'এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি
অন্যায় হবে না – নাও ছুটি
বিদেশেই চলো
যে কথা বলোনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।'.....
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
এই কবিতার লাইন লিখে পোস্ট করেছিল ও একদিন। সেই কতদিন আগের সেই পোস্ট ফিরে এলো হঠাৎ করেই আজ ফেসবুকের দেওয়ালে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছে যেনো কারুর জন্য। ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল সেই পোদ্দার কোর্টের ২৪ ঘণ্টার অফিসে। ইন্টার্নশিপ করতে এলো ও একঝাঁক উজ্জ্বল ছেলেমেয়ের সাথে।
সেই ওর মিষ্টি হাসি। মিষ্টি ব্যবহার। সুন্দর ঝাঁ চকচকে একটা মিডিয়ার জীবন তৈরি করতে আসা ওর। সেই ২৪ ঘণ্টার বাংলার সেই আমলে বিখ্যাত দু নম্বর চ্যানেলে কাজ শিখে সার্টিফিকেট নিয়ে কাজের দরজা খুলে রাখা। আর জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। আর তার জন্য বিনা বেতনে কাজ শিখতে আসা এই নানা বাংলা মিডিয়ায় ইন্টার্নদের। আর কাজের সুত্রে যোগাযোগ হয়ে যাওয়া সেই হাউসের নানা সাংবাদিক এর সাথে।
কেমন একটা স্বপ্নের জগতে বিচরণ করা যেনো। হাত বাড়ালে সেই মিডিয়ার জগতে ঝাঁপ দেওয়া। আর তার জন্য যাবতীয় কষ্টকে উপেক্ষা করা। সেই সকাল আটটার শিফটে অফিস আসা হোক। সেই দুপুরের শিফটে এসে রাত নটার পর বাড়ি ফেরা হোক। অফিস এর সিনিয়র সাংবাদিক এর ক্যামেরার ব্যাগ বা স্ট্র্যান্ড বওয়া হোক। হাসিমুখে সবটাই করতে প্রস্তুত এই ভবিষ্যতের সাংবাদিকরা। যা তারা মুখ বুজেই করে যায়। ছবি কাটা, ভিডিও এডিটর এর কাজ করা। ভোটের সময় সমীক্ষার কাজ করা। স্পটে পৌঁছে নানা অভিজ্ঞতা (ভালো খারাপ দুই) সঞ্চয় করা। সবটাই এই ইন্টার্নশিপের আওতায় পড়ে।
আজ সেই এক সময়ের ২৪ ঘন্টার ইন্টার্ন রোশনীর কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় সেই আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ইন্টার্ন রোশনীর গল্প। যদিও আমার ঝুলিতে কিছুই তেমন নেই। তবু ওর সেই পোদ্দার কোর্টে পিসিআর এর ডিউটি করা। যে কোনো কাজকে হাসিমুখে সামলে দেওয়া। আর এন্টারটেনমেন্ট এর জগতে ওর ইন্টারেস্ট ছিল বরাবর। সেই ওর ২৪ এর ইন্টার্নশিপ শেষ হলে অন্য চ্যানেলে কাজে যোগ দেওয়া। সেই নিউজ ১৮ তে কাজ করা। সেই এবিপি আনন্দ গোষ্টিতে ওর কাজ করা দেখে বেশ ভালো লাগতো আমার।
সেই একদিন সেক্টর ফাইভের রাস্তায় দুপুরে দেখা হলো ওর সাথে ওয়েবেল মোড়ের কাছে। সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিনতে পেরে অভিজিৎ দা কী খবর বলে চিনতে পারা দেখে ভালো লাগে আমার। কতোজন যে দেখেও আর চিনতে পারে না আমায় আজকাল। সেই ওর হাসি মাখা মুখে বাড়ির কুশল জানতে চাওয়া। সেই রাজ এর সাথে প্রেম আর বিয়ে বেশ ভালো একটা জুটি ওদের।
কেমন নিজে নিজেই এখন ওর নানা ইন্টারভিউ দেখে মনে হয় ভালই কাজ করছে রোশনী একা একাই নিজের মতো করে। নানা জনের ইন্টারভিউ নিচ্ছে ও। আজ বহুদিন পর ওর একটা ইন্টারভিউ দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেলো ওর কথা। সেই পোদ্দার কোর্টের কথা। সেই মিডিয়া সিটির কথা। সেই নানা ঘটনার কথা। সেই পূজোর সময় কাজের ব্যস্ততার কথা। বেশ ভালই ছিল কিন্তু সেই দিনগুলো। সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি আজও আমায় তাড়িয়ে ফেরে।
আজ সেই বাংলার দু নম্বর চ্যানেল কেমন অনেকটাই পিছনের সারিতে চলে গেছে। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে এখন অন্য বাংলা মিডিয়ার চ্যানেল এর অফিস বসেছে। সেই ইন্টার্নশিপ এর যুগ এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গেছে এই বাংলা মিডিয়ায়। তবু সেই রোশনী, শালিনী, ইন্দ্রানী, রম্যাণি, টুনু আর মুনু, সেই পুরুলিয়ার তাপসী, সেই ক্যামেলিয়া কেমিস্ট্রি,সেই অয়ন্তিকা, সেই মহুয়া, আরও কতজন যে ছিল সেই সময়। সেই রাজীব, কৌস্তুভ, সন্তু, অরূপ, রোহন এমন কতজন যে সাংবাদিক হবার স্বপ্ন বুকে আঁকড়ে এলো এই মিডিয়ায় জেলা থেকে গ্রাম থেকে শহরে।
কেউ হারিয়ে গেলো কেউ আবার ভেসে রইলো নিজের কর্মকৃতিত্বে। কেউ আবার হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবে গেলো এই লাইন ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিলো আফশোষ করতে করতে। সত্যিই অসাধারণ এই বাংলা মিডিয়ার জলস্রোত। যে স্রোতে আজ উজ্জ্বল হয়ে ভেসে আছে রোশনী। ভালো থেকো তুমি। বহুদিন তোমার সাথে আর কথা হয়নি। আড্ডা দেওয়া হয়নি। আর সেই কবিতা আবৃত্তি শোনা হয়নি তোমার মুখে। সেই কালাম এর দোকানে চা খেতে যাওয়া হয়নি। কি বলো সেই ফেলে আসা দিনগুলো বেশ ভালই ছিল কি বলো।
সেই ২৪ ঘন্টার ইন্টার্ন রোশনী - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ মার্চ দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন