সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দীক্ষা দিবস

সাদা জীবনের কালো কথার দিন আজ নয়। আজ সাদা জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় একটা দিন আমার জীবনের। দশ মার্চ। আসলে যখন যে সময়ে এই দিনটা এসেছিল আমার বারো বছর বয়সে আমার জীবনে তখন আমার কিছুই বোঝার বয়স হয়নি বা বুঝতে পারি নি কি হলো এই দিনে আমার জীবনে কি ঘটে গেলো অজান্তে। আজ দীর্ঘ বত্রিশ বছর পরেও বুঝতে পারিনি কি হয়েছে এই দিনে। কিন্তু এটা আমি বুঝি সেই দশ মার্চ এলেই তো আমার রিষড়ার বাড়িতে সাজো সাজো রব পড়ে যেত। কত ব্যস্ততা, দৌড় ঝাঁপ করতেন মা নতুন বছর শুরু হতেই কত পরিকল্পনা হতো। কারণ একটাই আজ আমার দীক্ষার দিন। তাই দীক্ষা বার্ষিকী পালন করা হতো বড়ো সৎসঙ্গ দিয়ে ধুম ধাম করে। 


আসলে সেই ত্রিশ বছর আগের হালকা স্মৃতির ঝাঁপি উল্টে পাল্টে দেখলে বড়োই ঝাপসা লাগে আজ সেই সব আমার এত দিন পরে। শুধু এটুকু মনে আছে আজ মাস্টার মশাই মানে গোপী বল্লভ সাহা আমার ঋত্বিক ছিলেন। একটা সাদা গেঞ্জি আর সাদা তোয়ালে জড়িয়ে আসুন পেতে বসলাম ঠাকুরের সামনে তারপর আমার দীক্ষা হলো নিজের বাড়িতে। আমার দীক্ষার দুমাস আগে বাবা মা দীক্ষা নেন মাস্টার মশাই এর কাছে হরিপদ নাগদার বাড়িতে সৎ সঙ্গে গিয়ে। তার দু মাস পরে আমারও দীক্ষা হলো। নিরামিষ খাওয়া শুরু হলো। লোভকে জয় করার এই চেষ্টা বড়ো হয়ে আমার অনেক কাজে লাগলো।

আজ ও মনে আছে আমার কোন্নগরের মন্দির থেকে বাসে করে দীক্ষা গ্রহণ এর পরে সবাই মিলে দেওঘর যাওয়ার কথা। বাসের মেঝেতে খড় পেতে শুয়ে থাকা। ভোরবেলায় বাস থামার পর খোল নিয়ে বাজানোর চেষ্টা করা। তার পর দেওঘর পৌঁছে মাটিতে চাটাই পেতে শুয়ে থাকার কথা মনমোহিনী ধামের সেই বড়ো হল ঘরে। আনন্দ বাজারে লাইন দিয়ে খিচুড়ি প্রসাদ পেট পুরে খাবার কথা। আর দুর থেকে হাই পাওয়ারের চশমা পরে শ্রী শ্রী বড়দার বসে থাকা দেখা। কীর্তন শুনে তাঁর সেই ঘাড় নাড়া নাট মণ্ডপে বসে। আর তা দেখার জন্য বাবার কাঁধে উঠে দুর থেকে বড়দা কে দর্শন করা। বহু বছর পরে সন্তু দার সাথে দেওঘর চিড়িয়া খানার জন্য পাখি নিয়ে গিয়ে শ্রী শ্রী বড়দার ঘরে ঢুকে প্রনাম করা দুপুরের পর। এক অন্য অভিজ্ঞতা, অন্য অনুভূতি যার শরিক একমাত্র আমিই আর কেউ নয়। 

 এসব দেখে ছোটো কচি মনে কেমন যেনো একটা প্রভাব পড়তে শুরু করলো আমার। কেমন করে ধীরে ধীরে আমিও খোল বাজনা শিখে গেলাম নিজের অজান্তেই আঙ্গুল নেড়ে। তারপর সেই বারো বছরের আমি মাস্টার মশাই এর হাত ধরে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম সৎ সঙ্গে যেতাম। মাস্টার মশাই আমায় বলতেন ঠাকুরের কথা বল তুই। দাঁড়িয়ে পড়তাম কি বলতাম জানি না আমি সেই সময়। কিন্তু ধর্ম জগতে বিচরণ করতে শুরু করলাম আমি সেই ছোটো বয়স থেকেই। কথায় আছে কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে টাশ টাশ। 

আসলে কি জানেন আমার মনে হয় দীক্ষা, ধর্ম, নিরামিষ খাওয়া, ঠাকুরের কাছে সকালবেলা উঠে পয়সা রাখা, সৎ সঙ্গ করা, সাধু সঙ্গ করা সব কিছুই তো আমার মনে হয় একটা সু অভ্যাস যোগ। যে ভালো অভ্যাস আমার জীবনের শুরু থেকে গজিয়ে যায়। যে ভালো গুন যদি জারিত হয় ছোটো কাল থেকেই তাহলে অপগুন, বদ গুন কিছুতেই অঙ্কুরিত হবে না মাথা চারা দেবে না আমার জীবনের রাস্তায়। 

আর সেই ছোট বেলার থেকেই যদি এই সব ভালো গুনকে আত্মস্থ করা যায় তাহলে বোধ হয় খারাপ হতে, খারাপ ভাবতে, খারাপ কাজ করতে একটু হলেও বাধ বাধ লাগে। ভিতর থেকে সাড়া মেলে না কিছুতেই। এই লোকটার ক্ষতি করে দেবো। না এটা বোধ হয় উচিৎ নয়। এই উচিৎ আর অনুচিত এর একটা বোধ সৃষ্টি হয় নিজে নিজেই। আর এই বোধ গজিয়ে গেলেই ধীরে ধীরে একটা ভালো মানুষ হওয়া ওঠা যায়। যার কথা ঠাকুর সারা জীবন ধরে চেষ্টা করলেন। মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে।

জানি না আমি ভালো মানুষ, ভালো মনুষ্যত্ব বোধ গড়ে উঠেছে কি না আমার মধ্যে। শুধু এটা বলবো যে সেই ছোটো বেলার না বুঝে ঠাকুরকে ধরে বেঁচে থাকার মধ্য আর যাই হোক আমি অন্যদের মতো স্বার্থপর, আত্ম- স্বার্থী হতে পারিনি আজও। আমার মধ্য এই বোধটা হয়েছে গরীব মানুষের জন্য আকুল হয়ে ব্যাকুল হয়ে যা হোক কিছু দিয়ে সাহায্য করা দরকার সব মানুষের। একজন মানুষ অন্য জনের জন্য পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক যা বোধহয় আমি দীক্ষা না নিলে বুঝতাম না। ঠাকুর তো সারা জীবন সেই শিক্ষাই দিলেন আমাদের। নিজের সব কিছু ত্যাগ করে একটুকরো নিজের পরনের কাপড় খুলে দিলেন অন্যকে ভালো রাখতে সুখে রাখতে। এটাই তো তাঁর শিক্ষা।

 আসলে কাঁচা মনে যদি এইভাবে মাটি দিয়ে হাঁড়ি কলসী তৈরির মত একটা দাগ দিয়ে যাওয়া যায় তাহলে ছোটো কাল থেকে সেই কাঁচা মনে গভীর গোপন একটা জীবন বোধ গড়ে ওঠে। গভীর মমত্ববোধ গড়ে ওঠে। অন্যের জন্য একটা টান গড়ে ওঠে। আর যেটা গড়ে ওঠে সেটা হলো শিরদাঁড়া সোজা করে চলার মান- সিকতা। আর হাজার প্রলোভনে লোভকে সামলে চলার মানসিকতা। যা আজকাল সমাজে খুব দরকার কিন্তু সেটার অভাব বড়ো প্রকট।

 যে ভাবে হোক নিজেকে সঁপে দিয়ে বিকিয়ে যাওয়া একটু অর্থর জন্য এটা ঠিক নয় একদম। এই বোধটা গজিয়ে যাওয়া দরকার ছোটো কাল থেকেই। না আমি খারাপ কাজ করলে ঠাকুর কষ্ট পাবেন এই বোধটা আমাদের অনেক বড় কিছু শিক্ষা দেয়। আসলে এই যে জীবন বোধটা গড়ে ওঠে তাঁকে ধরলে। ছোটো ছোটো অনুশীলনের মাধ্যমে সেটাই দীক্ষা নেওয়ার আসল রহস্য। যার জন্যে বারো বছর বয়স হলে ঠাকুর দীক্ষার কথা বলেন। যাতে মনের মধ্য ছোটো বেলায় এই বোধটা গজিয়ে দেওয়া যায়।

