন রাজনীতির জীবন বেশ আকর্ষণীয় হোক তোমার। যে জীবনে দৌড়, আন্দোলন সব কিছুই আছে। আর তাই আজ এই টোটো চালকের এলোমেলো, এলেবেলে, বিন্দাস জীবনে আজ সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। যে জীবনটাকে আবার ফিরে পেতে ইচ্ছা হয়। যে জীবনকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে বড়ো সুখ হয়। মানুষ যে সুখে থাকতেই বড়ো ভালোবাসে। যে সুখের জড়োয়া গায়ে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকতে বড়ো ভালোবাসে এই হাত পা ওলা মানুষ। ভালো থেকো তুমি জয়া। ভুল লিখলে ক্ষমা করে দিও তুমি।
হারিয়ে যাওয়া জয়া - অভিজিৎ বসু।
তেইশ মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন