সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিঙ্গুরের নির্মল আর নেই

আজ ঘুম থেকে উঠেই এই খারাপ খবরটা পেলাম আমি। মোবাইলের পর্দায় ভেসে উঠেছে রানার লেখা মেসেজ। সাদা কালো অক্ষরে ফুটে উঠেছে, নির্মল আর নেই আমাদের মধ্যে। সিঙ্গুরের সেই হাসিমুখের নির্মল পাত্র। সেই দেবেশ আর নির্মলের জুটি অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছিলো একদিন অনেকদিন আগেই এই হুগলী জেলায়। আজ সেই নির্মল ও চলে গেলো দেবেশের কাছে হাসতে হাসতে। সেই রানা আর নির্মলের জুটিও ভেঙে গেলো আজ কেমন করে যেনো। আর যে জুটি ভাঙার খবর দিলো রানা নিজেই মাঝ রাতে আমায় মেসেজ করে।

 সেই নির্মলকে নিয়ে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় একটা লেখা পড়ে একদিন নির্মল ফোনে বললো আমায়, দাদা তুমি কোথায় গো অভিজিৎ দা এখন। আমি তখন উত্তরপাড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। বললাম তোকে একটু পরে ফোন করছি আমি। সেই ফোন আর করা হলো না আমার কোনওদিন।কিছুদিন আগেই খবর পেলাম অসুস্থ হলো নির্মল। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলো। রানাকে বললাম একটু খবর নিও তুমি কেমন আছে ও। একদিন শুভ্রনীল জানতে চাইলো কেমন আছে রে নির্মল জানিস কিছু। আজ ভোরবেলায় খবর এলো নির্মল আর নেই আমাদের মধ্যে। 


জীবনকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে। খবরের দুনিয়াকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে। নির্মল চলে গেল দূরে অনেক দূরে। আমাদের সবাইকে ছেড়ে দিয়ে হাত নেড়ে হাসি মুখে আলবিদা জানিয়ে। আর কোনদিন ওকে খবরটা দে বলে ফোন করা যাবে না। আর কোনোদিন ওকে বলা যাবে না কিরে কালী পূজো আসছে বাজি আনতে যাবো তোদের গ্রামে। আর কোনোদিন রানা আর নির্মলকে সিঙ্গুরে একসাথে মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরতে দেখা যাবে না আর। সিঙ্গুর থানায় কোনোও ছবির জন্য আর সবার সাথে ক্যামেরা নিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়াবে না আর ও।

আর কোনো দিন ওকে বলতে পারবো না আমি ফোন করে কিরে খবরটা মিস করলি তুই রানা করে দিলো। ও হেসে বলতো দাদা একটু দেরি হয়ে গেছে গো। একটু কিছু মনে করো না তুমি। ম্যানেজ করে নাও না এইবার এর মতো। আর কোনোদিন সেই মাঠে আলু উঠলেই ও বলবে না দাদা ভালো চন্দ্রমুখী আলু নিয়ে আসবো আমি তোমার বাড়ী শ্রীরামপুরে। একটু কম কাজ করা, একটু কম দৌড় করা, বড্ড ভালো মনের মানুষটি আজ চলে গেলো হাসি মুখে আমাদের সবাইকে ছেড়ে দিয়ে দূরে অনেক দূরে। কেমন যেনো সবাইকে হারিয়ে দিয়ে।

আসলে জীবন থাকলে কত হিসেব আর তার নিকেশ। আর কত সম্পর্কের জটিলতায় তাকে নিয়ে কাটা আর ছেঁড়া করা এই ফোঁড় থেকে ওই ফোঁড় করা। আর জীবন না থাকলে কেমন যেনো বোবা আর নিথর হয়ে কেমন বোবা হয়ে বিবশ হয়ে যাওয়া সেই দৌড় এর একটা গোটা জীবনকে হারিয়ে ফেলে। জীবন আর মরণ। এই দুই এর মাঝে কিছু স্মৃতি ঝলমল দিন। কিছু উজ্জ্বল আর অনুজ্জ্বল কিছু ছবি। কিছু গভীর গোপন ভালোবাসার কথা। কিছু ভালো আর মন্দ এই দুই এর নানা মিশেল। 


সব কিছুর মাঝেই যে জীবন বড়ো মায়ার। জীবন বড়ো আপনার। আর জীবন বড়ো ভালোবাসার। নির্মল এর চলে যাওয়ার খবর পেয়ে কেনো জানিনা সাত সকলেই আমার কেমন চোখে জল চলে এল আজ। হাত সরছে না আর আমার কিছুই লিখতে পারছি না আজ কেনো জানিনা। খালি বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে সেই ফোনটা আর কেনো যে করলাম না আমি নির্মলকে। আর কোনোদিন যে ওর সাথে কথা বলা হবে না আর আমার। ভালো থাকিস ভাই তুই নির্মল। জীবনকে ছেড়ে আমাদের সবাইকে ছেড়ে তুই চলে গেলি হাসিমুখে। ভালো থাকিস ভাই তুই। আর পারলে ফোন না করার জন্য দূর থেকে আমায় পারলে হাসি মুখে ক্ষমা করে দিস ভাই। 

সিঙ্গুরের নির্মল আর নেই - অভিজিৎ বসু।
দোসরা এপ্রিল, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...