 যাক যার জন্যে এত কথা যিনি আজকের দিনে ধুম ধাম করে সৎ সঙ্গ দিতেন আমি রাতে কাজ সেরে বাড়ি যেতাম। সেই মা আজ আর নেই। বাড়িতে সেই ভীড় অনুষ্ঠান কিছুই নেই আজ। সেই বাড়িতে আজ সকাল থেকে কোনো ব্যস্ততা নেই। এসব ভেবে আজ মন খারাপ হয়। মনে মনে ভাবি আজ মার জন্যই আমি বোধ হয় ঠাকুরকে নিয়ে চলে একটা ভালো মনের মানুষ হবার চেষ্টা করেছি মাত্র। জানিনা কতোটা সফল হয়েছি আমি। 

মনে মনে আজ ভাবি সত্যিই তো সেই দেওঘর যাওয়া দাদার আমাকে বলা তুই সাংবাদিকতা পড়। সন্তুদার কাছে শিক্ষা নেওয়া কি করে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েও নির্লোভ অনাশক্ত হয়ে বেঁচে থাকতে হয় সারা জীবন ভোর। যে জীবন তিনি কাটিয়ে গেলেন নিজেই।

এটাই বোধ হয় ধীরে ধীরে আমার মধ্যে একটা নতুন শিক্ষা দিলো শুধু এই দীক্ষা নিয়ে। যার জন্য জীবনের এত দিন পর মার কথা বড়ো বেশি করে মনে পড়ছে আজ। মার নিষ্ঠা, বিশ্বাস, অন্ধ ভক্তি আর ভালবাসার মত একটু ভালোবাসা যদি আমার জীবনে হতো তাহলে হয়তো আরো ভালো মানুষ হতে পারতাম আমি।


শুধু এটাই মনে পড়ছে আজ দশ তারিখ কিন্তু আমার মা নেই। আজ সৎসঙ্গ নেই আমার সেই রিষড়ার টালির বাড়িতে। যে বাড়িতে ঠাকুরের মানুষটাই নেই আজ। যার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যে মা আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ সারা জীবন ধরেই।কারণ সেদিন তুমি আমায় জোর করে দীক্ষা দিয়েছিলে বলেই হয়তো ভালো মানুষ হবার চেষ্টা করেছি আমি সব সময়। ঠাকুরকে নিয়ে বিপদে আপদে চলার চেষ্টা করেছি মাথা উচুঁ করে।

 জীবনে অন্যায় এর সাথে আপোষ করতে শিখিনি আমি কোনো দিন। হাজার দুঃখ, কষ্ট, অপমান, যন্ত্রণাকে সহ্য করেও হাসি মুখে চলার শক্তি পেয়েছি তোমার জন্য। ঠাকুরের কথায় নিজের দুঃখে হাসো। আর পরের দুঃখে কাঁদো। সেই শিক্ষা যা তিনি দিয়েছিলেন তাঁর জীবন দর্শনে। যা তুমি সারা জীবন করে গেলে হাদি মুখে। আজ সেই কথা মেনে চলার চেষ্টা করছি মাত্র আমি। 


দশ তারিখ আসবে যাবে, তুমি আর ফিরবে না কোনো দিন জানি। শঙ্খ বাজবে না আর আমার সেই টালির ঘরে। তুমি লাল পাড় শাড়ি পরে অপেক্ষা করবে না।ভীড় হবে না আর বাড়িতে। ঠাকুরের প্রাথর্না হবে না। সেই গান, কীর্তনে মুখরিত হবে না আর কোনো দিন আমার টালির ছোটো ঘর। আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া দশ মার্চ, আমার মনের মণিকোঠায় অমলিন হয়ে বেঁচে থাকবে সারাটা জীবন। শুধু এটাই মনে থাকবে ভাগ্যিস ঠাকুরকে গ্রহণের এই দিনটা এসেছিল আমার জীবনে। 

দীক্ষা দিবস - অভিজিৎ বসু।
দশ মার্চ, দূহাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...